রুজিরাকে প্রায় চার ঘন্টা জিজ্ঞাসাবাদ ইডির  

Written by SNS June 8, 2023 5:43 pm

কলকাতা, ৮ জুন – কয়লা পাচার মামলায় বৃহস্পতিবার সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্স-এ হাজিরা দেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী রুজিরা নারুলা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রায় চার ঘণ্টা ধরে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এই   দীর্ঘক্ষণ সময় ধরে একাধিক বিষয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।  এদিন তাঁকে সকাল ১১ টা নাগাদ সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে হাজিরা দিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের প্রায় দেড়ঘন্টা পর বেলা ১২টা ৩০ মিনিট নাগাদ  কালো কাঁচে ঘেরা গাড়ি চড়ে  তিনি সিজিও কমপ্লেক্সে পৌঁছন। বেরিয়ে আসেন বিকেল ৪ টে ২০ মিনিট নাগাদ। তবে তিনি কমপ্লেক্সে ঢোকা বা বেরোনোর সময় সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ খোলেননি। যে ভাবে গাড়ি নিয়ে ঢুকেছিলেন, সেই ভাবেই বেরিয়ে যান।  সূত্রের খবর, এদিন রুজিরা বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগেও আইনজীবীদের সঙ্গে একদফা পরামর্শ করেন। গত সোমবার দুবাই যাওয়ার পথে তাঁকে বিমানবন্দরেই আটকে হাতে নোটিশ ধরিয়ে দেয় ইডি। এই নিয়ে তোলপাড় হয় রাজ্য রাজনীতি।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই কড়া পুলিশি নিরাপত্তায় ঘিরে ফেলা হয় সিজিও কমপ্লেক্স। ইডির দফতরে প্রবেশ নিয়েও কড়াকড়ি করে পুলিশ। ইডির দফতরের বাইরে বিধাননগর থানার পুলিশ মোতায়েন করে ঘিরে দেওয়া হয় ব্যারিকেড দিয়ে। সূত্রের খবর, রুজিরাকে জেরা করতে দিল্লি থেকে ইডির আধিকারিকরা সিজিও কমপ্লেক্সে আসেন। দিল্লি থেকে আসা পঙ্কজ কুমারের নেতৃত্বে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় বলে জানা গেছে। সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার বেলা ১২টা ৫ মিনিট নাগাদ বাড়ি থেকে বের হন রুজিরা। বেলা ১২টা ৩১ মিনিটে সিজিও কমপ্লেক্সে পৌঁছন তিনি। সূত্রের খবর, এদিন কয়লা পাচার মামলায় রুজিরা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য তৈরি ছিল তিনপাতার প্রশ্নাবলী। রুজিরার বিভিন্ন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের লেনদেন সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য খতিয়ে দেখার জন্যই তাঁকে এদিন তলব করা হয় বলে খবর। 

গত সোমবার কলকাতা বিমানবন্দরে আটকানো হয়েছিল রুজিরাকে। সকাল ৭টা নাগাদ দুবাইয়ের বিমান ধরার জন্য দুই সন্তান-সহ কলকাতার বিমানবন্দরে যান তিনি। কিন্তু বিমান ধরার আগেই অভিবাসন দফতরের কর্মীরা রুজিরাকে যেতে বাধা দেন । বেশ কিছু ক্ষণ অপেক্ষা করার পর বিমানবন্দর ছেড়ে বেরিয়ে যান রুজিরা। 

রুজিরাকে বাধা দেওয়ায় সরব হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্রীয় সরকারের ‘অমানবিকতা’ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। তিনি বলেন, বিদেশে যাওয়ার বিষয়ে ইডিকে আগাম জানিয়ে রেখেছিলেন রুজিরা। মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের অনুমতি দেওয়া ছিল। যদি ও কখনও বাইরে যায়, তবে ইডিকে জানাবে। সেই অনুযায়ী ও ইডিকে অনেক দিন আগেই জানিয়েছে। তখন ইডি বলতে পারত ‘তুমি যেও না।’ কিন্তু বিমানবন্দরে গিয়ে নোটিস ধরানো হাতে, যে ৮ তারিখে তুমি এসো- সব অমানবিক জিনিস চলছে।’’

অভিবাসন দফতর সূত্রে জানা যায়, ইডির একটি মামলায় রুজিরার নামে ‘লুক আউট’ নোটিস জারি থাকায় তাঁর বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ রয়েছে। যদিও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠমহল সূত্রে খবর, ইডির ওই মামলায় সুপ্রিম কোর্ট অভিষেক এবং রুজিরাকে রক্ষাকবচ দিয়ে জানিয়েছিল তাঁদের বিদেশযাত্রার ক্ষেত্রে কোনও বাধা নেই।

গত বছর জুন মাসে সন্তানকে নিয়েই ইডি দফতরে হাজিরা দেন রুজিরা। তখন তাঁকে টানা ৬ ঘণ্টা জেরা করা হয়েছিল। কয়লা পাচার মামলায় অভিষেক ও তাঁর স্ত্রী রুজিরাকে বেশ কয়েক দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করেছে ইডি। অতীতে ডায়মন্ড হারবারের তৃণমূল সাংসদ ও তাঁর স্ত্রীকে দিল্লিতেও তলব করেছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। সমন পেয়ে দিল্লিতে ইডির দফতরে হাজিরা দিয়েছিলেন অভিষেক। কিন্তু রাজধানীর ইডি দফতরে হাজিরা দেননি রুজিরা। পরিবর্তে কলকাতার ইডির দফতরে হাজিরা দিয়েছিলেন রুজিরা ।

এদিন সিজিও কমপ্লেক্স ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের কোনও জবাব দেননি তিনি। কালো গাড়ির কাঁচ ছিল নামানো। সবাইকে হাত জোড় করে নমস্কার জানিয়ে বাড়ির দিকে রওনা হন রুজিরা।