প্রায় ৩ বছর ধরে রাজ্যে বন্ধ হয়ে থাকা ১০০ দিনের কাজ ১ আগস্ট থেকে শুরু করতে বলেছিল কলকাতা হাইকোর্ট। উচ্চ আদালতের এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে এবার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। চলতি সপ্তাহেই এই মামলাটির শুনানির সম্ভাবনা রয়েছে।
১০০ দিনের কাজের জন্য দেওয়া টাকা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে, এই অভিযোগে কেন্দ্র টাকা আটকে রেখেছে। তৃণমূলের অভিযোগ, ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে রাজ্যে ১০০ দিনের কাজের মজুরি দেওয়া হচ্ছে না। অন্যদিকে কেন্দ্রের দাবি, রাজ্যে প্রকৃত জব কার্ড হোল্ডাররা এই প্রকল্পের সুবিধা থেকে বঞ্চিত থেকেছেন। মৃতদের নামেও টাকা তোলা হয়েছে। এমনকী, ভুয়ো বাঁধ তৈরি করেও টাকা নেওয়া হয়েছে। এই সংক্রান্ত মামলা হাইকোর্টে বিচারাধীন রয়েছে। গত জুন মাসে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম ও বিচারপতি চৈতালি চট্টোপাধ্যায় দাসের ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, দুর্নীতির অভিযোগ ২০২২ সালের আগের। সেই সব অভিযোগ নিয়ে কেন্দ্র যা খুশি পদক্ষেপ করতে পারে। কিন্তু অবিলম্বে ১০০ দিনের প্রকল্পের কাজ চালু করা হোক। এর জন্য যে কোনও শর্ত দিতে পারবে কেন্দ্র। সমগ্র প্রকল্পটি বন্ধ করে রাখা যাবে না।
Advertisement
১০০ দিনের কাজে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে তদন্ত করতে ২০২৪ সালে রাজ্যে কেন্দ্রীয় পরিদর্শক দল এসেছিল। গোটা রাজ্যে এই প্রকল্পে ৬১৩ কোটি টাকার অনিয়ম খুঁজে পেয়েছিল কেন্দ্রীয় দল। এর মধ্যে ২১০.৩৫ লক্ষ টাকা উদ্ধার করেছে রাজ্য। হুগলি, পূর্ব বর্ধমান, মালদহ এবং দার্জিলিং জেলায় এই প্রকল্পে ৫০ কোটিরও বেশি টাকার দুর্নীতি হয়েছে বলে দাবি করে কেন্দ্রের দল। এর মধ্যে প্রায় ২৪ কোটি টাকা ফেরত আনা সম্ভব হয়েছে। জুন মাসের শুনানিতে প্রধান বিচারপতি শিবজ্ঞানমের বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ ছিল, যাঁরা কাজ করতে পারছেন না বা কাজ করেও প্রাপ্য টাকা পাচ্ছেন না তাঁদের কেন ভুগতে হবে? ১০০ দিনের কাজ কেন আটকে রাখা হবে? প্রয়োজনে যে চার জেলা থেকে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে সেই জেলাগুলি বাদ রেখে বাকি অংশে কাজ চালু করার কথা হোক। ১০০ দিনের কাজ একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প, এর পুরো টাকায় দেয় কেন্দ্রীয় সরকার। জনস্বার্থে এই কাজ চালু হওয়া জরুরি।
Advertisement
এর আগে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও এই বিষয়ে পৃথকভাবে মামলা করে ১০০ দিনের কাজে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে সিবিআই তদন্তের দাবি করেছিলেন। অন্যদিকে, ১০০ দিনের টাকা আটকে রাখা নিয়ে হাইকোর্টে মামলা করেছিল পশ্চিমবঙ্গ খেতমজুর সমিতি। সেই আবেদনে সমস্ত বকেয়া মজুরি মিটিয়ে দেওয়া সহ এত দিন টাকা বন্ধ করে রাখার জন্য ০.০৫ শতাংশ হারে সুদ দেওয়ারও দাবি জানানো হয়েছিল। বাংলায় ১০০ দিনের কাজ শুরু হওয়া নিয়ে হাইকোর্টের ইতিবাচক রায়ের পর বাংলার শ্রমিক মহলে খুশির হাওয়া বয়েছিল। হাইকোর্টের সেই নির্দেশকেই চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হল কেন্দ্রীয় সরকার।
Advertisement



