এক সময়ের কর্পোরেট দুনিয়ার দাপুটে নাম ছিলেন অনিল আম্বানি। আর আজ ঋণখেলাপি এবং আর্থিক তছরুপের অভিযোগে একের পর এক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ‘প্রতারক’ তালিকায় নাম লেখাচ্ছেন তিনি। স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া এবং ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার পর এবার অনিল আম্বানিকে ‘প্রতারক’ ঘোষণা করল ব্যাঙ্ক অফ বরোদাও। বৃহস্পতিবার শেয়ার বাজারকে ব্যাঙ্ক অফ বরোদা জানায়, তারা রিলায়েন্স কমিউনিকেশনস (আরকম)-এর সমস্ত ঋণ অ্যাকাউন্ট এবং সংস্থার প্রাক্তন কর্ণধার অনিল আম্বানিকে ‘ফ্রড’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। যদিও ব্যাঙ্ক অফ বরোদার বকেয়া ঋণের পরিমাণ এখনও প্রকাশ্যে আনা হয়নি, তবু এই ঘোষণা আরকম এবং অনিলের বিরুদ্ধে চাপ আরও বাড়াল বলেই মনে করা হচ্ছে।
এর আগে স্টেট ব্যাঙ্ক জানিয়েছিল, আরকম এবং তার শাখা সংস্থাগুলি বিভিন্ন ব্যাঙ্ক থেকে মোট ৩১,৫৮০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিল, যা পরবর্তীতে ‘জটিল’ লেনদেনের মাধ্যমে ঋণের শর্ত লঙ্ঘন করে বিভিন্ন গোষ্ঠী সংস্থায় পাঠানো হয়। ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া জানায়, তারা অনিল আম্বানির সংস্থার কাছে ৭২৪.৭৮ কোটি টাকা পায়। প্রসঙ্গত, অনিলের রিলায়েন্স কমিউনিকেশনস ইতিমধ্যেই নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করেছে। সংস্থার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে পাওনা মেটানোর চেষ্টা চলছে। যদিও আরকম বর্তমানে অনিলের মালিকানাধীন নয়, তবুও তাঁর বিরুদ্ধে প্রায় ১৭,০০০ কোটি টাকার তছরুপের অভিযোগ রয়েছে।
Advertisement
সিবিআই ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে। তাদের মতে, বিভিন্ন ব্যাঙ্ক থেকে নেওয়া ঋণ যথাযথভাবে ব্যবহার করা হয়নি। টাকা অন্যত্র সরানো হয়েছে, যার ফলেই দেউলিয়া হয়েছে আরকম। সত্যিই কোনও আর্থিক তছরুপ হয়েছে কিনা, তা জানতে তথ্যপ্রমাণ জোগাড় করছে তদন্তকারী সংস্থা। উল্লেখ্য, ২০২৩ এবং ২০২০ সালে অর্থ পাচার মামলায় অনিল আম্বানিকে তলব করেছিল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। ইয়েস ব্যাঙ্ক কেলেঙ্কারিতেও তাঁর নাম উঠে আসে। ২০১৯ সালে এরিকসনের সঙ্গে মামলায় ৪৫৮.৭৭ কোটি টাকা জরিমানা দিতে না পারায় অনিলের জেলে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। তখন তাঁর দাদা, মুকেশ আম্বানি আর্থিক সাহায্য করে তাঁকে বাঁচান।
Advertisement
এদিকে অনিল আম্বানির মুখপাত্র দাবি করেছেন, এসবিআই যে অভিযোগ এনেছে, তা প্রায় ১০ বছর আগের। সেই সময়ে সংস্থার দৈনন্দিন প্রশাসনে অনিল সরাসরি যুক্ত ছিলেন না বলেই জানান মুখপাত্র। তাঁর আরও অভিযোগ, পাঁচজন নন-এগজিকিউটিভ ডিরেক্টরের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া না হলেও, অনিল আম্বানিকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে হয়রানি করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, অনিল আম্বানির তিনটি সংস্থা – রিলায়েন্স কমিউনিকেশনস, রিলায়েন্স ক্যাপিটাল এবং রিলায়েন্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার দেউলিয়ার পথে রয়েছে। রিলায়েন্স হোম ফাইনান্সকে ৬ মাসের জন্য শেয়ারবাজার থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল এবং ৬ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়েছিল। একটা সময় রাফাল বিতর্কে অনিল আম্বানি চাপের মুখে ছিলেন, কিন্তু ঠিক তখনই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর রাজ্য গুজরাতে একটি বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য তাঁর সংস্থা ৬৪৮ কোটি টাকার বরাত পায়।
Advertisement



