সীমান্ত বরাবর অত্যাবশ্যকীয় পণ্য লেনদেনে বাধায় ক্ষুব্ধ কেন্দ্র

পশ্চিমবঙ্গ সরকার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বাণিজ্যিক লেনদেনে বাধা দেওয়ায় আন্তর্জাতিক নীতি লঙ্ঘিত হচ্ছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার।

Written by SNS New Delhi | May 7, 2020 11:00 am

প্রতীকী ছবি (Photo: iStock)

পশ্চিমবঙ্গ সরকার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বাণিজ্যিক লেনদেন’এ বাধা দেওয়ায় আন্তর্জাতিক নীতি লঙ্ঘিত হচ্ছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এটা দেশের সংবিধান বিরোধী কাজ বলেও জানানো হয়েছে। এরফলে কেন্দ্র রাজ্যের সম্পর্ক আরও তিক্ত হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞ মহলের ধারণা।

এমনিতেই কেন্দ্রের সঙ্গে পশ্চিমঙ্গ সরকারের বাকযুদ্ধ চলছে। রাজ্যপালের অতিসক্রিয়তা নিয়ে রাজ্যের সকল রাজনৈতিক দলই ক্ষুব্ধ। কিন্তু বুধবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের সচিব অজয় ভাল্লা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিব রাজীব সিনহাকে এক চিঠি দিয়ে ভারত-নেপাল, ভারত-ভুটান ও ভারত-বাংলাদেশের সীমান্ত দিয়ে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আদানপ্রদানে কেন বাধা দেওয়া হচ্ছে তা জানতে চেয়েছেন।

চিঠিতে ২৪ এপ্রিল এবিষয়ে রাজ্যকে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আদানপ্রদানে সহযোগিতা করার কেন্দ্রীয় নির্দেশ কেন মানা হচ্ছে না তাও জানতে চাওয়া হয়েছে। অবিলম্বে এব্যাপারে কি ব্যবস্থা নেওয়া হল তা জানাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার সংশ্লিষ্ট সীমান্তগুলি দিয়ে অবাধ বাণিজ্যিক লেনদেনে বিপর্যয় মোকাবিলার অঙ্গ হিসেবে কোনও বাধা না দেওয়ার নির্দেশ জারি করেছিল আগেই।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গ সরকার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত বরাবর বাণিজ্যিক লেনদেন বন্ধ রেখেছে বলে খবর পাওয়া গিয়েছে। ফলে অত্যাবশ্যক সামগ্রি বহনকারী বহু লরি সীমান্তগুলিতে আটকে রয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশের দিক থেকে ফিরে আসা লরিগুলিকে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। এতে লরির চালকরা বাংলাদেশ সীমানায় আটকে দুর্ভোগে পড়েছেন।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব তাঁর চিঠিতে স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, লকডাউনের সময় অত্যাবশ্যক পণ্য বহণকারী কোনও যান আন্তর্জাতিক কোন সীমানায় আটকে রাখা যাবে না। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ সরকার নির্দেশ না মেনে বাণিজ্যিক লেনদেন বন্ধ রাখায় আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভারতকে জবাবদিহি করতে হতে পারে। অবিলম্বে সীমান্ত বাণিজ্য লেনদেন স্বাভাবিক করার জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে এদিন আবার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কি ব্যবস্থা নেওয়া হল তা জানাতে রাজ্যের মুখ্যসচিবকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ইতিমধ্যেই রাজ্যে করোনা মোকাবিলায় রাজ্য সরকারের ব্যবস্থাপনা পর্যবেক্ষণের জন্য দু’টি দল পাঠানোয় রাজ্য সরকার ক্ষোভ প্রকাশ করেছিল। কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক দলের সঙ্গে রাজ্যসরকার কোনও সহযোগিতাই ছিল না বলেও অভিযোগ ছিল। কারণ কেন্দ্রের অভিযোগ ছিল করোনা সংক্রান্ত সংক্রমণের বিষয়ে রাজ্য সরকার প্রকৃত তথ্য দিচ্ছে না।

কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক দলের সঙ্গে রাজ্য সরকার সহযোগিতা করছে না বলে চিঠিতে উল্লেখ করায় অবস্থা আরও উত্তপ্ত হয়। বিশেষত স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে পর্যবেক্ষক দলের সদস্যদের কথা বলতে বাধা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করা হয়।

মুখ্যসচিব কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক দলকে সব রকমের সাহায্যের আশ্বাস দিলেও শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষে পর্যবেক্ষক দলকে ‘অজানা অভিযাত্রী’ বলে কটাক্ষ করে। পর্যবেক্ষক দলের রিপোর্ট পেয়েই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের পক্ষে তাদের কাজে বাধা না দেওয়ার অনুরোধ করা হয়। কিন্তু রাজ্য সরকার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের সেই নির্দেশও মানতে রাজি হয়নি।

শাসক তৃণমূলের পক্ষে অভিযোগ করা হয়, কেন্দ্র সরকার অন্য রাজ্যে কোনও পর্যবেক্ষক দল না পাঠিয়ে কেন পশ্চিমবঙ্গে পর্যবেক্ষক দল পাঠাচ্ছে।

তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন একধাপ এগিয়ে গিয়ে, কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক দলকে দেশের ‘অপদার্থতম দল’ বলে উল্লেখ করেন। তিনি দাবি করেন কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক দলের আসল উদ্দেশ্য হল ‘রাজনৈতিক ভাইরাস’ ছড়ানো। এটার জন্যই তারা নির্লজ্জভাবে কাজ করছে।

অপূর্ব চন্দ্র’র নেতৃত্বে আসা দুটি কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক দল দুই সপ্তাহের রাজ্য সফর শেষে সাংবাদিকদের জানান, রাজ্য সরকার করোনা সংক্রমণ মোকাবিলায় সম্পূর্ণ ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। এখানে পরীক্ষার হার অত্যন্ত কম এবং পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা অত্যন্ত দুর্বল। ফলে মৃত্যুর হার দেশের সর্বোচ্চ ১২.৮ শতাংশ।

করোনা সংক্রমণ মোকাবিলায় প্রথমে ২৫ মার্চ ২১ দিনের লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছিল। তা দুই দফায় বাড়িয়ে ১৭ মে পর্যন্ত করা হয়েছে।