স্বাস্থ্যক্ষেত্রে বাংলা পেয়েছে অনেক কিছু: মোদি, চিত্তরঞ্জন ক্যানসার হাসপাতাল আগেই উদ্বোধন করেছি: মমতা 

আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের সুবিধা পান ক্যানসার রোগীরাও। ব্যতিক্রম নয় বাংলা ও। পাশাপাশি টিকাকরণের সংখ্যা বৃদ্ধি নিয়েও দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি।

Written by SNS Kolkata | January 8, 2022 3:33 pm

বাংলার একটি হাসপাতাল ক্যাম্পাসের উদ্বোধনের অনুষ্ঠানেও ঘটে গেল কেন্দ্র-রাজ্য তরজা। কে আগে উদ্বোধন করেছে তাই নিয়ে। সেই সঙ্গে রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ের বিরুদ্ধেও আক্রমণ শানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভার্চুয়াল উপস্থিতিতেই।

শুক্রবার ভার্চুয়াল মাধ্যমে রিমোর্টের বোতাম টিপে কলকাতার চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউটের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনুসুখ মাণ্ডব্য, কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর, নিশীথ প্রামাণিক এবং সুভাষ সরকার।

রাজ্যের তরফে সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। শুরুতেই মমতা জানিয়ে দেন এই ক্যাম্পাসের উদ্বোধন আগেই করেছে রাজ্য।

মমতার এই বক্তব্যের পরেই হাসপাতাল ক্যাম্পাসের উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক জলঘোলা শুরু হয়। সেই সঙ্গে রাজ্য রাজভবনের সংঘাতও স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

এদিনের অনুষ্ঠানের তাল কেটে গিয়েছিল প্রায় শুরু থেকেই। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান কিছুটা গড়ানোর পরেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভাষণ দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়।

সেই সময় সঞ্চালিকা মুখ্যমন্ত্রীর নাম উচ্চারণ করলেও পদবী বলতে বেমালুম ভুলে যান। এই বিষয়ে বেজায় অসন্তুষ্ট হন মমতা। তবে পরে স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতেই পরিস্থিতি সামাল দেন মুখ্যমন্ত্রী।

এরপর উদ্বোধনী মঞ্চ থেকেই রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবার চিত্র তুলে ধরে কৌশলে কেন্দ্রের অসহযোগিতার বিষয়ে ইঙ্গিত করেন মমতা তিনি বলেন, কেন্দ্রে’ নব্বই শতাংশ মেনে চলে রাজ্য। রাজনৈতিক মতভেদ থাকলেও সংক্রমণ মুখতে কেন্দ্রের লাও করা নিয়মই পালন করে।

কিন্তু রাজ্যপাল সেসব গাইডলাইন না জেনেই প্রশ্ন তোলেন। মমতা বলেন, কেন্দ্র পরামর্শ দিয়েছে বাইরে থেকে লোক নিতে। তা মেনে আমরা সে পথেও হেঁটেছি।

কিন্তু রাজ্যপাল প্রশ্ন তুলছেন, কোন প্রক্রিয়ায় নিয়োগ হল? কেন্দ্রের গাইডলাইনই জানেন না রাজাপাল। করোনাকালে প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিকিৎসকদের কোটা বড়ানোর আর্জি জানান মমতা। অফিসারের সংখ্যাও বাড়াতে বলেন।

শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রী অনুষ্ঠানে বলেন, আমি এখানে উপস্থিত থেকেছি প্রধানমন্ত্রীর জন্য। কারণ বাংলার একটি হাসপাতালের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের ভার্চুয়াল উদ্বোধন করছেন তিনি। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী আমাকে দু’বার ফোন করেছেন।

বাংলার উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী আগ্রহ দেখিয়েছেন, সেজন্য ধন্যবাদ। এরপরেই কিন্তু অনুষ্ঠানে সৌহার্দের সুর কেটে যায়। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আজ আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হলেও এই ক্যাম্পাসের উদ্বোধন রাজ্য সরকার আগেই করেছিল।

কোভিডের সময়ে যখন প্রচুর হাসপাতালের প্রয়োজন হচ্ছিল, বেড বাড়ানোর দরকার হয়েছিল, তখন এই ক্যাম্পাসকে ব্যবহার করা হয়েছিল। মমতা যখন এইসব কথা বলছেন, তখন প্রধানমন্ত্রীর মুখ ছিল থমথমে।

এই প্রশ্নের সরাসরি জবাব দেননি। তবে অনুষ্ঠান শেষ হতেই প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় ও বিজেপি নেতারা মুখ্যমন্ত্রীর কথার জবাব দিতে ছাড়েননি।

তাদের কথায়, মুখ্যমন্ত্রী যেটা উদ্বোধন করেছিলেন, সেটা ছিল স্রেফ একটা বিল্ডিং। যেখানে কোভিড সেন্টার তৈরি করা হয়েছিল। আর প্রধানমন্ত্রী যা উদ্বোধন করলেন, তা একটা ক্যান্সার হাসপাতাল।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কোভিড সেন্টার আর ক্যান্সার হাসপাতালের ফারাক বোঝেন না। একটা বিরাট ক্যাম্পাসের একটা অংশে কয়েকটা কোভিড বেড পাতা আর ক্যানসার হাসপাতালের পার্থক্যই বোঝেন না মুখ্যমন্ত্রী।

বিজেপি নেতারা এদিনের মুখ্যমন্ত্রীর বক্তৃতার ক্লিপ টুইট করে লিখেছেন, বাংলার মুখ্যমন্ত্রী যেমন কোমরবিডিটি আর মৃত্যু হারের পার্থক্য বোঝেন না, তেমনই কোভিড বেড পাতা আর ক্যানসার হাসপাতাল বানানোর মধ্যে পার্থক্যও বোঝেন না।

বিজেপি নেতারা প্রশ্ন তুলেছেন একজন মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রীয় সরকারের অনুষ্ঠানে কী বলছেন, তার কোনও হোমওয়ার্ক থাকবে না? এ কি তৃণমূলের পার্টি অফিস?

এদিন মুখ্যমন্ত্রী হিসেব দেন বাংলার স্বাস্থ্য পরিকাঠামো মজবুত করতে কী কী হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, এই হাসপাতাল গড়তে ২৫ শতাংশ টাকা দিয়েছে রাজ্য সরকার। ১১ একর জমিও দিয়েছে।

হাসপাতালের কারিং খরচও রাজ্য দেবে। মমতার বক্তব্যের পরক্ষণেই প্রধানমন্ত্রী হিসেব দেন, বাংলার জন্য তার সরকার কী কী করেছে।

মোদি বলেন, এই হাসপাতাল বংলার অনেক মানুষের সুবিধে করবে। দুঃস্থদের ক্যানসার চিকিৎসায় বড় ভূমিকা নেবে। এক হাজার কোটি টাকা খরচ করে এই অত্যাধুনিক হাসপাতাল ক্যাম্পাস তৈরি হয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রী এদিন করোনার দ্বিতীয় ডোজের টিকা না পাওয়া নিয়ে যে অভিযোগ মমতা এনেছিলেন, তা খণ্ডন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনাকালে বাংলাকে কেন্দ্র কীরকম সাহায্য করেছে।

সব মিলিয়ে হাসপাতালের উদ্বোধন নিয়ে মোদি-মমতার একরকম তাল ঠোকাঠুকিই হয়ে গেল ।

চিত্তরঞ্জন ক্যানসার হাসপাতালের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস উদ্বোধন উপলক্ষ্যে একইমঞ্চে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

কেন্দ্র-রাজ্যের উন্নয়নের খতিয়ান প্রকাশকে কোথাও যেন ছাপিয়ে গেল রাজনৈতিক চাপানউতোর। শুক্রবারের মঞ্চ থেকে কেন্দ্রের কাছে অতিরিক্ত টিকা চাওয়া থেকে ভোরির আসন সংখ্যা বৃদ্ধির মতো একাধিক দাবি জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

বাংলার জন্য কল্পতরু কেন্দ্র’, তথ্য দিয়ে পালটা তা প্রমাণ করার চেষ্টা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও। প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বাংলাকে ইতিমধ্যে বিনামূল্যে প্রায় ১১ কোটি করোনা টিকা দিয়েছে কেন্দ্র।

শুধু তাই নয়, তাঁর আরও দাবি, করোনা পরিস্থিতির সঙ্গে লড়াই করার জন্য রাজ্যকে অক্সিজেন সিলিন্ডার, অক্সিজেন প্ল্যান্ট এবং কনসেন্ট্রেটর দিয়েছে মোদি সরকার।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহামারী পরিস্থিতিতে বাংলাকে ৯ হাজারের বেশি অক্সিজেন সিলিন্ডার দেড় হাজার ভেন্টিলেটর দেওয়া হয়েছে। অক্সিজেন প্ল্যান্ট নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে।

এদিন ডাক্তারির আসন বৃদ্ধির দাবিও জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। জবাবে মোদি জানান, ২০২৪ সালের আগে ডাক্তারির স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে ৯০ হাজারের কম আসন ছিল।

আর গত সাত বছরে এক্ষেত্রে ৬০ হাজার আসন বৃদ্ধি করেছে কেন্দ্র সরকার। এর পরই তাঁর চ্যালেঞ্জ, গত সত্তর বছরে দেশে যত চিকিৎসক তৈরি হয়েছে, আগামী ১০ বছরে তত সংখ্যক ভোর পাবে দেশ।

তিনি জানিয়েছেন, দেশে এইমসের সংখ্যাও বেড়েছে। পাশাপাশি আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প, কেন্দ্রের জনঔষধি কেন্দ্রের সাফল্যের খতিয়ানও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

জানান, আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের সুবিধা পান ক্যানসার রোগীরাও। ব্যতিক্রম নয় বাংলা ও। পাশাপাশি টিকাকরণের সংখ্যা বৃদ্ধি নিয়েও দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি।