ঋতুস্রাব মানেই ব্যথা, অনেক নারীর কাছেই এটা স্বাভাবিক সত্য। ঋতুস্রাবেরসময় তলপেটে যন্ত্রণা, কোমর ব্যথা, শরীরে অস্বস্থি অনেকেই অনুভব করেন। গরম জলের ব্যাগ বা ব্যথানাশক ওষুধ খেয়ে কোনওমতে কয়েকটা দিন কাটান অনেক মহিলা। কিন্তু প্রতি মাসে অসহ্য যন্ত্রণা, অস্বাভাবিক রক্তপাত বা শরীরের নানা সমস্যা যদি চলতেই থাকে তা হলে সেটাকে আর হালকা ভাবে নেওয়া ঠিক নয়। কারণ, এই সব উপসর্গের আড়ালে লুকিয়ে থাকতে পারে এন্ডোমেট্রিয়োসিস নামের এক একটি গুরুতর রোগ।
চিকিৎসকদের মতে, প্রতি ১০ জন মহিলার মধ্যে প্রায় ১ জন এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। জরায়ুর ভিতরে যে আস্তরণ থাকে, তাকে বলা হয় এন্ডোমেট্রিয়াম।এই স্তরই প্রতি মাসে খসে পড়ে এবং ঋতুস্রাবের মাধ্যমে রক্ত শরীরের বাইরে বেরিয়ে আসে। কিন্তু এন্ডোমেট্রিয়োসিসে এই এন্ডোমেট্রিয়াল টিস্যু জরায়ুর বাইরে গিয়ে জমতে শুরু করে—যেমন ডিম্বাশয়, ফ্যালোপিয়ান টিউব বা পেলভিসের বিভিন্ন অংশে। সেখানে এই টিস্যু মাসিক চক্র অনুযায়ী রক্তপাত ঘটালেও সেই রক্ত শরীরের বাইরে বেরোতে পারে না। ফলে ভেতরে প্রদাহ, স্ফীতি ও তীব্র যন্ত্রণা তৈরি হয়। ধীরে ধীরে এই অবস্থাই নানা জটিল সমস্যার জন্ম দেয়।
Advertisement
এই রোগের সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ হল ঋতুস্রাবের সময় অতিরিক্ত ব্যথা ও রক্তপাত। অনেক ক্ষেত্রে পিরিয়ডের সময় এতটাই রক্তপাত হয় যে, ঘন ঘন স্যানিটারি ন্যাপকিন বদলাতে হয়। হঠাৎ করে যদি এই সমস্যা শুরু হয়, তা হলে সতর্ক হওয়া দরকার।এ ছাড়া যৌনমিলনের সময় বা তার পরে তীব্র ব্যথা অনুভব করাও এন্ডোমেট্রিয়োসিসের একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ। পেলভিক অঞ্চলে ক্ষত বা প্রদাহ থাকলে এই ধরনের যন্ত্রণা হতে পারে।
Advertisement
আর একটি বড় লক্ষণ হল পেলভিস বা তলপেটে দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা।শুধু পিরিয়ডের সময় নয়, অনেকের ক্ষেত্রে পিরিয়ড শেষ হওয়ার পরেও ব্যথা থেকে যায়। কারও কারও আবার মলত্যাগের সময়ে ব্যথা, জ্বালা বা রক্তপাত হতে পারে। কোষ্ঠকাঠিন্য, পেটের সমস্যা বা পেটফাঁপার সমস্যাও দেখা যায়। এই উপসর্গগুলিকে অনেক সময় ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম ভেবে এড়িয়ে যাওয়া হয়, ফলে সঠিক চিকিৎসায় দেরি হয়ে যায়।
এন্ডোমেট্রিয়োসিসে আক্রান্ত অনেক নারী অকারণে ক্লান্তিতে ভোগেন পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম নিয়েও শরীর যেন চনমনে থাকে না। দীর্ঘদিন ধরে শরীরের ভিতরে প্রদাহ ও ব্যথা চলতে থাকলে এরকম ক্লান্তিভাব তৈরি হওয়া স্বাভাবিক। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হল, এই রোগ থেকে বন্ধ্যাত্বের ঝুঁকি বাড়তে পারে। এন্ডোমেট্রিয়াল টিস্যু ডিম্বাশয় ও ফ্যালোপিয়ান টিউবের উপর জমে আঠালো স্তর তৈরি করলে ডিম্বাণুর স্বাভাবিক চলাচল ব্যাহত হয়। ফলে গর্ভধারণে সমস্যা দেখা দেয়।
চিকিৎসকেরা বলছেন, এন্ডোমেট্রিয়োসিসের সবচেয়ে বড় সমস্যা হল রোগ নির্ণয়ে দেরি হওয়া। অনেক ক্ষেত্রেই ৬ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত সময় নষ্ট হয়ে যায়, কারণ উপসর্গগুলিকে সাধারণ পিরিয়ডের যন্ত্রণার সঙ্গে গুলিয়ে ফেলা হয়। সময়মতো চিকিৎসা না হলে বন্ধ্যাত্বের পাশাপাশি আরও জটিল রোগের ঝুঁকি বাড়তে পারে। তাই পিরিয়ডের ব্যথা যদি অসহ্য হয়ে ওঠে, রক্তপাত অস্বাভাবিক হয় বা উপরের উপসর্গগুলি বারবার দেখা দেয়, তবে দেরি না করে অবশ্যই স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।সচেতনতা ও সময়মতো চিকিৎসাই পারে এই রোগের ক্ষতি অনেকটাই কমাতে।
Advertisement



