জাতীয় শিক্ষা নীতির খসড়া প্রস্তাব পেশ

সম্প্রতি কস্তুরিরঙ্গন কমিটি দিল্লিতে নতুন মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী রমেশ পােখরিয়াল এবং দফতরের প্রতিমন্ত্রী সঞ্জয় শামরাও ধােত্রের হাতে জাতীয় শিক্ষা নীতির খসড়া দলিল দাখিল করেছে।

Written by SNS New Delhi | June 2, 2019 5:06 pm

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র (Photo: Kuntal Chakrabarty/IANS)

সম্প্রতি কস্তুরিরঙ্গন কমিটি দিল্লিতে নতুন মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী রমেশ পােখরিয়াল এবং দফতরের প্রতিমন্ত্রী সঞ্জয় শামরাও ধােত্রের হাতে জাতীয় শিক্ষা নীতির খসড়া দলিল দাখিল করেছে। জাতীয় শিক্ষা নীতি খসড়া প্রস্তুতকারী কমিটির চেয়ারম্যান ড. কস্তুরিরঙ্গন উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব আর সুব্রমনিয়াম এবং স্কুল এডুকেশন অ্যান্ড লিটারেসি বিভাগের সচিব রীনা রায় ও অন্যান্য উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের উপস্থিতিতে খসড়া প্রস্তাব পেশ করেন।

জাতীয় শিক্ষা নীতির লক্ষ্য :

  • শিক্ষার্থীদের প্রয়ােজনীয় দক্ষতা ও জ্ঞান আহরণে সহায়তা
  • বিজ্ঞান , প্রযুক্তি , শিক্ষকতা এবং শিল্পে দক্ষব্যক্তির অভাব দূর করা
  • খসড়া জাতীয় শিক্ষা নীতি – ২০১৯ সহজগম্যতা, সমতা, নির্দিষ্ট মান, সাধ্যযােগ্য এবং অঙ্গীকারবদ্ধতার মতাে মৌলিক বিষয়গুলির ওপর ভিত্তি করে রচিত হয়েছে।

প্রস্তুতিপর্ব :

মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে সকলস্তরের যেমন সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে বিভিন্ন অংশীদার, বিভিন্ন বিষয়ভুক্ত মানুষের মতামতের ভিত্তিতে এবং তাদের সক্রিয় সহযােগিতাকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনার নির্দেশ দেয়। সংশ্লিষ্ট খসড়া জাতীয় শিক্ষা নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে বিভিন্ন পর্যায়ের অনলাইন মাধ্যমে তত্ত্বে ও প্রয়ােগে দভজ্ঞ ব্যক্তি এবং গ্রাম, ব্লক, স্থানীয় নগর স্বায়ত্ব শাসন পরিষদ, জেলা, রাজ্য, জোন এবং জাতীয় স্তরে নাগরিকদের কাছ থেকে মতামত গ্রহণের ব্যাপক ব্যবস্থা করা হয়।

সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে যুক্তব্যক্তিদের ব্যক্তিগত এবং বিষয়ভিত্তিক মতামত গ্রহণেরও ব্যবস্থা করা হয়।

এছাড়াও, সংশ্লিষ্ট জাতীয় শিক্ষা নীতি নিয়ে প্রাক্তন প্রয়াত ক্যাবিনেট সচিব টিএসআর সুব্রমনিয়াম এর পৌরােহিত্যে ‘কমিটি ফর ইভলিউশন অব দ্য নিউ এডুকেশন পলিসি’ নামে কমিটি গঠিত হয়েছিল। কমিটি চত্মৰছ সালের মে মাসে তার রিপাের্ট পেশ করে। সংশ্লিষ্ট রিপাের্টের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রক ‘খসড়া জাতীয় শিক্ষা নীতি ২০১৬ তে আরও কয়েকটি বিষয় সংযুক্ত করার নির্দেশ দেয়।

পরিবর্তন :

  • কমিটি এমএইচআরডি মন্ত্রকের নাম পরিবর্তন করে শিক্ষামন্ত্রক (এমওই) রাখার প্রস্তাব করে।
  • বিদ্যালয় শিক্ষার প্রধান অঙ্গ হিসেবে শিশুর যত্ন ও শিক্ষা (ইসিসিই) বিষয়ে সংশ্লিষ্ট পঠনপাঠনের আদর্শ পরিকাঠামােগত ব্যাপক পরিবর্তন সংযােজনের প্রস্তাব।
  • কমিটি ৩ থেকে ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত শিশু-কিশােরের শিক্ষার সুযােগ করে দেওয়ার শিক্ষার অধিকার আইন ২০০৯ এর আরও ব্যাপক করার প্রস্তাব করে। একটি ৫-৩-৩-৪ পাঠক্রম এবং পাঠক্রম পরিকাঠামাে যা শিশুর যুক্তিগ্রাহ্য এবং সামাজভিক্তিক মানসিক গঠনকে সঠিকভাবে উন্নয়নের সহায়ক ব্যবস্থা কায়েমের প্রস্তাব এবং শিক্ষার ভিত্তি হিসেবে (৩-৮ বছর) ৩ বছরের প্রাক প্রাথমিক এবং গ্রেড ১-২, প্রস্তুতিপর্ব (৮-১১ বছর): গ্রেড ৩-৫, মধ্যস্তর (১১-১৪ বছর): গ্রেড ৬-৮, এবং মাধ্যমিক স্তর (১৪-১৮ বছর): গ্রেড ৯-১২ প্রস্তাব করা হয়। বিদ্যালয়গুলির পুনর্গঠনের মাধ্যমে তা সর্বসুবিধাযুক্ত বিদ্যালয় কমপ্লেক্সে পরিণত করতে হবে।
  • বিদ্যালয় পাঠক্রমে বিষয়ের আধিক্য হ্রাসের প্রস্তাব।
  • শিক্ষাক্রমের মধ্যে পাঠক্রম, সহপাঠক্রম বা অতিরিক্ত বিষয় শিক্ষার ক্ষেত্রে কোনও পার্থক্য রাখা চলবে না, সকল বিষয় কলা, সঙ্গীত, হস্তশিল্প, ক্রীড়া, যােগ, গােষ্ঠী সেবা ইত্যাদি সবই পাঠক্রমের অন্তর্ভুক্ত হবে।
  • শিশুর স্বাভাবিক কোনও বিষয় অধিগত করার ক্ষেত্রে এবং জীবনযাপনের ক্ষেত্রে ২১ শতকের দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করা।
  • কমিটি শিক্ষক শিক্ষণ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনের প্রস্তাবে নিম্নমানের শিক্ষক শিক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলির অবলুপ্তি এবং বিভিন্ন বিষয়ভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয়য়মহাবিদ্যালয় স্থাপনের মাধ্যমে শিক্ষক শিক্ষণ বিষয় অন্তর্ভুক্ত করার কথা উল্লেখ করেছে।
  • শিক্ষকতার ক্ষেত্রে ৪ বছরের নিবিড় স্তরনির্দিষ্ট বি এড শিক্ষা ন্যূনতম যােগ্যতা হিসেবে গণ্য হবে।
  • উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে তিন ধরনের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের প্রস্তাব রূপায়ণে উচ্চশিক্ষা ও উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির পুনর্গঠনের উল্লেখ। 
  • ধরন ১ : আন্তর্জাতিকস্তরের গবেষণা এবং উচ্চপর্যায়ের শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব।
  • ধরন ২ : গবেষণার ক্ষেত্রে সহায়ক বিভিন্ন বিষয়ে উচ্চপর্যায়ের শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব আরােপ।
  • ধরন ৩ : স্নাতকস্তরে উচ্চপর্যায়ের প্রশিক্ষণের প্রতি গুরুত্ব প্রদান । এর লক্ষ্য হবে মিশন নালন্দা এবং মিশন তক্ষশিলা।
  • তিন বা চার বছরের স্নাতক শিক্ষাক্রমে (অর্থাৎ বিএসসি, বিএ, বিকম, বিভক) ইত্যাদির পুনর্গঠন করা হবে।
  • রাষ্ট্রীয় শিক্ষা আয়ােগ নামে এক নতুন সহায়ক সংস্থা কেন্দ্র এবং রাজ্যের মধ্যে সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে যেকোনও শিক্ষা বিষয়ক নীতি নিবিড়পদ্ধতিতে রূপায়ণের লক্ষে কাজ করার জন্য স্থাপনের প্রস্তাব।
  • উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে গবেষণা সংস্কৃতির প্রচলন এবং গবেষণায় দক্ষতার সঠিক স্ফুরণের জন্য জাতীয় রিসার্চ ফাউন্ডেশন নামে একটি সহায়ক সংস্থা স্থাপনের প্রস্তাব।
  • নির্দিষ্ট মান নির্ণয়, আর্থিক সহায়তা প্রদান, স্বীকৃতি প্রদান এবং নিয়ন্ত্রণের মতাে চারটি প্রধান কাজ পৃথকভাবে একটি স্বশাসিত সংস্থার দ্বারা : ন্যাশনাল হায়ার এডুকেশন রেগুলেটরি অথরিটিকে পেশাদারি শিক্ষা সহ সকল উচ্চশিক্ষা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে একমাত্র নিয়ামক সংস্থা হিসেবে গণ্য কারর প্রস্তাব।
  • এনএএসি’র পুনর্গঠনের মাধ্যমে স্বীকৃতির ইকো পদ্ধতির সৃষ্টি।
  • প্রত্যেকটি পেশাদার শিক্ষা এবং ইউজিসি’র পেশাদার নির্দিষ্ট সংস্থাগুলি উচ্চশিক্ষা গ্র্যান্ড কমিশনের (এইচইজিসি) তে পরিবর্তন করার প্রস্তবা।
  • সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিকে অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে সমমান প্রদান করা হবে।
  • উচ্চশিক্ষাকে আন্তর্জাতিক স্তরে উন্নীত করা, ওপেন এবং দূর নিয়ন্ত্রিত শিক্ষার মান উন্নত করা, শিক্ষার সকল স্তরে, বয়স্ক শিক্ষা এবং জীবনের যেকোনও সময়ে। শিক্ষার সুযােগের ক্ষেত্রে প্রযুক্তির নিবিড় প্রয়ােগ এবং শিক্ষায় পিছিয়ে পড়া গােষ্ঠীর অংশীদারিত্ব বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণ এবং শিক্ষার ক্ষেত্রে সার্বিকভাবে লিঙ্গ, সামাজিক বিভেদ এবং আঞ্চলিকতাবাদের বিলােপে সক্রিয়ভাবে কার্যকরী করার ওপর গুরুত্ব আরােপের প্রস্তাব।
  • ভারতীয় ঐতিহ্যবাহী ভাষাগুলির উন্নয়নে যেমন পালি, পার্শি এবং প্রাকৃত ভাষার জন্য তিনটি নতুন জাতীয় প্রতিষ্ঠান স্থাপনের প্রস্তাব।
  • ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ট্রানস্লেশন অ্যান্ড ইন্টারপ্রিটেশন (আইআইটিআই) স্থাপনের প্রস্তাব।