বিলকিস বানো গণধর্ষণ কাণ্ড: দোষীদের আত্মসমর্পণের সময়সীমা বৃদ্ধির আবেদন খারিজ

Written by SNS January 19, 2024 3:38 pm

নিউ দিল্লি, ১৯ জানুয়ারি: কার্যত কোনও অজুহাতই ধোপে টিকল না বিলকিস বানো গণধর্ষণ কাণ্ডে জড়িত দোষীদের। মুক্তির নির্দেশ বাতিল হওয়ার পর ফের সুপ্রিম ধাক্কা খেল তারা। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই আত্মসমর্পণ করতে হবে তাদের। ১১ জন দোষীর মধ্যে ১০ জন সময়সীমা বৃদ্ধির আবেদন জানিয়েছিল। আদালতে ওই আবেদনে বৃদ্ধ বাবা মায়ের দেখভাল সহ একাধিক অজুহাত দেখিয়েছিল তারা। আজ তাদের সেই আবেদন খারিজ করে দিল সুপ্রিম কোর্ট। রায় দেওয়ার সময় শীর্ষ আদালত কারণ হিসেবে জানায়, ‘ ১১ জন দোষীর আত্মসমর্পনের জন্য বাড়তি সময় চাওয়ার কোন যৌক্তিকতা নেই।’  পরিবর্তে বলা হয়েছে, আগামী ২৬ জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবসের আগেই তাদের আত্মসমর্পণ করতে হবে।

এর আগে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল, ১১ জন দোষীকে আগামী ২ সপ্তাহের মধ্যে আত্মসমর্পণ করতে হবে। গত ৮ জানুয়ারি এই নির্দেশ দেয়। ২০২২ সালের স্বাধীনতা দিবসে মুক্তি পায় তারা। এবছর প্রজাতন্ত্র দিবসের আগেই ওই ১১ জন দোষীকে জেলে যেতে হবে বলে নির্দেশ দেয় দেশের শীর্ষ আদালত। এব্যাপারে বিচারপতি উজ্জ্বল ভুইঁয়া এবং বিভি নাগরত্নার বেঞ্চ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে। সেই সঙ্গে বলা হয়েছে আগের নির্ধারিত দিনের মধ্যেই দোষীদের আত্মসমর্পণ করতে হবে।

উল্লেখ্য, ২০০২ সালের মার্চ মাসে গুজরাট দাঙ্গার সময়  একদল দুষ্কৃতী বিলকিস বানোর পরিবারের উপর হামলা চালায়। ঘটনাটি ঘটে গুজরাটের দাহোদ জেলায় লিমখেড়া তালুকায় রাধিকাপুর গ্রামে। খুন করা হয় তাঁর পরিবারের ১৪ জন সদস্যকে। বিলকিস বানোকে ধর্ষণ করে হামলাকারীরা। পুলিশ ২০০৪ সালে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করে। এরপর ২০০৮ সালের ২১ জানুয়ারি মুম্বইয়ে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালত ওই ১১ জন ধর্ষণকারীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা ঘোষণা করে। দোষীরা উচ্চ আদালতে গেলেও বম্বে হাই কোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টও একই নির্দেশ দেয়। এরপর ২০২২ সালে ১৫ অগস্ট ৭৬ তম স্বাধীনতা দিবসে  বিশেষ আইনে দোষীদের মুক্তি দেয় রাজ্য সরকার। যা নিয়ে জোর বিতর্ক শুরু হয়।

গত ৮ জানুয়ারি সুপ্রিমকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ এই মামলায় গুজরাট সরকারের দোষীদের মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত খারিজ করে দেয়।  জানায়, ওই ১১ জন ধর্ষককে মুক্তির যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল গুজরাট সরকার, তা এক্তিয়ার-বহির্ভূত। বিচারপতি বিভি নাগারত্না  এবং বিচারপতি উজ্জ্বল ভুঁইয়ার বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ ছিল, জালিয়াতি করে ধর্ষকদের মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। কারণ ধর্ষকদের মুক্তি দেওয়া সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার এক্তিয়ার গুজরাট সরকারের ছিল না। একই সঙ্গে শীর্ষ আদালত নির্দেশ দেয় যে, খুন এবং ধর্ষণে দোষী সাব্যস্ত হওয়া ১১ জনকেই দু’সপ্তাহের মধ্যে জেলে আত্মসমর্পণ করতে হবে। এরপর দোষীদের মধ্যে কয়েকজন সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়ে জানান, আত্মসমর্পণ করার জন্য তাঁদের আরও কিছুটা সময় দেওয়া হোক। আদালতের তরফে মন্তব্য করা হয়, ” আবেদনকারীরা আত্মসমর্পণ ও সংশোধনাগারে রিপোর্ট করার সময় পিছিয়ে দেওয়ার যে কারণ দেখিয়েছেন , তার কোন যৌক্তিকতা নেই। তাঁদের কারণগুলি কোনওভাবেই আমাদের দেওয়া নির্দেশ পালনে বাধা সৃষ্টি  করবে না। তাই এই সব নানা আবেদন খারিজ করা হল।”

২০০২ সালে গুজরাট দাঙ্গার সময় বিলকিস বানো গণধর্ষণ এবং বানো পরিবার হত্যা মামলায় ১১ জন বন্দিকে মুক্তির সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে একাধিক জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছিল। বিচারপতি বিভি নাগারত্না এবং উজ্জ্বল ভুঁইয়ার ডিভিশন বেঞ্চ সেই মামলার রায়ে জানায়, ” গুজরাট সরকার দোষীদের মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। তাদের এই অধিকার নেই।” গত বছর অক্টোবর মাসে শুনানি শেষে রায় ঘোষণা মুলতুবি রাখে আদালত।