ভারতে ক্যানসার বাড়ার কারণ কী?

২০২৫ সালে ভারতে ক্যান্সার আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াবে ১৫ লক্ষ ৭০ হাজারে। ২০২০ সালে এই সংখ্যাটা ছিল ১৪ লাখ। সম্প্রতি অ্যাপোলো হাসপাতালের তরফে হওয়া একটি সমীক্ষায় এই তথ্য সামনে এসেছে। অন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লুএইচও) ২০২২ সালে বিশ্বজুড়ে নতুন করে প্রায় ২ কোটির বেশি মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন। এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় ১ কোটির কাছাকাছি। ভারতে ২০১২ সালের তুলনায় ২০২২ সালে ক্যান্সার আক্রান্তের সংখ্যা ৩৬ শতাংশ বেড়েছে। ২০৫০ সালের মধ্যে এই সংখ্যা ৭৭ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে। প্রতি ৮ জনের মধ্যে একজন জীবনের কোনও এক পর্যায়ে এসে ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন। ভারতে ক্যান্সারে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধির কারণ নিয়ে একাধিক সমীক্ষা হয়েছে। এর কারণগুলি নিয়ে বর্তমানে আলোচনা করা খুব জরুরি হয়ে পড়েছে।

ক্যান্সার বৃদ্ধির কারণ হিসেবে প্রথমেই ভারতীয়দের খাদ্যাভ্যাসকে দায়ী করেছেন চিকিৎসকরা। ভারতীয়রা প্রক্রিয়াজাত খাবার, মিষ্টি পানীয়, উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবার বেশি পরিমাণে খাচ্ছেন। বিশেষ করে তরুণরা এই সব খাবারের প্রতি বেশি আকৃষ্ট হচ্ছেন। এর ফলে উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের সমস্যা। পাশাপাশি এই খাদ্যাভ্যাসের কারণে ক্যান্সারের ঝুঁকিও বেড়ে গিয়েছে। পঞ্চাশ–ঊর্ধ্ব নারী বা পুরুষের মধ্যে ক্যান্সার হওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। কিন্তু বর্তমানে খাদ্যাভ্যাসের কারণে তা তরুণদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ছে।

রোগ নির্ণয় করতে দেরি হলে ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়। বর্তমানে তরুণ প্রজন্ম নিজের শারীরিক সুস্থতা নিয়ে একেবারেই চিন্তিত নন। কিছু সমস্যা দেখা দিলে তা এড়িয়ে যেতেই পছন্দ করেন। এই প্রবণতা বিপদ বাড়াতে পারে। নিয়মিত চেক আপের মধ্যে থাকলে এবং শারীরিক পরীক্ষা করালে এই বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। তবে ক্যান্সার রোগের ক্ষেত্রে জিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। স্তন, ডিম্বাশয় ও অন্যান্য কান্সার জিনগত হতে পারে। পাশাপাশি তামাক সেবন ও মদ্যপান ক্যান্সারের ঝুঁকি বহুগুণ বাড়াতে সক্ষম। ধূমপান, জর্দা, খৈনি, পানমশলা সহ অন্যান্য তামাকজাত দ্রব্য সেবন করলে ফুসফুস, মুখ, প্যাংক্রিয়াসের কান্সার, ব্লাডার ও মুত্রথলির ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। অন্যদিকে মদ্যপানের কারণে খাদ্যানালি, লিভার, স্তন ক্যান্সার দিন দিন বাড়ছে।


ভারতে বায়ু ও জল দূষণ ক্যান্সার বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। ক্ষতিকারক রাসায়নিক, শিল্প দূষণ এবং কীটনাশকের সংস্পর্শে ফুসফুস, মূত্রাশয় এবং ত্বকের ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। কলকারখানার দূষণের কারণে যাঁরা ধূমপান করেন না তাঁদেরও ফুসফুসে ক্যান্সারের সম্ভাবনা থাকছে। অন্যদিকে, কোনও সংক্রমণ থেকে ক্যান্সার ছড়াতে পারে। ভারতে এই ধরনের ক্যান্সারের প্রবণতা বেশি। জরায়ুমুখের ক্যান্সারের প্রধান কারণ হল হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচপিভি), যেখানে লিভারের ক্যান্সার মূলত হেপাটাইটিস বি এবং সি ভাইরাসের কারণে হয়। এছাড়াও রয়েছে মানসিক চাপ, ওজন বৃদ্ধির মতো সমস্যা।

সরাসরি এর সঙ্গে ক্যান্সারের কোনও যোগসূত্র না পেলেও এর খারাপ প্রভাব অনেক ভারতীয়র শরীরেই পড়ে। ক্যান্সার সেল সেই সব রোগীর শরীরে অজান্তেই বাড়তে থাকে। অন্যদিকে, প্লাস্টিক থেকে সাবধান হতে বলছেন চিকিৎসকরা। প্লাস্টিক থেকে কার্সিনোজেনিক উপাদান শরীরে মিশলে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।