পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় জেটলির শেষকৃত্য

চোখের জলে ভিজে চিরবিদায় নিলেন অরুণ জেটলি– নিগমবােধ ঘাটে ভারি বর্ষণের মধ্যে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় ভারত মায়ের কৃতি সন্তানের অন্ত্যেষ্টি সম্পন্ন হয়।

Written by SNS New Delhi | August 26, 2019 9:10 am

পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় অরুণ জেটলির শেষকৃত্য করা হল। (Photo: IANS)

চোখের জলে ভিজে চিরবিদায় নিলেন অরুণ জেটলি– নিগমবােধ ঘাটে ভারি বর্ষণের মধ্যে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় ভারত মায়ের কৃতি সন্তানের অন্ত্যেষ্টি সম্পন্ন হয়। দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ থাকার পর এইমসে শনিবার দুপুর বারােটা সাত মিনিটে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

অসুস্থতার কারণে বেশ কয়েকমাস তিনি সক্রিয় রাজনীতি থেকে অবসর নিয়েছিলেন। সকাল থেকে তাঁর বাসভবনে ও বিজেপি সদর দফতরে জাতীয় পতাকায় মােড়া কফিনবন্দি নেতাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে অগনিত মানুষ জড়াে হয়েছিলেন। দলীয় কর্মী ও সমর্থকরা তাদের০ প্রিয় নেতার প্রয়াণে শােকস্তব্ধ হয়ে পড়েন।

দলীয় পরিবৃত্তের গন্ডি ভেঙে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল, উপ মুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসােদিয়া, কংগ্রেস নেতা জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া, কপিল সিব্বাল সহ রাজনৈতিক দলগুলির নেতা মন্ত্রীরা দেশের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রীকে শেষ শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করতে বিজেপি সদর দফতরে গেছিলেন। শুধু তাই নয়, তাঁদের মধ্যে অনেককে শেষ বিদায়ের অন্তিম মুহর্তে বৃষ্টিভেজা দুপুরে অন্ত্যেষ্টিস্থলে দেখা গেছে।

প্রধানমন্ত্রী মােদি প্রথম দফায় ক্ষমতায় আসার পর পেশায় আইনজীবী জেটলির হাতে দেশের অর্থমন্ত্রকের দায়িত্ব অর্পন করেন। অরুণ সৌরি ও সুব্রহ্মণ্যম স্বামীকে বাদ দিয়ে তিনি দেশের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রকের দায়িত্বে জেটলি ছাড়া অন্য কারুর কথা ভাবতে পারেননি। দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনােহর পারিক্কর যখন অসুস্থ হয়ে পড়লে তখন দেশের আরও এক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রকের অতিরিক্ত দায়িত্ব জেটলির হাতে তুলে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছিলেন। তিনি জানতেন অরুণ জেটলি দক্ষ হাতে দুই গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রকের দায়িত্ব সামলাতে পারবেন।

জি ৭ বৈঠকে যােগ দিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ফ্রান্সে রয়েছেন। বিদেশ সফরে থাকার কারণে তিনি জেটলির অন্ত্যেষ্টিতে উপস্থিত থাকতে পারেননি। ঘনিষ্ট বন্ধুর প্রয়াণের খবর পেয়ে দেশে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নিলেও জেটলির পরিবারের অনুরােধে দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত বাতিল করেন। প্রধানমন্ত্রী মােদিও যখন কোনও সমস্যায় পড়েছেন , তখন ত্রাতা হিসেবে জেটলিকে সব সময় পাশে পেয়েছেন।

দলীয় রাজনীতি সম্পর্কে তাঁর জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা একজন জাত রাজনীতিক হিসেবে তাঁকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। মােদি-জেটলি সখ্যতা, পারস্পরিক নির্ভরতা ও বিশ্বাসযােগ্যতা সমীকরণের। শুরুটা ১৯৯০ সালের শেষভাগ থেকে– রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘের প্রচারক মােদিকে বিজেপির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নিয়ােগ করা হয়েছিল। তখন মােদি জেটলির ৯, অশোকা রোডের সরকারি বাংলোয় একটা অংশে থাকতেন।

২০০২ সালে গুজরাত দাঙ্গার পরবর্তী প্রেক্ষাপটে মােদি ও অমিত শাহকেও আইনি জটিলতা থেকে মুক্ত করতে দৌড়ে গেছেন অটল বিহারী বাজপেয়ীর পছন্দের পাত্র জেটলি।

আজ সকালে জেটলির দেহ বাসভবন থেকে দলীয় সদর দফতরে নিয়ে যাওয়া হয়। দলীয় নেতাদের পাশাপাশি বিরােধী শিবিরের নেতামন্ত্রীরা জেটলির বাড়িতে গিয়ে শেষ শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন। তাঁরা সকলেই জেটলি পরিবারের কঠিন মুহুর্তে পাশে দাঁড়ান।

উপরাষ্ট্রপতি বেঙ্কাইয়া নাইডু, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং পুস্পার্ঘ্য নিবেদন করেন। তারপর কফিন বন্দি দেহটি জাতীয় পতাকায় মুড়ে ফেলা হয়। প্রবীণ কংগ্রেস নেতা মােতিলাল বােহরা, এনসিপি নেতা শরদ পাওয়ার, আরএলডি নেতা অজিত সিং, প্রফুল্ল প্যাটেল, অন্ধ্রপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এন চন্দ্রবাবু নাইডু শেষ শ্রদ্ধা জানান

প্রধানমন্ত্রী মােদি দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর জেটলি তাঁকে আনুরােধ করেছিলেন, প্রশাসনের নতুন কোনও দায়িত্ব গ্রহণ করার আগে শারীরিকভাবে সুস্থ হয়ে ওঠার জন্য সময় দেওয়া হােক। ৫২ বছর বয়সেই তিনবার বাইপাস সার্জারি হয়েছিল। মে মাসে কিডনি প্রতিস্থাপন করার পর থেকে শারীরিক অবস্থা চিন্তাজনক হয়ে পড়ে। তিনি ডায়াবেটিক ছিলেন। চিকিৎসা করাতে ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি আমেরিকা যাওয়ার কারণে মােদি প্রশাসনের অন্তবর্তী বাজেট পেশ করতে পারেননি।

মােদি বিদেশ সফরে যাওয়ার আগে এইমসে গিয়ে জেটলির সঙ্গে দেখা করেন। প্রিয় বন্ধুর প্রয়াণের খবরে ভেঙে পড়ে তিনি বলেন, আমি এটা ভাবতে পারছি না- দেশ থেকে এতদূরে রয়েছি, আর তখনই আমার বন্ধু শেষ বিদায় নিলেন। কয়েকদিন আগে দেশের প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ প্রয়াত হয়েছেন। বােন হারানাের পর আমি এক বন্ধুকে হারালাম। আডবানি টিমের দুই গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে পরিচিত ছিলেন সুষমা স্বরাজ ও অরুণ জেটলি।

ভারতীয় জনতা পার্টির আপদে-বিপদের কান্ডারি স্পষ্টবাদী, সুকৌশলী অরুণ জেটলি প্রধানমন্ত্রী মােদিরও সময়-অসময়ের ত্রাতা ছিলেন। কিন্তু শারীরিক সমস্যা তাঁকে প্রতিনিয়ত সক্রিয় রাজনীতি থেকে সরে দাড়াতে বাধ্য করেছে, একটা সময় ভারতীয় রাজনীতির উজ্জ্বলতম ব্যক্তিত্ব অরুণ জেটলি তাঁর চার দশকের রাজনৈতিক কেরিয়ারে দাড়ি টানতে বাধ্য হয়েছিলেন। ঐকমত্য নির্মাণের কারিগর জেটলিকে প্রধানমন্ত্রী মােদির মন্ত্রিসভার ‘আসল চাণক্য’ হিসেবে পরিগণিত করা হয়ে থাকে।