• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

অন্ধ্রপ্রদেশে বাসে অগ্নিকাণ্ডে মৃত্যুর ঘটনায় শোকপ্রকাশ প্রধানমন্ত্রীর

শুক্রবার ভোরে কুর্নুল জেলার চিন্নাটেকুর গ্রামের কাছে একটি বাইকের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় বাসটির। সংঘর্ষের পর বাসের সামনে আটকে যায় বাইকটি।

ছবি: এএনআই

অন্ধ্রপ্রদেশে চলন্ত বাসে আগুন লেগে অন্তত ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। ৪২ জন যাত্রীকে নিয়ে হায়দরাবাদ থেকে বেঙ্গালুরু যাচ্ছিল বাসটি। শুক্রবার ভোর সাড়ে ৩টে নাগাদ কুর্নুল জেলার চিন্নাটেকুর গ্রামের কাছে একটি বাইকের সঙ্গে সংঘর্ষের পর বাসটিতে আগুন ধরে যায়। ওই সময় যাত্রীরা সকলেই ঘুমোচ্ছিলেন। সেই কারণে বাতানুকুল বাস থেকে তাঁদের অধিকাংশই নামতে পারেননি। শেষ পাওয়া খবর পর্যন্ত ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন আরও বেশ কয়েকজন। হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কী কারণে এই দুর্ঘটনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, অন্ধপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী এন চন্দ্রবাবু নাইডু এই ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করেছেন। জানা গিয়েছে, বাসটি অনেকবার ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন করেছে। এর জন্য শুধু তেলেঙ্গানাতেই বাসটির বিরুদ্ধে ১৬টি চালান কাটা হয়। সেই সব চালানের মোট ২৩ হাজার টাকা জরিমানা মেটানো হয়নি।

পুলিশ সূত্রে খবর, বেসরকারি বাসটি ৪৪ নম্বর জাতীয় সড়ক দিয়ে যাচ্ছিল। শুক্রবার ভোরে কুর্নুল জেলার চিন্নাটেকুর গ্রামের কাছে একটি বাইকের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় বাসটির। সংঘর্ষের পর বাসের সামনে আটকে যায় বাইকটি। এভাবে কিছুটা যাওয়ার পরই বাসটিতে দাউ দাউ করে আগুন ধরে যায়। বিস্ফোরণের শব্দও শোনা যায়। মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে বাসটি পুড়ে ছাই হয়ে যায়। আগুন লাগার ফলে বাতানুকূল ওই বাসে শর্ট সার্কিট হয়। তার ফলেই বাসের স্বয়ংক্রিয় দরজা খোলেনি। এর ফলে বেশিরভাগ যাত্রী বেরোতে পারেননি। ফলে আগুনে ঝলসে মৃত্যু হয় একের পর এক অসহায় যাত্রীর। দমকলের কয়েকটি ইঞ্জিন দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

Advertisement

স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশকর্মীরা মিলে উদ্ধারকাজ চালান। সমাজমাধ্যমে ইতিমধ্যেই ঘটনাস্থলের ছবি ও ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা আবারও দূরপাল্লার বেসরকারি বাসগুলিতে যাত্রী নিরাপত্তা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। এদিকে দুর্ঘটনার পর ১৫ জনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যেও বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ঘটনায় শোকপ্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে মৃতদের পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা এবং আহতদের ৫০ হাজার টাকা করে আর্থিক সাহায্যের কথা ঘোষণা করা হয়েছে। তেলেঙ্গানা সরকার মৃতদের পরিবারপিছু ৫ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছে।

Advertisement

এক্স হ্যান্ডলে প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন, ‘অন্ধ্রপ্রদেশের কুর্নুল জেলায় দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনায় আমি অত্যন্ত শোকাহত। এই কঠিন সময়ে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি এবং তাঁদের পরিবারের প্রতি আমার সমবেদনা রইল। আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি। প্রধানমন্ত্রী জাতীয় তহবিল থেকে নিহতদের আত্মীয়দের জন্য ২ লক্ষ টাকা করে অনুদান দেওয়া হবে। আহতদের ৫০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে।’ এক্স হ্যান্ডলে অন্ধ্রের মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, ‘অন্ধ্রপ্রদেশের কুর্নুলে বাসে আগুন লেগে মৃত্যুর ঘটনা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। আমি মৃতদের পরিবারকে আমার অন্তরের সমবেদনা জানাচ্ছি। আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।’

পুলিশ জানিয়েছে, সংঘর্ষের পর বাইকটি বাসের নীচে আটকে যায়। সেই অবস্থাতেই বেশ কিছুটা এগিয়ে যায় বাসটি। এরপরই বিস্ফোরণ ঘটে। কিছুক্ষণের মধ্যেই আগুনের স্ফুলিঙ্গ গিয়ে পৌঁছোয় বাসের তেলের ট্যাঙ্কারে। তারপরেই বাসটিতে আগুন লেগে যায়। প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশের বক্তব্য, বাইকটি বাসের তেলের ট্যাঙ্কে ধাক্কা মেরেছিল। সংঘর্ষের জেরে তেলের ট্যাঙ্কের ঢাকনা খুলে যায়। ট্যাঙ্কে বিস্ফোরণের জেরে মুহূর্তের মধ্যে আগুন ছড়িয়ে পড়ে বাসটিতে। অন্ধ্রপ্রদেশ সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, দুর্ঘটনার তদন্তে ১৬টি ফরেনসিক দল গঠন করা হয়েছে। পুলিশ, পরিবহন দপ্তরের আধিকারিকদের নিয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটিও গঠন করা হয়েছে। উল্লেখ্য, দিন দশেক আগে রাজস্থানের জয়সলমেরের চলন্ত বাসে আগুন লেগে ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে ২ মে মাসে বাসটি কেনা হয়েছিল। বাসটির কাছে বৈধ ট্যুরিস্ট পারমিট ছিল। ২০৩০ সালের এপ্রিল পর্যন্ত সেটি বৈধ রয়েছে। বাসটির রোড ট্যাক্স, ফিটনেস সার্টিফিকেট সবই নিয়ম অনুযায়ী যাচাই করা হয়েছে। তবে বাসটির বিরুদ্ধে বারবার ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে।

Advertisement