এয়ার ইন্ডিয়ার ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনার তদন্ত প্রক্রিয়া চলাকালীন ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ ও ‘ভিত্তিহীন’ প্রতিবেদন প্রকাশের অভিযোগে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম ‘দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’ এবং সংবাদ সংস্থা ‘রয়টার্স’-এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপের পথে পা বাড়াল ভারতের পাইলট সংগঠন ‘ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান পাইলটস’। ওই দুই সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে আইনি নোটিশ পাঠিয়ে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
আহমেদাবাদ বিমান দুর্ঘটনার প্রাথমিক রিপোর্টে এআইআইবির তরফে জানানো হয়, দুর্ঘটনার আগের মুহূর্তে জ্বালানির সুইচ ‘রান’ (চালু) থেকে ‘কাটঅফ’ (বন্ধ)অবস্থায় চলে যায়। অর্থাৎ জ্বালানির সুইচে সমস্যা ছিল। কিন্তু আপাতত বোয়িং ৭৮৭-৮ বিমানের জ্বালানি সুইচে কোনও সমস্যা নেই বলেই জানিয়েছে এয়ার ইন্ডিয়া। এয়ারক্রাফট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরোর প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী, আহমেদাবাদ দুর্ঘটনার আগের মুহূর্তে বিমানটি যখন উপরে ওঠার জন্য গতি পাচ্ছে, তখনই দু’টি ইঞ্জিনের জ্বালানি ‘কাটঅফ’ মুডে চলে যায়। ইঞ্জিনে জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়।
Advertisement
এরপরই ওই দুই সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছিল, ১২ জুন আহমদাবাদে ঘটে যাওয়া বিমান দুর্ঘটনার জন্য পাইলটদেরই দায়ী করা উচিত। ককপিটে নাকি গাফিলতি ছিল, এমনটাও উল্লেখ করা হয়েছিল। এই দাবি সরাসরি খারিজ করে দিয়েছে ভারতের এয়ারক্র্যাফ্ট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো। সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, এখনই এমন কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায় না। তদন্ত এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে এবং কোনও পাইলটের দোষ প্রমাণ হয়নি।
Advertisement
এই প্রসঙ্গে ‘ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান পাইলটস’-এর দাবি, তদন্ত শেষ হওয়ার আগেই অনুমানের ভিত্তিতে এই ধরনের গুরুতর অভিযোগ পেশ করাটা ‘অপরাধমূলক’। মৃত পাইলটদের অসম্মান করা হয়েছে বলেও অভিযোগ তাদের। এমন প্রতিবেদন শুধু মৃতদের পরিবারকে মানসিক আঘাত দেয়নি, জীবিত সহকর্মীদের মনোবলেও চোট দিয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
পাইলটদের সংগঠনের তরফে বলা হয়েছে, “’এই ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীন সাংবাদিকতা একদিকে যেমন শোকসন্তপ্ত পরিবারকে আহত করে, অন্যদিকে সামগ্রিকভাবে পাইলট সম্প্রদায়ের উপর চাপ বাড়ায়। তদন্ত সম্পূর্ণ না-হওয়া পর্যন্ত কোনওরকম অনুমাননির্ভর সংবাদ পরিবেশন থেকে সব সংবাদমাধ্যমের বিরত থাকা উচিত।’
উল্লেখ্য, ২৪১ জন যাত্রী-সহ মোট ২৭৫ জনের মৃত্যুর ঘটনায় গত ১২ জুলাই এয়ারক্র্যাফ্ট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো তাদের প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট পেশ করে। এখনও চূড়ান্ত রিপোর্ট প্রকাশ হয়নি। দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমানের এপিইউ, বাঁদিকের ইঞ্জিন ও ডানার অংশ থেকে সংগৃহীত জ্বালানির নমুনা পরীক্ষা চলছে। পাশাপাশি, ক্রু ও যাত্রীদের ময়নাতদন্তের রিপোর্টও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এয়ার ইন্ডিয়া ও সংস্থার সিইও ক্যাম্পবেল উইলসনও জনসাধারণকে অনুরোধ করেছেন, তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনও সিদ্ধান্তে না আসার জন্য।
এই পরিস্থিতিতে সংবাদমাধ্যমের ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করেছে ‘ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান পাইলটস’। তাদের দাবি, ‘সাংবাদিকতার সততা বজায় রাখা জরুরি। মানুষকে বিভ্রান্ত করতে পারে এমন তথ্য ছড়ানো গণমাধ্যমের কাজ নয়।’ পাইলট সংগঠনের তরফে জানানো হয়েছে, প্রয়োজনে তারা এই বিষয়ে আদালতের দ্বারস্থ হতে প্রস্তুত।
Advertisement



