• facebook
  • twitter
Thursday, 17 July, 2025

আহমেদাবাদ বিমান দুর্ঘটনায় খতিয়ে দেখা হচ্ছে নাশকতার সম্ভাবনা

ভারতের প্রাক্তন পাইলট সৌরভ ভাটনগরের মতে, হয়তো একসঙ্গে অনেকগুলো পাখি বিমানটিতে ধাক্কা মারে, যে কারণে বিমানের দু’টি ইঞ্জিনেরই আগুন নিভে যায় বা থেমে যায়।

বিমান দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থলে উদ্ধারকারী দল।

আহমেদাবাদ বিমান দুর্ঘটনার পিছনে সম্ভাব্য কারণগুলির মধ্যে নাশকতার আশঙ্কাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কারণ বিশেষজ্ঞদের ধারনা অনুযায়ী এই ধরনের দুর্ঘটনার পিছনে স্বাভাবিকভাবে যেসব কারণগুলি থাকে, তার মধ্যে কোনোটারই উপযুক্ত যুক্তি বা প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ফলে এইসব কারণগুলির কোনোটিই ধোপে টিকছে না। সেজন্য খতিয়ে দেখা হচ্ছে এর পিছনে নাশকতার মতো কোনও রহস্য লুকিয়ে আছে কিনা। বিষয়টির তদন্তের জন্য ডিজিসিএ-র আধিকারিক, বোয়িং-এর প্রতিনিধি এবং বিমান বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এজন্য আহমেদাবাদ বিমানবন্দরের যেখানে বিমানটি দাঁড়িয়েছিল, সেখানকার আশেপাশের সিসিটিভি ফুটেজও খতিয়ে দেখার চেষ্টা করা হচ্ছে।
পাশাপাশি দুর্ঘটনার মুহূর্তে বিমানের ককপিটে ঠিক কী ঘটেছিল, তা উদ্ধার হওয়া ব্ল্যাক বাক্স থেকে জানার চেষ্টা করা হচ্ছে।

তদন্তকারীরা দুর্ঘটনার মুহূর্তে ককপিট নিয়ন্ত্রণে নাশকতা বা বহিরাগত হস্তক্ষেপের মতো কোনও ঘটনা ঘটেছিল কিনা তা খতিয়ে দেখছেন। সূত্র জানিয়েছে, অন্যান্য সম্ভাব্য কারণের অভাবে তদন্তের এই লাইনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য উদ্ধার হওয়া ব্ল্যাক বক্সটি বিশ্লেষণ করে ককপিটের যোগাযোগ ব্যবস্থা ও প্রযুক্তিগত তথ্য উড়ানের শেষ মুহূর্তগুলির গুরুত্বপূর্ণ পরিস্থিতির উপর দৃষ্টি নিক্ষেপ করতে পারে। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, এই তথ্য ডিকোড করতে কয়েক সপ্তাহ সময় লাগতে পারে।

এই বিমান দুর্ঘটনায় প্রাণে বেঁচে যাওয়া একমাত্র যাত্রী বিশ্বাস কুমার রমেশের বয়ান তদন্তে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে। ব্ল্যাক বক্সের রেকর্ড এবং দুর্ঘটনার সময়ে তাঁর জানা ঘটনা মিলিয়ে দেখার পর তদন্তকারীরা অনেক অজানা রহস্যের জট খুলতে পারবেন বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও এই ঘটনার পিছনে কোনও নাশকতার মতো ঘটনা জড়িয়ে আছে কিনা, সেটাও খতিয়ে দেখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ রমেশ ইতিমধ্যেই বলেছেন, টেক অফের সঙ্গে সঙ্গেই বিমানে একটি বিকট আওয়াজ হয়। প্রশ্ন উঠছে এই আওয়াজ কি কোনও বোমা জাতীয় বস্তুর বিস্ফোরণের আওয়াজ, নাকি চালকের ভুলে বা কোনও যান্ত্রিক ত্রুটির আওয়াজ? সেটা ব্ল্যাক বক্সের তথ্য না পাওয়া পর্যন্ত এই দুর্ঘটনার পিছনে নাশকতার মতো কোনও ঘটনা ঘটেনি, এমন কথা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।

প্রসঙ্গত প্রাথমিকভাবে বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুযায়ী, এই দুর্ঘটনার পিছনে যেসব সম্ভাব্য কারণকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল। বিমান ভেঙে পড়ার পর যেসব ভিডিও ও ছবি ভাইরাল হয়েছে তার ভিত্তিতে বিমান ও বিমান নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের একাংশ  এই সম্ভাব্য কারণগুলি তুলে ধরেছিলেন। সেগুলি হল–

১. ফ্ল্যাপ ও স্ল্যাট ঠিকমতো খোলা না হলে
২. পাখির ধাক্কা ও ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে
৩. ল্যান্ডিং গিয়ার তুলতে না পারার কারণে
৪. দু’টি ইঞ্জিন একসঙ্গে বিকল হয়ে যাওয়া
৫. পাইলটের ভুল

আহমেদাবাদ বিমান দুর্ঘটনার সম্ভাব্য কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বিমান বিশেষজ্ঞ জন কক্স বলেছেন, বিমানের ডানার পিছনের ফ্ল্যাপগুলো ঠিক জায়গায় ছিল না বলেই মনে করা হচ্ছে। ওড়ার সময় এই ফ্ল্যাপ-স্ল্যাট খোলা না থাকলে বিমান যথেষ্ট লিফট পায় না। ছবিতে দেখা গিয়েছে, বিমানটি উপরে উঠছিল, কিন্তু আচমকা নীচে নামতে থাকে। যদিও এই ঘটনার সঙ্গে বিমান দুর্ঘটনার কোনও সম্পর্ক রয়েছে বলে মনে করছেন না তদন্তকারীরা।

ভারতের প্রাক্তন পাইলট সৌরভ ভাটনগরের মতে, হয়তো একসঙ্গে অনেকগুলো পাখি বিমানটিতে ধাক্কা মারে, যে কারণে বিমানের দু’টি ইঞ্জিনেরই আগুন নিভে যায় বা থেমে যায়। কিন্তু বেশ কিছু বিমান বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একসঙ্গে দুটো ইঞ্জিন বন্ধ হওয়া খুবই বিরল ঘটনা। তাছাড়া এর সপক্ষে কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কোনও ভিডিও ফুটেজ বা ছবিও সামনে আসেনি।

সাধারণত, বিমান ওড়ার সঙ্গে সঙ্গেই চাকা ভাঁজ করে ভিতরে ঢুকিয়ে নেওয়া হয়। কিন্তু দুর্ঘটনার ছবিতে দেখা গিয়েছে, বিমানের ল্যান্ডিং গিয়ার নামানো অবস্থায় ছিল। এক্ষেত্রে অনেকেই ধারনা করছেন, পাইলট হয়তো আগেই কোনও ত্রুটি বুঝতে পেরেছিলেন, সেজন্য তিনি ল্যান্ডিং তোলেননি। তবে এরজন্য বিমান দুর্ঘটনার কোনও সম্পর্ক রয়েছে বলে কোনও যুক্তি সম্মত কারণ এখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি।

বেশ কিছু বিমান বিশেষজ্ঞ আবার বলেন, গত ৭০ বছরে একসঙ্গে দু-দু’টি ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যাওয়া খুবই বিরল ঘটনা। অতীতে এরকম ঘটনা মাত্র ৭টি দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে ঘটেছে। আবার পাখির ধাক্কায় একসঙ্গে দু’টি ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রায় অসম্ভব। যদিও ইঞ্জিনে যান্ত্রিক গোলযোগ বা জ্বালানির সমস্যা থাকলে এমনটা হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে জ্বালানি ভর্তি ছিল। আর যান্ত্রিক যোগযোগের এখনও কোনও তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

বিমানের দুইজন পাইলটই ছিলেন যথেষ্ট অভিজ্ঞতা সম্পন্ন। তাঁদের মধ্যে প্রধান পাইলটের রয়েছে ৮ হাজার ২০০ ঘন্টা বিমান পরিচালনার অভিজ্ঞতা এবং সহকারী পাইলটের রয়েছে ১ হাজার ১০০ ঘন্টা আকাশে ওড়ার অভিজ্ঞতা। ফলে এরকম দুই জন অভিজ্ঞ পাইলটের ভুল হওয়ার সম্ভাবনা একেবারে ক্ষীণ বলে মনে করা হচ্ছে।

এই দুর্ঘটনায় একটি বোয়িং ড্রিমলাইনারের ত্রুটির কথাও উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কারণ এই বিমান সংস্থার একটি চমৎকার নিরাপত্তার রেকর্ড রয়েছে। এ পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী, ১,২০০টি এই জাতীয় বিমান এরকম ঘটনা ছাড়াই পরিষেবা দিয়ে চলেছে। তা সত্ত্বেও তদন্তকারীরা বিমানের রক্ষণাবেক্ষণের ইতিহাস এবং অতীতের উড্ডয়নের রেকর্ডগুলি পরীক্ষা করছেন, যাতে কোনও উপেক্ষিত প্রযুক্তিগত সমস্যা দৃষ্টির বাইরে চলে না যায়।