• facebook
  • twitter
Friday, 7 November, 2025

৫৫ বছর ধরে থানায় হাজিরার পর ৯০ বছরে মুক্তি মিলল আগ্রার বৃদ্ধের

উত্তরপ্রদেশের সেই পুলিশ আধিকারিক হেসে বলেন, ‘আগামী মাসেও না, আর কখনও না। আপনাকে আর থানায় আসতেই হবে না।’

ছবি: এআই সহায়তায় নির্মিত।

পাড়ার একটি অশান্তিতে নাম জড়িয়েছিল মিঠু সিংহের। সেই ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের হয়। পরে পাড়ার মানুষের মধ্যে মিটমাট হয়ে গেলেও ভোলেনি পুলিশ। এলাকার মানুষ সেই ঘটনার কথা ভুলে গিয়েছে। তা সত্ত্বেও গত ৫৫ বছর ধরে প্রতি সপ্তাহের সোমবার থানায় হাজিরা দিতে যেতে হয় মিঠুকে। তাঁর সঙ্গে আরও অনেকেই এই ঘটনায় অভিযুক্ত ছিলেন। তাঁদের সকলকে নিয়ম করে থানায় হাজিরা দিতে হয়। জেলের বাইরে থেকেও মনের দিক থেকে যেন কারাবন্দি ছিলেন তাঁরা। এবার মিলল মুক্তির স্বাদ।

জানা গিয়েছে, উত্তর প্রদেশের আগ্রার এই ঘটনায় প্রায় ১৩০ জনের নাম ছিল পুলিশের খাতায়। তাঁদের মধ্যে মিঠুর মতো আরও ৫৭ জনের থানায় হাজিরা থেকে রেহাই দেওয়া হয়েছে। উত্তরপ্রদেশের ওই থানার পুলিশ সম্প্রতি জানিয়ে দিয়েছে, যাঁদের বয়স ৮০ থেকে ৯০ এর কোটায়, তাঁদের আর হাজিরা দিতে হবে না। কারণ প্রায় পাঁচ দশক পর এক একজনের নামের কেস ডায়েরি বন্ধ হয়েছে। শুধু তাই নয়, যে অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছিল, সেগুলোর নির্দিষ্ট কোনও প্রমাণ মেলেনি।

তাই দীর্ঘ ৫৫ বছর পর মিঠুকে জানিয়ে দেওয়া হল, তাঁকে সামনের মাস থেকে আর থানায় হাজিরা দিতে হবে না। কথাটি শুনে প্রথমে যেন নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না ওই বৃদ্ধ। দীর্ঘ ৫৫ বছর পর পুলিশ তাঁকে এই কথা বলায় তিনি বিষয়টি নিশ্চিত করতে জিজ্ঞাসা করেন, ‘ঠিক বলছেন? আমি এখন থেকে মুক্ত? আমি স্বাধীন? আর থানায় যেতে হবে না?’ এরপর তিনি ফের প্রশ্ন করেন, ‘আমাকে তো ডিসেম্বরেও ডাকা হয়েছিল… আসতে হবে তো?’

তখন উত্তরপ্রদেশের সেই পুলিশ আধিকারিক হেসে বলেন, ‘আগামী মাসেও না, আর কখনও না। আপনাকে আর থানায় আসতেই হবে না।’ এরপর বৃদ্ধ আনন্দে আত্মহারা হয়ে যান। যেন জেলমুক্তির স্বাদ পেলেন এতদিনে।

উল্লেখ্য, ঘটনার সময় মিঠু ছিলেন মাত্র ৩৫ বছরের যুবক। এখন তিনি ৯০ বছরের বৃদ্ধ। এই মামলা থেকে রেহাই মেলার পর বৃদ্ধ এক নিঃশ্বাসে বলেন, ‘আমার ছেলেমেয়েরা বড় হয় গেল। ছোট থেকে তারা আমাকে প্রতি মাসে থানায় আসতে দেখছে। ওরা যখন ছোট ছিল, জিজ্ঞেস করত, “বাবা তুমি কী করেছো?” এখন একই প্রশ্ন করে নাতিনাতনিরা। এ ভাবে সময় গড়িয়ে গেল। খারাপ লাগাটাই অভ্যাস হয়ে গিয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আজ আমি ঠিক কতটা খুশি, তা আমার বোঝানোর মতো ভাষা নেই।’