১২ জুন লন্ডনের গ্যাটউইক যাওয়ার পথে আহমেদাবাদের মেঘানিনগরে লোকালয়ে ভেঙে পড়েছিল এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বিমান। সেই ঘটনায় প্রাণ হারান ২৭০ জনেরও বেশি মানুষ। দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমানের ব্ল্যাক বক্স থেকে যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করেছে বিমান দুর্ঘটনা তদন্তকারী সংস্থা (এএআইবি)। বৃহস্পতিবার এমনটাই জানাল কেন্দ্রীয় সরকার। সম্পতি খবর ছড়িয়েছিল, এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানটির ব্ল্যাক বক্স বিদেশে পাঠানো হয়েছে। যদিও সেই খবর ভুয়ো বলে জানায় কেন্দ্র। কেন্দ্রীয় অসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রী জানান, এয়ার ইন্ডিয়া বিমানের ব্ল্যাক বক্স বিদেশে পাঠানো হয়নি। দেশেই পরীক্ষানিরীক্ষা চলছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আহমেদাবাদ বিমান দুর্ঘটনার রহস্য লুকিয়ে রয়েছে লন্ডনগামী এয়ার ইন্ডিয়ার ড্রিমলাইনার এআই-১৭১-এর ‘ব্ল্যাক বক্স’-এ। সেই ব্ল্যাক বক্স থেকে যাবতীয় তথ্য সংগ্রহের কাজ শেষ হয়েছে। প্রসঙ্গত, বিমানের ব্ল্যাক বক্সের দু’টি অংশ থাকে। ককপিট ভয়েস রেকর্ডার (সিভিআর) এবং ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার (এফডিআর)। এগুলি থেকেই মেলে উড়ানের যাবতীয় তথ্য।
Advertisement
বৃহস্পতিবার একটি বিবৃতি দিয়ে কেন্দ্রীয় অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রক জানিয়েছে, ১৩ জুন বিমানের ককপিট ভয়েস রেকর্ডার (সিভিআর) উদ্ধার করা হয়েছে। সিভিআরের তথ্য যে কোনও উড়ানের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই সিভিআরের তথ্য বিশ্লেষণ করে জানা যায়, উড়ানের সময় ককপিটে পাইলটদের মধ্যে কী কথোপকথন চলেছিল, এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোল (এটিসি)-র সঙ্গে কী কথা হয়েছিল, কর্মীরা বা যাত্রীরা কী কথা বলেছিলেন।
Advertisement
১৬ জুন ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার হয় ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার (এফডিআর)। কোন পথে, কত উচ্চতায় উড়েছিল বিমান, কত গতি ছিল, ইঞ্জিনের অবস্থা কী ছিল, তা এফডিআরের তথ্য বিশ্লেষণ করে জানা যায়। ফলে কোনও দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করতে হলে ককপিট ভয়েস রেকর্ডার (সিভিআর)-এর পাশাপাশি ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার (এফডিআর)-ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২৪ জুন বায়ুসেনার বিমানে কড়া নিরাপত্তায় ব্ল্যাক বক্স দু’টি আহমেদাবাদ থেকে দিল্লিতে আনা হয়েছে। ওই দিনই দুপুর ২টো নাগাদ দিল্লিতে এএআইবির দপ্তরে প্রথম ব্ল্যাক বক্সটি (সামনের) নিয়ে যান তদন্তকারী সংস্থার ডিজি। বিকেল পাঁচটা নাগাদ এএআইবির দপ্তরে পৌঁছোয় দ্বিতীয় ব্ল্যাক বক্স (পিছনের)। মঙ্গলবার রাত থেকে ডিজির আনা ব্ল্যাক বক্স থেকে তথ্য উদ্ধারের কাজ শুরু করেছে এএআইবির প্রযুক্তিবিদের দল।
কেন্দ্রীয় অসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রকের তরফে বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, বিমানের সামনের ব্ল্যাক বক্সের ক্র্যাশ প্রোটেকশন মডিউল (সিপিএম) উদ্ধার করা হয়েছে। বুধবার মেমোরি মডিউল উদ্ধার করা হয়েছে ব্ল্যাক বক্স থেকে। সেই তথ্য এএআইবি গবেষণাগারে ডাউনলোড করা হয়েছে। সিভিআর এবং এফডিআরের তথ্য এখন পরীক্ষানিরীক্ষা চলছে। মনে করা হচ্ছে, সেই পরীক্ষা শেষ হলে জানা যাবে দুর্ঘটনার কারণ, যার জন্য অপেক্ষা করছে গোটা দেশ।
প্রসঙ্গত, ১২ জুন এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান ‘এআই১৭১’ আহমেদাবাদ বিমানবন্দর থেকে লন্ডনের গ্যাটউইকের উদ্দেশে রওনা দেওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই ভেঙে পড়ে। বিমানটিতে মোট ২৪২ জন ছিলেন। একজন বাদ দিয়ে সকলেরই মৃত্যু হয়। ২০১১ সাল থেকে যাত্রা শুরুর পর এ যাবৎ এই ড্রিমলাইনার বিমানটি কোথাও দুর্ঘটনার কবলে পড়েনি। কীভাবে এমন অভিশপ্ত ঘটনাটি ঘটল, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
Advertisement



