• facebook
  • twitter
Sunday, 8 December, 2024

হারের দায়ে যেতে পারে যোগীর গদি, কোপে পড়তে পারেন শুভেন্দুও

লখনউ, ৮ জুন– বিজেপির নিয়ম হল জয় পেলে তার মালা পরানো হয় মোদিকে৷ কিন্তু হার জুটলে তার দায় নিয়ে চেয়ার হারাতে হয় স্থানীয় নেতৃত্ব থেকে শুরু করে মুখ্যমন্ত্রীদের৷ গেরুয়া শিবিরের সেই নীতি মেনেই মোদি-শাহর ইচ্ছায় মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ার হারাতে হয় মধ্যপ্রদেশের শিবরাজ সিং চৌহান, রাজস্থানে বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়াদের৷ এবার বিজেপিকে পরাজয়ের মুখ দেখতে হয়েছে উত্তর প্রদেশে৷

লখনউ, ৮ জুন– বিজেপির নিয়ম হল জয় পেলে তার মালা পরানো হয় মোদিকে৷ কিন্তু হার জুটলে তার দায় নিয়ে চেয়ার হারাতে হয় স্থানীয় নেতৃত্ব থেকে শুরু করে মুখ্যমন্ত্রীদের৷ গেরুয়া শিবিরের সেই নীতি মেনেই মোদি-শাহর ইচ্ছায় মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ার হারাতে হয় মধ্যপ্রদেশের শিবরাজ সিং চৌহান, রাজস্থানে বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়াদের৷ এবার বিজেপিকে পরাজয়ের মুখ দেখতে হয়েছে উত্তর প্রদেশে৷ তাই পরাজয়ের দায় নিতে হবে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে৷ সেই দায়ে আদিত্যনাথকে মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ার ছাড়তে হতে পারে বলে বিজেপি সূত্রে খবর৷ যোগীকে কুর্সি ছাড়াকরার প্রস্তুতি শুরু করেছে মোদি-শাহ জুটি৷ দলের জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে যোগীকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হতে পারে বলে মনে করছে দলের একাংশ৷ এছাড়াও কয়েকটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও বিরোধী দলনেতাদের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হতে পারে বলে জল্পনা৷ এই রাজ্যগুলির মধ্যে নাম রয়েছে বাংলারও৷ মোদি-শাহের কোপের তালিকায় নাম রয়েছে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীরও৷ এমনটাই জানা গিয়েছে পদ্ম শিবির সূত্রে৷
তবে যদি সত্যিই যোগী বা শুভেন্দ্ুকে সরতে হয় তাহলে আপ প্রধান তথা দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের অভিযোগ সত্যি প্রমাণিত হবে৷ নির্বাচনের ফল ঘোষণার আগে অরবিন্দ কেজরিওয়াল বারে বারে বলেছেন, নরেন্দ্র মোদি বিপুল সংখ্যক আসন নিয়ে ক্ষমতায় ফিরলে শুধু অবিজেপি নয়, বিজেপিশাসিত বহু মুখ্যমন্ত্রীকে সরিয়ে দেবেন, সবচেয়ে আগে গদি হারাবেন যোগী আদিত্যনাথ৷ উত্তরপ্রদেশে লোকসভা ভোটে বিজেপির লজ্জাজনক হারের পর এখন জেলবন্দি কেজরিওয়ালের কথাই পদ্ম শিবিরের অন্দরে মূল আলোচ্য৷ দু-বছর আগের বিধানসভা ভোটে বিপুল জয়ের পর যোগীর নতুন ডাকনাম হয়েছে ‘বুলডোজার বাবা’৷ ছোটখাটো অন্যায়েও তাঁর প্রশাসন বুলডোজার পাঠিয়ে অভিযুক্তের ঘরবাডি় ভেঙে দিচ্ছে, তা নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত মামলা গড়ালেও যোগীকে টলানো যায়নি৷ এবার লোকসভা ভোটের মধ্যেও অব্যাহত ছিল যোগী প্রশাসনের বুলডোজার শাসন৷
সব মিলিয়ে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর দিকেই খারাপ ফলের জন্য আঙুল উঠছে বেশি৷ বিজেপির অন্দরের খবর, নতুন সরকার শপথ নেওয়ার পর দলের জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে উত্তরপ্রদেশ-সহ আরও কয়েকটি রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী এবং বিরোধী দলনেতা এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সরিয়ে দিতে পারেন মোদি-শাহ-নাড্ডা জুটি৷
বিজেপির অন্দরের খবর, কেজরিওয়ালের কথা সত্য প্রমাণ করে যোগীর মুখ্যমন্ত্রিত্বই সবার আগে যাবে৷ উত্তর প্রদেশের ৮০টি আসনের সব ক’টিই এবার জয়ের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছিল বিজেপি৷ প্রতি দফা ভোটের শেষেই রাজ্য বিজেপি এবং মুখ্যমন্ত্রী যোগী দলকে আশ্বস্ত করেন, দলের পরিকল্পনা মতোই সব এগিয়েছে৷ কিন্ত্ত ফল হয়েছে উলটো৷ গতবার আশিটির মধ্য বিজেপি পেয়েছিল ৬২টি আসন৷ এবার তা কমে হয়েছে ৩৩৷ অন্যদিকে, প্রধান প্রতিপক্ষ সমাজবাদী পার্টি পেয়েছে ৩৭টি আসন৷ যোগীর বিরুদ্ধে দলের রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বড় অংশের অভিযোগ তিনি এসপি নেতা অখিলেশের নয়া জাত সমীকরণকে উপেক্ষা করেছেন৷ অখিলেশ পিডিএ অর্থাৎ পি-তে পিছড়া বা ওবিসি, ডি-তে দলিত বা তফসিলি জাতি এবং এ-তে অল্পসংখ্যক বা মুসলিম ভোট ব্যাঙ্কের যে নয়া সমীকরণ তৈরি করেন, তার মোকাবিলায় যোগী প্রশাসনিকভাব কোনও পদক্ষেপ করেননি বলে দলে অভিযোগ উঠেছে৷ দলিত বা তফসিলি ভোটের সিংহভাগ সমাজবাদী পার্টির ঝুলিতে গিয়েছে৷ যার মধ্যে মায়াবতীর বিএসপি এবং বিজেপি, উভয় দলের ভোটই আছে৷ অখিলেশের পিডিএ এবারের ভোটে এতটাই সফল যে অযোধ্যা যে লোকসভার অন্তর্গত সেই ফৈজাবাদে বিজেপি হেরে গিয়েছে৷ যেখানে বিজেপির রাম রাজনীতির বিপরীতে অখিলেশের জাতের সমীকরণ বেশি প্রভাব ফেলেছে৷ উত্তরপ্রদেশে দলের তরফে মুখ্যমন্ত্রী যোগী ছাড়াও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, দলীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা প্রমুখ দায়িত্বে ছিলেন৷ তবে মূল দায়িত্ব ছিল যোগীর৷ বিশেষ করে তীব্র গরমের কারণে প্রথম দুই দফায় কম ভোট পড়া সত্ত্বেও তাঁর প্রশাসন বুথে পানীয় জলের ব্যবস্থা এবং মানুষকে বুথমুখী করতে বিশেষ তৎপরতা দেখাননি৷ রাজ্যের প্রায় এক কোটি পরিযায়ী শ্রমিককেও ভোটের সময় এলাকায় ফেরাতে তৎপর হয়নি যোগী প্রশাসন৷
আবার বাংলায় সুকান্ত মজুমদার বা দিলীপ ঘোষরা প্রার্থী হওয়ায় নিজের কেন্দ্র নিয়ে অনেকটা সময় ব্যস্ত থাকতে হয়েছে৷ নিজেদের কেন্দ্রে ভোট মিটতেই অন্য কেন্দ্রে ঝাপিয়েছেন৷ তবে প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্যকেই বেশি গুরুত্ব দেয় কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব৷ তাঁর পছন্দের প্রার্থীদেরই মনোনয়ন দেওয়া হয়৷ যেমন শুভেন্দুর আপত্তিতেই মেদিনীপুর থেকে বর্ধমানে চলে যেতে হয় দিলীপ ঘোষকে৷ মেদিনীপুরে মনোনয়ন দেওয়া হয় বিরোধী দলনেতার অত্যন্ত পছন্দের অগ্নিমিত্রা পলকে প্রার্থী করে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব৷ এই সব ঘটনায় শুভেন্দুর ওপর অমিত শাহ, জে পি নাড্ডা ও বি এল সন্তোষরা চটেছেন বলে জানা গিয়েছে৷ তাই তাঁর ওপরেও কোপ পড়তে পারে বলে সূত্রের খবর৷