দিতে পারি মিষ্টি-কুর্তা, কিন্তু ভোটে মোদির হার : মমতা

রাজনীতির আসরে মোদি ও মমতা দুজনেই দুজনকেই মিষ্টিমুখ করান। যেমন ভোটের প্রচারে এসে নরেন্দ্র মোদি তৃণমূল নেত্রীর ‘দোনো হাত মে লাড্ডু’ তুলে দেন। আবার তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বাংলার ভোটে ‘রসগোল্লা’ খাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন বিজেপিকে। কিন্তু তো রাজনীতির বহিরঙ্গের খাদ্য খাদকের বৈরিতা। কিন্তু অন্তরঙ্গে মোদি মমতার সম্পর্কে যে ছিল এমন আন্তরিকতা, তা কে জানত।

Written by SNS Kolkata | April 25, 2019 11:07 am

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও নরেন্দ্র মােদি (File Photo: Twitter/PIB)

রাজনীতির আসরে মোদি ও মমতা দুজনেই দুজনকেই মিষ্টিমুখ করান। যেমন ভোটের প্রচারে এসে নরেন্দ্র মোদি তৃণমূল নেত্রীর ‘দোনো হাত মে লাড্ডু’ তুলে দেন। আবার তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বাংলার ভোটে ‘রসগোল্লা’ খাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন বিজেপিকে। কিন্তু তো রাজনীতির বহিরঙ্গের খাদ্য খাদকের বৈরিতা। কিন্তু অন্তরঙ্গে মোদি মমতার সম্পর্কে যে ছিল এমন আন্তরিকতা, তা কে জানত।

বুধবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক অরাজনৈতিক সাক্ষাৎকারে এই গোপন কথাটি প্রকাশ করে দেন। বলেন, প্রতিবছর ‘মমতা দিদি’ নিজে পছন্দ করে একটি ধুতি-কুর্তা পাঠান। আবার শেখ হাসিনাও বছরে তিন চারবার করে বাংলাদেশের প্রসিদ্ধ মিষ্টি পাঠান। সেটা জানতে পেরে মমতা দিদিও আমাকে বছরে দু’বার মিষ্টি পাঠান।

মোদি-দিদির এই মিষ্টি-মধুর সম্পর্কের কথা সামনে আসতেই বুধবার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে জোর জল্পনা চলে। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র বলেন, তৃণমূল এবং বিজেপি’র মধ্যে যে স্নেহ ভালোবাসার সম্পর্ক রয়েছে সেকথা সামনে চলে এল। নরেন্দ্র মোদি গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর যে মমতা লাল গোলাপ পাঠিয়েছিলেন সেই প্রসঙ্গও তোলেন সোমেন মিত্র।

সুজন চক্রবর্তীও মোদি-মমতার ঝগড়ার নেপথ্যে গোপন সেটিং-এর তত্ত্বের কথা বলেন। অন্যদিকে, রাজনৈতিক সম্প্রীতি না থাকলেও ব্যক্তিগত প্রীতির সম্পর্ক থাকতে আপত্তি কোথায়? এমন মন্তব্য করেছেন বিজেপি প্রার্থী রাহুল সিনহা। মোদির কাছে দিদির উপহার পাঠানো প্রসঙ্গে রাহুল বলেন, রাজনীতিতে মতান্তর হতেই পারে, তাই বলে ব্যক্তিগতভাবে সম্পর্ক খারাপ হবে কেন?

তবে তর্ক বিতর্ক যা-ই হোক না কেন, বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যদের প্রতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আতিথেয়তার নজির কিন্তু আগেও রয়েছে। নবান্নে বিমান বসুসহ বামফ্রন্টের নেতাদের ফিস ফ্রাই খাওয়ানো নিয়ে কম ফিসফাস হয়নি। বিজেপি’র প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়কে ঝালমুড়ি খাওয়ানো নিয়েও মুচমুচে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু তাতেও মমতার আতিথেয়তায় নীতি থেকে সরে আসেননি। বিজেপি সমর্থিত রামনাথ কোবিন্দ যখন রাষ্ট্রপতি হলেন, তখনও তাঁকে নিজের হাতে আঁকা ছবি, নিজের লেখা কবিতার বই উপহার দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এসবই মমতার আতিথেয়তা, আন্তরিকতা।

যে আন্তরিকতার কথা দেশে বিদেশে স্বীকৃত। ২০১২ সালে হিলারি ক্লিনটন এই শহরে এসেছিলেন। মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সাক্ষাতের পর ফিরে গিয়ে একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন হিলারি। সেখানে তিনি জানিয়েছিলেন, ‘থ্যাঙ্ক ইউ ফর ইওর কাইন্ড হসপিটালিটি ডিউরিং মাই ভিজিট’।

বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে আসা দেশ বিদেশের প্রতিনিধি কিংবা চলচ্চিত্র উৎসবের আমন্ত্রিত অতিথি, সকলেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আতিথেয়তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। সেই ট্র্যাডিশন মেনেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতি বছর মিষ্টি কুর্তা উপহার পাঠিয়ে থাকেন নরেন্দ্র মোদিকে। কিন্তু এই অশন-বসনের উপঢৌকন পাঠালেও বাংলা থেকে যে একটাও আসন দিতে চান না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একথা বুধবার নির্বাচনী প্রচারে স্পষ্ট জানিয়ে দেন তৃণমূল নেত্রী।

এদিন তিনি বলেন, বাঙালিরা অতিথিকে দেবতা জ্ঞান করে। তাছাড়া প্রধানমন্ত্রীকে উপহার পাঠানো একটা সৌজন্য। আমাদের বাড়িতে কেউ এলে তাকে আমরা চা-মিষ্টি ইত্যাদি দিয়ে আপ্যায়ন করি। কিন্তু তাই বলে নির্বাচনে একটি আসনও দেব না। মানে উপহার দিলেও, বাংলার ভোটে মোদির হার একথা নিশ্চিত করে দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

পড়ুন । এখনও কুর্তা-পাজামা ও মিষ্টি পাঠান মমতা দিদি : মোদি