কাকভোরে বিজেপির মহারাষ্ট্রে কিস্তিমাত

ঘুমন্ত শহরের মানচিত্রে আগামি পাঁচ বছরের ভবিষ্যত রচনা করে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ গ্রহণ করলেন দেবেন্দ্র ফড়নবিশ। উপমুখ্যমন্ত্রী হলেন অজিত পাওয়ার।

Written by SNS Mumbai | November 24, 2019 9:49 am

মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ গ্রহণ করলেন দেবেন্দ্র ফড়নবিশ। (Photo: IANS)

ঘুমন্ত শহরের মানচিত্রে আগামি পাঁচ বছরের ভবিষ্যত রচনা করে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ গ্রহণ করলেন দেবেন্দ্র ফড়নবিশ। উপমুখ্যমন্ত্রী হলেন অজিত পাওয়ার। শিবসেনা-এনসিপি-কংগ্রেসের বৈঠকের পর গতকাল মধ্যরাতে পাশা খেলায় মােখখম চালটা খেললেন অমিত শাহ। গভীর রাতে মহারাষ্ট্র রাজনীতির নতুন একটা রাজনৈতিক সমীকরণের যাত্রা পথের সুচনা করে তাঁর বিচক্ষণতার পরিচয় দিলেন– ভাের হতে না হতেই এনসিপি বিধায়কদের সমর্থনে মহারাষ্ট্রে সরকার গঠন করলেন দেবেন্দ্র ফড়নবিশ।

ক্ষমতায় ফিরে স্বভাবতই আনন্দিত ফড়নবিশ বলেন, ‘মহারাষ্ট্রে একটা স্থায়ী সরকার গঠন করার প্রয়ােজন ছিল, এনসিপি নেতা অজিত পাওয়ার সহ ১১ জন বিধায়কদের সমর্থনে সরকার গঠন করা হল। শিবসেনা-এনসিপি কংগ্রেসের খিচুড়ি সরকার দরকার নেই’। ভারতীয় জনতা পার্টি নেতৃত্বাধীন সরকার গঠনে সহায়তা করে আপাতত সংবাদের শিরােনামে ফড়নবিশের পাশে সম গুরুত্ব পাচ্ছেন এনসিপি নেতা অজিত পাওয়ার।

বিজেপি নেতা সুশীল মােদি বলেন, মহারাষ্ট্রে সরকার গঠনে নতুন রাজনৈতিক সমীকরণ তৈরি করে অমিত শাহ ফের প্রমাণ করলেন ভারতীয় রাজনীতিতে আসল চাণক্য তিনিই। কাকভােরে ফোন মারফত খবরটা পেয়ে ভেঙে পড়েন এনসিপি নেতা শরদ পাওয়ার- তাঁর কাছে খবরটা শুধু স্বপ্নভঙ্গ নয়, সম্পর্ক ভঙ্গও বটে। অজিত পাওয়ারের বিজেপি’কে সমর্থন করার সিদ্ধান্তের ফলে পারিবারিক সম্পর্কও ভেঙে চুরমার হয়ে গেল।

সাংবাদিক সম্মেলনে উদ্ধব ঠাকরেকে পাশে নিয়ে এনসিপি নেতা শরদ পাওয়ার বলেন, ‘ফড়নশিকে সমর্থন করার সিদ্ধান্তটা ভাইপাের একান্ত ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত, দলের কোনও সিদ্ধান্ত নয়। সকাল সাতটার সময়ে রাজভবনে আয়ােজিত শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে তেমন লক্ষণীয় ভিড় চোখে পড়েনি, পড়ার কথাও নয়। দু’দলের হাতে গােনা কয়েকজন ছাড়া কাকপক্ষীতেও অমিত শাহের পাশা খেলার শেষ চালের হদিশ কেউ পায়নি। তবে সমর্থকদের একটা অংশ বলছে, চরম গােপনীয়তার মধ্যে ফড়নবিশ মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিলেন, যার সঙ্গে ২০১৬ সালের চিত্রের কোনও মিল নেই। ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে তিনি কয়েক হাজার সমর্থকের সামনে শপথ গ্রহণ করেছিলেন।

অমিত শাহ’র ঘনিষ্ট নেতা ভূপেন্দ্র যাদবকে চরম গােপনীয়তা রক্ষা করে সােজা দিল্লি থেকে মুম্বই পাঠানাে হয়। তারপর গভীর রাতের বৈঠকে দেবেন্দ্র ফড়নবিশ ও অজিত পাওয়ার একত্রে সরকার গঠনে সম্মত হওয়ার এক মিনিটের মধ্যে অমিত শাহকে ফোন করে যাদব খবরটি দেন। রাত দুটো দশ, ভূপেন্দ্র যাদব দেবেন্দ্র ফড়নবিশ ও অজিত পাওয়ার জেগে অমিত শাহও জেগে। মহারাষ্ট্র রাজ্যপালের সচিবকে রাষ্ট্রপতি শাসন প্রত্যাহার করে নেওয়ার আবেদন জমা করতে বলা হয়। ১২ নভেম্বর রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা হয়েছিল। রাষ্ট্রপতি কোবিন্দ কেন্দ্রীয় শাসন প্রত্যাহার করার ঘােষণা পত্রে ৫.৪৭ মিনিটে স্বাক্ষর করেন। বিজেপি সাড়ে ছ’টার সময় শপথ গ্রহণ করতে চাইলেও আয়ােজন করার জন্য এক ঘন্টা পিছিয়ে দেওয়া হয়।

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবি শঙ্কর প্রসাদ বলেন, ‘মহারাষ্ট্রের মানুষদের কয়েকদিন ধরে বলতে শােনা যাচ্ছিল বিজেপি’র পক্ষে যদি মানুষের সমর্থন থাকে, স্পষ্ট আদেশ থাকে সেক্ষেত্রে শিবসেনা-এনসিপি-কংগ্রেসকে জোট করতে বাধা দেওয়া হচ্ছে না। কেন মানুষের আদেশকে সম্মান জানানাে হচ্ছে না। কেন বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার গঠন করা হবে না’।

তিনি বলেন, ‘শিবসেনা-এনসিপি-কংগ্রেস ষড়যন্ত্র করে ব্যাক ডােরে সরকার গঠনের চেষ্টা করেছিল, বিজেপি তাতে বাধা দিয়েছে। শিবসেনা ও কংগ্রেসকে হতাশ করে ফড়নবিশ মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ গ্রহণ করেন। এনসিপি নেতা অজিত পাওয়ার উপ-মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নিয়েছেন। এনসিপি নেতা শরদ পাওয়ার তিনটি ভিন্ন মতাদর্শে বিশ্বাসী দলকে একত্রিত করার চেষ্টা করেছিল’।

মহারাষ্ট্রে নতুন জোট সমীকরণের নেপথ্যে ‘সুবিধাবাদী’ মনােভাব কাজ করেছে বলে গতকাল মন্তব্য করেছিলেন বিজেপি নেতা নিতিন গড়কড়ি। তিনি বলেছিলেন, ‘উদ্ধব ঠাকরের নেতৃত্বাধীন জোটের নেপথ্যে সুবিধাবাদী মনােভাবের বহিঃপ্রকাশ রয়েছে। শিবসেনা ও বিজেপি জোটের ভিত্তি ছিল হিন্দুত্ববাদ। মতাদর্শগতভাবে ভিন্ন তিনটি রাজনৈতিক দলের জোট করতে চলেছে, মহারাষ্ট্রে সরকার গঠন করতে চলেছে-দুভাগ্য’।

শিবসেনা নেতা সঞ্জয় রাউত বলেন, ‘অজিত পাওয়ার মহারাষ্ট্রের জনগণের পিঠে ছােরা মেরে বিজেপি’র সঙ্গে হাত মিলিয়েছে’। শরদ পাওয়ার টুইট করে লেখেন, ‘আমরা কোনওভাবে অজিত পাওয়ারের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করব না। এনসিপি নেত্রী সুপ্রিয়া শুলে লেখেন, ‘পাওয়ার পরিবার ও এনসিপি দলে চিড় ধরে গেল’।

মহারাষ্ট্রে ভােটের ফল প্রকাশের পরের দিন থেকে সরকার গঠনের প্রশ্নে শরিক জোট সম্মত থাকলেও মুখ্যমন্ত্রী পদের সমানাধিকারের দাবিতে শিবসেনা সরব হয়। গােড়ায় তাদের দাবির কোনও ভিত্তি নেই বলে ভারতীয় জনতা পার্টি দাবি করলেও পরে তারা জানায়, প্রাক লােকসভা ভােট অমিত শাহের সঙ্গে উদ্ধব ঠাকরের রুদ্ধদ্বার বৈঠকে ৫০-৫০ ফর্মুলা নিয়ে কথা হয়েছিল, কিন্তু কোনও সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়নি। ফলে সম্পর্কে চিড় ধরে। দিন যত এগিয়েছে সম্পর্ক তত খারাপ হয়েছে, শিবসেনা একটা সময়ে জোট ভেঙে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেয়।

দলীয় মুখপত্র সামানাতে বিজেপি’কে রাষ্ট্রপতি শাসনের আড়ালে ঘােড়া কেনাবেচার অভিযােগে শিবসেনা কাঠগড়ায় তুলেছে। শিবসেনা নডিএ জোট থেকে সরে দাড়ানাের পাশাপাশি এনডিএ বৈঠকে শিবসেনা দলের প্রতিনিধিরা গরহাজির ছিলেন।

সংসদের শীতকালীন অধিবেশনের প্রথম দিনে রাজ্যসভার ২৫০তম অধিবেশন উপলক্ষ্যে বিশেষ বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি দুটি রাজনৈতিক দলের প্রশংসা করতে চাই- এনসিপি ও বিজেডি এই দুই দলের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা সংসদীয় নিয়মকানুনকে দারুণভাবে মেনে চলেছেন, যা শিক্ষণীয়। ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি ও বিজেডি সাংসদরা কোনওদিন ওয়েলে নেমে প্রতিবাদ দেখাননি। তারা নিজেদের আসনে বসে মর্যাদা বজায় রেখে তাঁদের বক্তব্য স্পষ্ট করে জানিয়েছেন। বিজেপি সহ সবকটি রাজনৈতিক দলের এদের থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত।

প্রধানমন্ত্রী মােদি এমন সময়ে এনসিপি’র প্রশংসায় পঞ্চমুখ হলেন যখন খােদ এনসিপি নেতা শরদ পাওয়ার মহারাষ্ট্রে শিবসেনা ও কংগ্রেসকে নিয়ে সরকার গঠনের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। মহারাষ্ট্রে মুখ্যমন্ত্রী পদের সমানাধিকার নিয়ে শিবসেনা বিজেপি ঠান্ডা যুদ্ধের মধ্যে ফায়দা তুলতে আসরে নেমে পড়েছিলেন শরদ পাওয়ার। হালে পানি টানতে সােনিয়া গান্ধির সঙ্গে বৈঠকও করেন। দ্বিতীয় বার প্রাসঙ্গিকতার কেন্দ্রে এসে তিনি কংগ্রেস ও শিবসেনাকে নিয়ে অভিন্ন সাধারণ কর্মসূচীর ভিত্তিতে সরকার গঠনের লক্ষ্যে আলােচনা শুরু করেছিল।