• facebook
  • twitter
Saturday, 6 December, 2025

বিহারে দ্বিতীয় দফায় চূড়ান্ত পর্বে ৬৮.৫২ শতাংশ ভোটদানের নতুন রেকর্ড

রাজ্যের বিভিন্ন অংশ থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, অনেক বুথেই মহিলাদের উপস্থিতি পুরুষদের তুলনায় বেশি। যুব ভোটারদের অংশগ্রহণও নজরকাড়া।

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

মঙ্গলবার শেষ হল বিহার বিধানসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় এবং চূড়ান্ত দফার ভোটগ্রহণ। নির্বাচন কমিশনের প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, এই পর্যায়ে মোট ভোট পড়েছে ৬৮.৫২ শতাংশ, যা বিহারের নির্বাচনী ইতিহাসে সর্বোচ্চ। তুলনায় ৬ নভেম্বর প্রথম দফায় ভোট হয়েছিল ৬৪.৬৬ শতাংশ। দুই দফা মিলিয়ে এ বার ভোটদানে মানুষের উৎসাহ ছিল চোখে পড়ার মতো।

এই প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্রসঙ্ঘ-স্বীকৃত পর্যবেক্ষক না থাকলেও স্থানীয় প্রশাসন জানাচ্ছে, ভোটগ্রহণ শুরুর পর থেকে সামগ্রিক পরিবেশ ছিল মোটের উপর শান্তিপূর্ণ। কিছু এলাকায় ভোটারদের লাইনে সামান্য ধাক্কাধাক্কি বা বিশৃঙ্খলার খবর মিললেও পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। বহু বুথে মহিলাদের অংশগ্রহণও উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানাচ্ছেন নির্বাচন কর্মীরা।

Advertisement

দ্বিতীয় দফায় মোট ১২২টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ করা হয়েছে। এই পর্বে লড়াইয়ে ছিলেন ১,৩০২ জন প্রার্থী। সকাল থেকেই বহু ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের দীর্ঘ লাইন ও বিপুল জনসমাগম লক্ষ্য করা যায়। প্রশাসন জানিয়েছে, এই দফায় নিরাপত্তা ও নজরদারি ব্যবস্থা যথেষ্ট কঠোর করা হয়েছিল। ফলে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া শান্তিপূর্ণভাবেই সম্পন্ন হয়েছে।

Advertisement

এদিন দিনভর ভোটগ্রহণ হয়েছে ভাগলপুর, কাটিহার, সুপৌল, মধুবনী, ঔরঙ্গাবাদ—সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ জেলায়। অধিকাংশ কেন্দ্রেই সকাল থেকে মহিলাদের ব্যাপক উপস্থিতি নজর কাড়ে। প্রবীণ ভোটাররাও আগ্রহ সহকারে ভোটদানে অংশ নিয়েছেন।

সীমান্তবর্তী জেলা, মুসলিম প্রধান অঞ্চল এবং শহর-গ্রামের মিশ্র এলাকায় দীর্ঘ লাইন লক্ষ্য করা গিয়েছে। নির্বাচন কমিশনের হিসেব অনুযায়ী, দুপুরের পর আরও ভোটার বুথে পৌঁছনোর ফলে এই হার আরও বাড়তে পারে।

রাজ্যের বিভিন্ন অংশ থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, অনেক বুথেই মহিলাদের উপস্থিতি পুরুষদের তুলনায় বেশি। যুব ভোটারদের অংশগ্রহণও নজরকাড়া। যদিও কয়েকটি সংবেদনশীল এলাকায় হালকা উত্তেজনার খবর পাওয়া গিয়েছে। তবে সামগ্রিকভাবে ভোটগ্রহণ শান্তিপূর্ণই হয়েছে বলে প্রশাসনের দাবি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, দ্বিতীয় দফার এই উচ্চ ভোটদানের হার প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলগুলির সব সম্ভাবনাকে গুলিয়ে দিতে পারে। তাদের নতুন হিসাব–নিকাশে বসতে হবে। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে ভোটদানে অংশগ্রহণ বেড়ে যাওয়ায় ফলাফল কোন দিকে যেতে পারে, তা নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে। অনেকের মতে, এই উচ্চ ভোটদানের হার সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা ও ক্ষোভ— দুই–ই প্রতিফলিত হতে পারে। প্রথম দফার তুলনায় এই দফায় ভোটদানে অংশগ্রহণ বাড়ায় রাজনৈতিক দলগুলির ভিতরে নতুনভাবে উৎসাহ তৈরি হয়েছে।

ভোট দেওয়ার পর জন সুরাজ পার্টির প্রতিষ্ঠাতা প্রশান্ত কিশোর বলেন, বিহারে মানুষ ‘পরিবর্তনের চেতনা’ নিয়েই ভোট দিচ্ছেন। তাঁর দাবি, ‘গত ৩০ থেকে ৩৫ বছর ধরে ভয় থেকে ভোট দিয়েছে মানুষ— লালুর ভয়, নীতীশের ভয়, বিজেপির ভয়। জন সুরাজ সেই বাধা ভেঙেছে। এমনকি যারা কোনও দলকে সমর্থন করতে চাইছে না, তাদের সামনে এখন সৎ বিকল্প রয়েছে।’

প্রসঙ্গত, এবারের নির্বাচন বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের জন্য, যিনি গত তিন বছরে বারবার জোট পরিবর্তন করে রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন। ২০২২ সালে বিজেপির সঙ্গে জোট ছিন্ন করে আরজেডি–কংগ্রেসের সঙ্গে যাওয়ার পর তিনি ২০২৪ সালের শুরুতে আবার এনডিএ–তে ফিরে আসেন। তাঁর এই রাজনৈতিক যাত্রাপথ নির্বাচনের অন্যতম আলোচ্য বিষয়।

এখন অপেক্ষা ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত। রাজ্যের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক সমীকরণ গড়ে দেবে সেই দিনের ফলাফলই। এ দিন ভোট গণনার দিন পরিষ্কার হয়ে যাবে, এনডিএ কি সত্যিই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতায় ফিরছে, নাকি বিহারের রাজনীতিতে শেষ মুহূর্তে কোনও বড় চমক অপেক্ষা করছে। তবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, প্রার্থীদের প্রচার, স্থানীয় ইস্যু ও এলাকাভেদে ভোটারদের আগ্রহ— সব মিলিয়ে দ্বিতীয় দফায় ভোটদানের হার এ বার গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করবে বলে মনে করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, বিহারের বাইরে এ দিন দেশে আরও আটটি বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন হয়েছে। জম্মু–কাশ্মীরের বদগাম ও নাগরোটা থেকে শুরু করে ওড়িশার নুয়াপাড়া পর্যন্ত বিভিন্ন রাজ্যে ভোট হয়েছে সমান গুরুত্বের সঙ্গে।

Advertisement