সংবিধান অনুযায়ী, নাগরিকত্ব আইন রাজ্যের নয়, কেন্দ্রের বিষয়

Written by SNS March 15, 2024 3:03 pm

বিরোধীদের আক্রমণ করে শাহি হুঙ্কার 

দিল্লি, ১৪ মার্চ – লোকসভা ভোটের মুখে দেশজুড়ে লাগু হয়েছে সিএএ। সেই নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে বিরোধীরা।  এই নিয়ে পাল্টা মুখ খুললেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তিনি বৃহস্পতিবার স্পষ্ট জানিয়ে দেন রাজ্যকে সিএএ মানতে হবে।  কারণ সংবিধানে এই ক্ষমতা সংসদকে দেওয়া হয়েছে। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বলবৎ হওয়ার পরেই এই আইন কার্যকর হতে দেওয়া হবে না বলে হুঙ্কার দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একই সুর শোনা যায় তামিলনাড়ু ও কেরলের মুখ্যমন্ত্রীর গলাতেও। তবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রাজ্য নাগরিকত্ব সংক্রান্ত কোনও আইন প্রণয়ন করতে পারে না , সেই অধিকার তাদের নেই।

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন কার্যকর করবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ, কেরল, তামিলনাড়ু সরকার।  এই প্রসঙ্গে অমিত শাহ বলেন, ‘সংবিধানের ১১ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে নাগরিকত্ব সংক্রান্ত যাবতীয় নিয়মকানুন প্রণয়নের ক্ষমতা শুধুমাত্র সংসদের। এটা কেন্দ্রের বিষয়, রাজ্যের নয়।  নাগরিকত্ব সংক্রান্ত আইন এবং সেই আইন কার্যকর করার বিষয় – এই দুটিই সংবিধানের ২৪৬(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে।  নাগরিকত্বের আবেদনে রাজ্যে ভেরিফিকেশন পদ্ধতিতে কেন্দ্রীয় সরকার ইন্টারভিউ নেবে।  আমি জানি নির্বাচনের পর সবাই সহযোগিতা করবে।  এখন তোষণের রাজনীতি চলছে, তাই ভুল তথ্য ছড়াচ্ছে। একজন থাকলে, তাকেও নাগরিকত্ব দেব। ‘

২০১৯ সালে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন আনে কেন্দ্রের মোদি সরকার। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে এই বিলে স্বাক্ষর করেন রাষ্ট্রপতি। উদ্দেশ্য, পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশে নির্যাতিত অ-মুসলিম শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়া। তবে করোনার জেরে তা বলবৎ করা যায়নি প্রায় ৪ বছর। লোকসভা ভোটের আবহে গত সোমবার গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে সিএএ চালু করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। তার পরেই একের পর এক রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা ঘোষণা করেন, তাঁরা তাঁদের রাজ্যে কিছুতেই সিএএ কার্যকর হবে না।  হুঁশিয়ারি দিয়ে মমতা বলেন, অনেকেই সিএএ আসলে ঠিক কী, তা বুঝতে পারছেন না। সেই কারণেই খুশি হচ্ছেন, আনন্দে মাতছেন। গোটাটাই কেন্দ্রের ভোট লুটের ফাঁদ। ফাঁদে পা দিলে বিপদে পড়বেন বাংলার বহু মানুষ। হারাবেন ঘর-বাড়ি।

কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর জানিয়েছেন , ‘ইন্ডিয়া’ জোট ক্ষমতায় এলে এই কালো আইন বাতিল করবে। এই প্রসঙ্গে শাহ বলেন, “তাঁরাও জানেন, ‘ইন্ডিয়া’ জোট ক্ষমতায় আসবে না।”

দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল জানান, এই আইনের বলে দেশে পাকিস্তানিরা নাগরিকত্ব পাবে।  তাদের উন্নয়ন চায় ভারতীয় জনতা পার্টি।  

বিরোধীদের লাগাতার সমালোচনার পর বৃহস্পতিবার এক সর্বভারতীয় সংবাদ সংস্থাকে দীর্ঘ সাক্ষাৎকার দেন অমিত শাহ। সিএএ নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তোষণের রাজনীতি করছেন বলে তোপ দাগেন। তাঁর কথায়, জাতীয় সুরক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে রাজনীতি করছেন। মানুষ কখনোই পাশে থাকবেন না। আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চ্যালেঞ্জ করছি, তিনি দেখান সিএএ-র কোন ধারা নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়।” স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আবারও আশ্বাস, এই আইনের জেরে কেউ নাগরিকত্ব হারাবেন না। কারণ এটা নাগরিকত্ব কাড়ার নয়, নাগরিকত্ব প্রদানের আইন। সংবিধান অনুযায়ী, এই আইন কার্যকর না করার কোনও কারণ নেই।

আলাপচারিতায় শাহ বলেন, ‘বিভিন্ন প্লাটফর্মে কমপক্ষে ৪১বার নিয়ে বিস্তারিত কথা বলেছি। জানিয়েছে যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভয়ের কিছু নেই। কারণ এই আইনে কারও নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার মতো কিছু নেই।’ তিনি জানান, এই আইনের লক্ষ্য হল নির্যাতিত অমুসলিম শরণার্থীদের নাগরিকত্ব প্রদান করা। বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে আসা হিন্দু, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ, পার্শি এবং খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী, যাঁরা ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ সালের আগে ভারতে অনুপ্রবেশ করেছেন।

শাহ জানান, দেশের আইন অনুযায়ী মুসলিমরাও নাগরিকত্বের আবেদন জানাতে পারেন। কিন্তু এই আইন ওই তিনটি দেশে নির্যাতিত সংখ্যলঘুদের জন্য কেবল। সাক্ষাৎকারে সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, দেশজুড়ে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হলে সরকার কি আরও একবার ভাববে? শাহের জবাব,কখনোই  ফেরানো হবে না।

বিরোধীদের সমালোচনার কড়া জবাব দিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সংবিধানের ১৪ নম্বর অনুচ্ছেদে দুটি বিষয় বলা হয়েছে।  ধর্মীয় নিপীড়ণের কারণে অবিভক্ত ভারতের বাংলাদেশ, পাকিস্তান , এবং আফগানিস্তান থেকে আসা শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্যেই এই আইন।’

সিএএ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের হয়েছে। এই প্রসঙ্গে অমিত শাহ বলেন, ‘ন্যায় বিচারের জন্য সুপ্রিম কোর্টে যাওয়া এবং সুপ্রিম কোর্টের স্থগিতাদেশ দেওয়া – এই দুইয়ের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট এই আইনে কোন স্থগিতাদেশ দেয়নি।’

এদিকে সিএএ চালু হওয়ার পর প্রথম ভারতীয় নাগরিকত্ব পেলেন ১৩ পাক শরণার্থী। বৃহস্পতিবার গুজরাটের মোরবির ওই হিন্দু শরণার্থীরা বিধায়ক কান্তি অমৃতার উপস্থিতিতে কালেক্টরের অফিসে নাগরিকত্ব পান।