পৃথিবীর মহাসাগরীয় মেরু হিসেবে বিখ্যাত পয়েন্ট নিমো। পৃথিবীর অগম্য স্থানগুলির অন্যতম এই মেরু অঞ্চল দীর্ঘকাল ধরে পরিচিত তার দুর্গমতা এবং বিচ্ছিন্ন এক অঞ্চল হিসেবে। ভারতীয় নৌসেনার নৌ জাহাজ ২ মহিলা নৌ আধিকারিককে নিয়ে এক দুঞসাহসিক অভিযানে সেই পয়েন্ট নিমো অতিক্রম করল। ভারতীয় নৌবাহিনীর এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, লেফটেন্যান্ট কমান্ডার দিলনা কে এবং লেফটেন্যান্ট কমান্ডার রূপা এ, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ পয়েন্ট নিমো অতিক্রম করেছেন।
পয়েন্ট নিমোকে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করা হয়ে আসছে বাতিল মহাকাশযানের কবরস্থান হিসেবে। এই অঞ্চলেই বিলুপ্ত উপগ্রহ এবং মহাকাশ স্টেশনগুলিকে ইচ্ছাকৃতভাবে ভেঙে পড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়, যাতে সেগুলি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে এবং জনবসতি থেকে অনেক দূরে সমুদ্রে গিয়ে পড়ে। এই অঞ্চলে হাজার হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত মানুষের কোনও চিহ্ন নেই। পয়েন্ট নিমোর সবচেয়ে কাছের জনবসতিপূর্ণ এলাকাটি ১ হাজার মাইলেরও বেশি দূরে। তাই স্থলভাগের মানুষের তুলনায় মহাকাশে থাকা মানুষ দুর্গম এই মেরুর অনেক কাছাকাছি থাকে।
১৯৯৯ সালে স্পেনীয় গবেষণা জাহাজ হেস্পেরাইডস প্রথম জাহাজ, যা এই পয়েন্ট নিমোতে যাত্রা শুরু করেছিল। তারপর থেকে খুব কম জাহাজ এই প্রত্যন্ত অঞ্চলে তাদের পথ তৈরি করেছে। আইএনএসভি তারিনী জাহাজ ভারতীয় নৌ সেনার ২ মহিলা আধিকারিককে নিয়ে এই প্রথম পয়েন্ট নিমোর মধ্যে দিয়ে যাত্রা করল। উল্লেখযোগ্য হল, এই যাত্রা সম্পূর্ণ হয়েছে পাল দিয়ে তৈরি জাহাজের সাহায্যে, যা কিনা এই কৃতিত্ব অর্জনের তাতপর্যকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
গোয়ার ডিভারের কুম্ভ শিপইয়ার্ডে তৈরি এই আইএনএসভি তারিনী ২০১৭–র ১৮ ফেব্রুয়ারি ভআরতীয় নৌবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছিল। এটি কাঠ এবং ফাইবারগ্লাস স্যান্ডউইচ হুল দিয়ে তৈরি একটি ক্রুজিং স্লুপ যেটি চরম সামুদ্রিক পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে সক্ষম। পয়েন্ট নিমো প্রশান্ত মহাসাগরের মাঝখানের একটি জায়গার নাম।জানা যায়, এটি দক্ষিণ আমেরিকা অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যবর্তী জায়গায় রয়েছে। তবে আক্ষরিক অর্থে কোনও দেশের মধ্যেই পড়ে না।
ভারতীয় নৌসেনার নৌ জাহাজ ‘তারিণী’ দুই মহিলা নৌ আধিকারিককে নিয়ে বিশ্ব পরিক্রমায় এই পয়েন্ট নিমো অতিক্রম করেছে, যা ভারতীয় মহিলা নৌ সেনাদের মনোবল এবং দুঃসাহসিকতার অন্যতম দৃষ্টান্ত স্থাপন করল।
সাগর পরিক্রমায় ৩০ জানুয়ারি, ২০২৫ এ এক নতুন মাইলফলক ছুঁলেন লেফটেন্যান্ট কমান্ডার রূপা এবং লেফটেন্যান্ট কমান্ডার দিলনা কে। পয়েন্ট নিমো অঞ্চল থেকে জলের নমুনাও সংগ্রহ করেছেন তাঁরা। এই নমুনাগুলি ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ওশানোগ্রাফিতে গবেষণা করে সেখানকার সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য এবং বিশ্বের এই অজানা অ়্ঞ্চলের জলের রাসায়নিক গঠন, প্রশান্ত মহাসাগরের পরিস্থিতি সংক্রান্ত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।