অমিত শাহ’র পদত্যাগের দাবি উঠল লোকসভায়

আজ লােকসভায় বিরােধী দলগুলি দিল্লির হিংসার প্রতিবাদ জানিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ’র পদত্যাগের দবিতে সােচ্চার হয়।

Written by SNS New Delhi | March 3, 2020 3:48 pm

অমিত শাহ'র পদত্যাগের দাবি জানায় কংগ্রেস সদস্যরা। (Photo: IANS)

আজ লােকসভায় বিরােধী দলগুলি দিল্লির হিংসার প্রতিবাদ জানিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ’র পদত্যাগের দবিতে সােচ্চার হলে বিজেপি ও কংগ্রেস সদস্যদের মধ্যে ধস্তাধস্তি বেধে যায়। এই নিয়ে হইচই চলতে থাকলে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত তিনবার সভা মুলতবি করে দেওয়া হয়। পরে মঙ্গলবার পর্যন্ত সভা মুলতবি করে দেওয়ার আগে স্পিকার ওম বিড়লা জানান, আজ সারাদিন সভায় যা ঘটল, তাতে তিনি ব্যথিত।

এদিন বেলা ২টায় সভা বসলে বিরােধী সদস্যরা ওয়েলে নেমে সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে শুরু করেন। স্পিকার ওম বিড়লা সভার কাজ শুরু করার সঙ্গে সঙ্গেই তারা একটা কালাে ব্যানার নিয়ে শাসক বেঞ্চের সামনে দিয়ে ঘুরতে শুরু করেন, যাতে অমিত শাহ’র পদত্যাগের দাবির কথা লেখা ছিল। সংসদীয় বিষয়ক মন্ত্রী প্রহলাদ যােশী তাদের উচ্ছৃঙ্খল আচরণের নিন্দা করে স্পিকারকে সভার কাজ চালিয়ে যেতে বলেন।

যােশী অভিযােগ করেন, ‘এইসব লোকরাই দাঙ্গায় প্ররোচনা দিয়েছে। এরাই ১৯৮৪-তে (দাঙ্গায়) তিন হাজার মানুষকে হত্যা করেছিল, যার কোনও তদন্তই হয়নি। শান্তি ফিরিয়ে আনাই এখন প্রধান কাজ। কিন্তু এরা উত্তেজনা সৃষ্টি করতে চাইছে।’ সভায় স্বাভাস্কি অবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য স্পিকার বিরােধী সদস্যদের ওয়েল থেকে সরে গিয়ে নিজেদের আসনে বসতে বলেন। কিন্তু বিরােধী সদস্যরা ‘আমরা ন্যায় বিচার চাই’, ‘অমিত শাহ মুর্দাবাদ’ ধ্বনি দিতে থাকেন। তাদের হাতে প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল ‘ঘৃণাসূচক বক্তব্য বন্ধ হােক, আমাদের ভারতকে রক্ষা করাে।’

এরপর বিজেপি’র সঞ্জয় জয়সওয়াল যখন ‘বিবাদ সে বিশ্বাস’ বিলের ওপর বক্তব্য রাখছিলেন, তখন কংগ্রেসের গৌরব গগৈ ও রভনীত সিং বিট্টু কালাে পতাকা নিয়ে শাসক বেঞ্চের দিকে এগিয়ে গেলে পরিস্থিতি ভিন্ন দিকে মােড় নেয়। রমেশ বিধুরি ও নিশিকান্ত দুবে সহ বিজেপি সদস্যরা তাদের ওয়েলে ফিরে যেতে বলেন। কয়েকজন কংগ্রেস সদস্য কাগজপত্র ছিড়ে হাওয়ায় উড়িয়ে দেন।

কংগ্রেস সাংসদদের অভিযােগ, বিজেপি সদস্যরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। বিজেপি বেঞ্চের পিছনের দিকের সদস্যরা কংগ্রেস সদস্যদের দিকে ধেয়ে গেলে দুই পক্ষের সাংসদদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়ে যায়। তখন স্পিকার বেলা ৩টা পর্যন্ত সভা মুলতবি করে দেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ ও স্মৃতি ইরানিকে উত্তেজিত সদস্যদের বুঝিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করতে দেখা যায়। কংগ্রেস সভানেত্রী সােনিয়া গান্ধি ও কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধি হইচইয়ের সময় সভায় উপস্থিত ছিলেন।

বেলা ৩টায় আবার সভা বসলে কয়েকজন বিজেপি সদস্য তাদের দিক এগিয়ে ওয়েলে যাওয়ার পথটা আটকে রাখেন। কংগ্রেস সদস্য রামাইয়া হরিদাস তাকে বিজেপি সদস্যরা নিগ্রহ করেছে বলে অভিযােগ করেন। সেই সময় স্পিকারের আসনে ছিলেন বিজেপির রমা দেবী। ‘আপনারা যা করছেন তা ঠিক নয়’ বলে তিনি বিকেল ৪টা পর্যন্ত সভা মুলতবি করে দেন। কিন্তু প্রবল চিৎকার-চেঁচামেচি চলতে থাকায় সাড়ে ৪টা পর্যন্ত সভা মুলতবি করে দেওয়া হয়।

কিন্তু বিজেপি সদস্যদের স্লোগানের কোনও বিরাম ছিল না। তারা ধ্বনি দিতে থাকেন ‘দেশ কি রক্ষা কৌন করেগা, হম করেঙ্গে, হাম করেঙ্গে’, ‘মহাত্মা গান্ধি অমর রহে’, ‘নকলি গান্ধি জেল মে রহে’ ইত্যাদি। কয়েকজন বিরােধী সদস্য স্পিকারের টেবিলে একটি প্ল্যাকার্ড বসিয়ে দেন, যাতে অমিত শাহের পদত্যাগের দাবির কথা লেখা ছিল। তবে লােকসভার কর্মীরা সঙ্গে সঙ্গেই সেটা সরিয়ে দেন।

এর আগে স্পিকার ওম বিড়লা বিরােধী দলগুলির নেতাদের নিজেদের সদস্যদের ওয়েল থেকে নিজেদের আসনে গিয়ে বসতে বলার জন্য অনুরােধ করেন। তিনি বলেন, ‘সারা দেশের মানুষ এই দৃশ্য দেখছে। এটা গণতন্ত্রের মন্দির। কিছু কিছু নিয়মবিধি ও ঐতিহ্য তাে আছে। আপনাদের ওয়েলে নামা উচিত নয়। আপনারা জনগণের দায়িত্বশীল প্রতিনিধি হিসেবে এখানে এসেছেন। তাই শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখা আপনাদের যৌথ দায়িত্ব।’

বেলা সাড়ে ৪টায় সভা বসার পর স্পিকার বলেন, ‘সভায় আমাদের শােভনতা বজায় রাখতে হবে। এই সভা প্রত্যেক সদস্যের। সভার ঘটনাবলিতে আমি ব্যক্তিগতভাবে মর্মাহত। কিন্তু আপনারা নন। এরকম পরিস্থিতির মধ্যে আমি সভা চালাতে চাইনা। সভার মর্যাদা যাতে বজায় থাকে, তা সুনিশ্চিত করার জন্য প্রত্যেকরই আলােচনায় শামিল হওয়া উচিত। সভা যাতে সুষ্ঠুভাবে চলে তার জন্য প্রবীণ সদস্যদের সচেষ্ট হওয়া দরকার।’

আজ সভায় হইচইয়ের মধ্যেই দু’টি বিল- দ্য মেডিকেল টার্মিনেশন অফ প্রেগন্যান্সি অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল ও মিনারেল লজ অ্যামেন্ডমেন্ট বিল উত্থাপিত হয়। এছাড়াও ডাইরেক্ট ট্যাক্স বিবাদ সে বিশ্বাস বিলটি বিবেচনা ও পাশ করানাের জন্য উত্থাপন করা হয়।

এর আগে বিহারের বাল্মিকী নগর থেকে নির্বাচিত জেডি(ইউ) সদস্য বৈদ্যনাথ প্রসাদের মৃত্যুতে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এদিন বেলা ২’টা পর্যন্ত লােকসভার অধিবেশন মুলতবি রাখা হয়।