• facebook
  • twitter
Sunday, 7 December, 2025

অ্যাসিড আক্রান্ত ছাত্রী ৯৫ শতাংশের বেশি নম্বর নিয়ে শীর্ষে 

চণ্ডীগড়ের ব্লাইন্ড স্কুল

প্রতীকী চিত্র

মনের দৃঢ় সঙ্কল্প এবং পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের এক দৃষ্টান্ত গড়লেন অ্যাসিড হামলার শিকার এক ছাত্রী। চণ্ডীগড়ের সেক্টর ২৬-এর ব্লাইন্ড স্কুলের ছাত্রী কাফি দ্বাদশ শ্রেণীর বোর্ড পরীক্ষায় সবথেকে বেশি নম্বর পেয়ে সবাইকে যেন হতবাক করে দিয়েছে। তার প্রাপ্ত নম্বর  ৯৫.৬ শতাংশ। শৈশব থেকে জীবন যুদ্ধের লড়াই শুরু হলেও হার মানতে চায় না কাফি। অ্যাসিড হামলায় তার দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হয়েছে, তবুও তার স্বপ্নে বেড়ি পরানো যায়নি। এবার তার লক্ষ্য দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে অনার্স পড়ার। তার ভবিষ্যতের স্বপ্ন একজন আইএএস অফিসার হওয়ার। এবার সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই এগিয়ে যেতে চায় এই কিশোরী। 

মাত্র ৩ বছর বয়সে, ২০১১ সালের হোলির সময় অ্যাসিড হামলার শিকার হয়েছিল কাফি। সেই সময় হরিয়ানার হিসার জেলায় বুধানা গ্রামে থাকত সে। সেখানেই ঈর্ষার বলি হয়েছিল সে। তিন প্রতিবেশী মিলে ছোট্ট কাফির উপর অ্যাসিড আক্রমণ করে। পুড়ে গিয়েছিল তার মুখ এবং হাত। নষ্ট হয়ে গিয়েছিল তার দৃষ্টিশক্তি। এক সংবাদমাধ্যমে কাফি জানিয়েছে, দিল্লির এইমসে চিকিৎসাধীন ছিল সে। কিন্তু ডাক্তাররা তাকে বাঁচাতে পারলেও দৃষ্টিশক্তি ফেরাতে পারেননি। কিন্তু এত প্রতিকূলতার মধ্যেও হাল ছাড়েনি কাফি। কাফি আট বছর বয়সে হিসারের  ব্লাইন্ড স্কুলে পড়াশুনো শুরু করে। সেখানে সেখানে দ্বিতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পড়ার পর সুযোগ-সুবিধার অভাবে তার পরিবার চণ্ডীগড়ে চলে আসে। নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে একাগ্রভাবে লড়াই চালিয়ে গিয়েছে সে।  

Advertisement

সম্প্রতি সিবিএসই-এর দ্বাদশ শ্রেণির ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। সেই পরীক্ষাতেই তাক লাগিয়ে দিয়েছে কাফি। ৯৫ শতাংশেরও বেশি নম্বর পেয়ে স্কুলে টপ করেছে সে। প্রথম দিকে শুধু অডিও বুক শুনে পড়াশোনা করেছে কাফি। পরবর্তী সময়ে চণ্ডীগড়ের সেক্টর ২৬-এর বিশেষভাবে সক্ষমদের স্কুলে ভর্তি হয় সে। সেখান থেকেই দশম শ্রেণির পরীক্ষা দেয় এবং ৯৫.২ শতাংশ নম্বর পায়। সেই ফলেরই ধারাবাহিকতা বজায় থাকল দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষাতেও। স্কুলের মধ্যে শীর্ষস্থান দখল করেছে সে।

Advertisement

স্বাভাবিকভাবেই মেয়ের সাফল্যে খুশি কাফির বাবা। কাফির বাবা ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই করেছিলেন। হিসারের জেলা আদালত হামলাকারীদের দুই বছরের কারাদণ্ড দেয়। কিন্তু তার পর থেকেই হামলাকারীরা মুক্ত। প্রশাসনকে জানিয়েও কোনও ফল মেলেনি। ফলে সবসময়ই উদ্বিগ্ন থাকতে হয় কাফির পরিবারকে। কাফির বাবা একটি চুক্তির ভিত্তিতে চণ্ডীগড়ের সচিবালয়ে পিওন হিসেবে কাজ করেন। 

অতীতের সেই ভয়াবহ দিনগুলির স্মৃতি আবছা হয়ে এলেও, ফিরে আসেনি দৃষ্টিশক্তি। যদিও সেই দুঃস্বপ্নের অতীত ভুলতে চায় কাফি। চোখে একরাশ স্বপ্ন নিয়ে ফের জীবনযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে মরিয়া কাফি। 

Advertisement