বৃহস্পতিবার দুপুর থেকেই শুভাংশুদের যান ‘ড্রাগন’-কে আইএসএস-এর সঙ্গে ‘ডকিং’ করানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছিল। আইএসএসের হারমনি পোর্টে ড্রাগনের ডকিং প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। সংযোগটি দুটি পর্যায়ে ঘটে। প্রথমে চৌম্বকীয় ‘সফ্ট ক্যাপচার’ এবং দ্বিতীয় ধাপে যান্ত্রিক ‘হার্ড ক্যাপচার’-এর মাধ্যমে ডকিংয়ের জটিল প্রক্রিয়া শেষ হয়। শুভাংশু শুক্লার মা বলেন, ‘ডকিং সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এটি অত্যন্ত গর্বের বিষয়। আমরা ভীষণ আনন্দিত। এর জন্য প্রতিদিন প্রার্থনা করেছি। ঈশ্বরের কাছে একটাই প্রার্থনা, তাঁরা যাতে তাঁদের দায়িত্ব ভালোভাবে পালন করে সুস্থভাবে পৃথিবীতে ফিরে আসে।’
এর আগে মহাকাশে ২৪ ঘণ্টা কাটানোর পর অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন শুভাংশু। শুভাংশু বলেন, ‘যখন যাত্রা শুরু হল, তখন একটা অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছিল। খুব ভালো সফর ছিল। মহাকাশে পৌঁছোতেই অস্বস্তি শুরু হয়। শুনলাম, গত কাল নাকি আমি পড়ে পড়ে ঘুমিয়েছি।’ ডকিংয়ের কয়েক ঘণ্টা আগে ড্রাগন ক্যাপসুলে বসে শুভাংশু তাঁর অভিজ্ঞতার কথাও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘আমি একটা শিশুর মতো করে শিখছি। কী ভাবে স্পেসে হাঁটতে হয়, খেতে হয়।’ শুভাংশু মহাকাশযান থেকে ৪১৮ কিলোমিটার উপরের পৃথিবীর দৃশ্যও ভাগ করে নেন। সেটিকে ‘অসাধারণ’ বলে উল্লেখ করেন।
এর আগে ৭ বার বাতিল হয়েছে এই অভিযান। প্রথমে ঠিক ছিল ২৫ মে অভিযান শুরু হবে। কিন্তু তা পিছিয়ে হয় ৮ জুন হয়। এরপরও বারবার পিছিয়ে গিয়েছে যাত্রার তারিখ। শেষবার দিন ধার্য হয়েছিল ২২ জুন। তাও পিছিয়ে যায়। অবশেষে বুধবার সব দিক থেকে সবুজ সঙ্কেত মেলার পর আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের উদ্দেশে পাড়ি দেয় মহাকাশযান ড্রাগন। শুভাংশু ছাড়াও দলে ছিলেন – মিশনের কমান্ডার, নাসার প্রাক্তন মহাকাশচারী এবং বর্তমানে অ্যাক্সিয়ম স্পেসের হিউম্যান স্পেসফ্লাইট বিভাগের ডিরেক্টর পেগি হুইটসন, ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সির পোল্যান্ডের স্লায়োস উজনানস্কি-উইসনিউস্কি এবং হাঙ্গেরির টিবর কাপু।
এই মিশনে ১৪ দিন মহাকাশে থাকবেন শুভাংশুরা। নাসা-র সহযোগিতায় ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো এবং বায়োটেকনোলজি দপ্তরের (ডিবিটি) তরফে মহাকাশে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। ‘অ্যাক্সিয়ম-৪’ মিশনের অংশ হিসেবে মহাকাশে মোট ৬০টি বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা চালানো হবে, যার মধ্যে ভারতের তরফে থাকছে ৭টি। সেই সমস্ত পরীক্ষার নেতৃত্ব দেবেন শুভাংশু শুক্লা। মহাকাশে জীববিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও চিকিৎসাবিজ্ঞানের নানা দিক নিয়ে হবে এই গবেষণা। শুভাংশু ভারতের নিজস্ব স্পেস মিশন ‘গগনযান’-এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন এই অভিযানের মাধ্যমে।