কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের মেয়ের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরুর ছাড়পত্র দিল কেন্দ্র। বিধানসভা নির্বাচনের এক বছর আগে এই ঘটনায় যথেষ্ট চাপের মুখে কেরলের মুখ্যমন্ত্রী। কেন্দ্রীয় সরকারের কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রক টি বীণার বিরুদ্ধে তদন্তের অনুমতি দেওয়ায় এবার গভীর সমস্যার মুখে তাঁর মেয়েও। তাঁর বিরুদ্ধে গুরুতর জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগ, টি বীণা গত তিনবছর ধরে মাসিক কিস্তিতে মোট ১ কোটি ৭২ লক্ষ টাকা পেয়েছেন কোচিন মিনারেলস অ্যান্ড রুটাইল লিমিটেড নামে একটি সংস্থার কাছ থেকে। ওই সংস্থাকে মার্কেটিং, তথ্যপ্রযুক্তি এবং সফটওয়ার পরিষেবা দেওয়ার বিষয়ে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন বীণা ও তাঁর সংস্থা এক্স্যালজিক সলিউশন কোচিন মিনারেলস অ্যান্ড রুটাইল লিমিটেড। আয়কর দপ্তর জানিয়েছে, বিপুল টাকার বিনিময়ে কোনও পরিষেবাই দেননি বীণা বা তাঁর সংস্থা। বীণা বিজয়ন এবং তাঁর সংস্থা এক্সালগিককে ২.৭৩ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছিল বলে দাবি। বীণার সংস্থাকে টাকা দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিএমআরএল-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর।
এসএফআইও তদন্তকারী সংস্থার চার্জশিটে বীণা বিজয়নকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তদন্তে দেখা গেছে যে বিনিময়ে কোনও কাজ বা পরিষেবা না দেওয়া সত্ত্বেও তিনি সিএমআরএল থেকে মাসিক অর্থ পেয়েছিলেন। সব কিছু খতিয়ে দেখে তদন্তকারী সংস্থা সিদ্ধান্তে পৌঁছয় যে বীণা ও তাঁর সংস্থা প্রতারণামূলক কাজ করেছে।
টি বীণার প্রথম পরিচয় তিনি কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের কন্যা। এর পাশাপাশি কেরলের মন্ত্রী মহম্মদ রিয়াজের স্ত্রীও তিনি। গত বছর কেরলের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে তাঁকে ঘিরে দুর্নীতির খবর প্রকাশ্যে আসে। এরপরই কেরলে শোরগোল পড়ে যায়।এই অভিযোগের সত্যতা খতিয়ে দেখতে জানুয়ারিতে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল কেন্দ্রের কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রক। এর পর দেখা যায় মার্চে মামলা রুজু করে ইডি। তবে কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমতি না থাকায় এতদিন বীনার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের কয়রা যায়নি। এবার সেই অনুমতি দিয়ে দিল কেন্দ্র। ফলে চাইলেই বিজয়নের মেয়ের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে পারে কেন্দ্রীয় সংস্থা।
এই ঘটনার সমালোচনা করে কেরলের বিরোধী দলনেতা ভিডি সতীশন বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর পদে থাকার কোনও অধিকার বিজয়নের নেই। তিনি বলেন, মাসিক ভাতা মামলায় মুখ্যমন্ত্রীর কন্যা বীণা বিজয়নকে অভিযুক্ত হিসাবে এসএফআইও-র চিহ্নিত করা একটি অত্যন্ত গুরুতর বিষয়। বিরোধী দলনেতা আরও বলেন যে, এই অপরাধে কারাদণ্ড হওয়া উচিত অভিযুক্তর। এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রীর উচিত দুর্নীতির নৈতিক দায় স্বীকার করে পদত্যাগ করা।
সিপিএমের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নীরবতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন সতীশন। তিনি বলেন, ‘ যাঁরা এতদিন ধরে মুখ্যমন্ত্রীকে রক্ষা করেছেন, তাঁদের আর কী বলার আছে ? সিপিএমের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বেরও উচিত এই ধরনের গুরুতর বিষয়ে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করা।’
যদিও সিপিএমের দাবি, ইডির এই মামলা দায়ের রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ছাড়া আর কিছুই নয়। রাজনৈতিক ভাবে কেরলে জমি তৈরি করতে না পেরে কেন্দ্রীয় এজেন্সির অপব্যবহার করা হচ্ছে মুখ্যমন্ত্রীর উপর চাপ সৃষ্টির জন্য।