সন্ত্রাস থেকে এনআরসি ইস্যুতে বিরোধীদের বিঁধলেন অমিত শাহ

ফের ক্ষমতায় ফেরার ব্যাপারে একশো শতাংশ নিশ্চিত নরেন্দ্র মোদির প্রধান সেনাপতি তথা বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ সোমবার সন্ত্রাস থেকে এনআরসি ইস্যুতে এক হাত নিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধায় সহ বিরোধী দলগুলিকে।

Written by Prashant Das Kolkata | April 23, 2019 9:48 am

অমিত শাহ (Photo: Indrajit Roy/IANS)

ফের ক্ষমতায় ফেরার ব্যাপারে একশো শতাংশ নিশ্চিত নরেন্দ্র মোদির প্রধান সেনাপতি তথা বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ সোমবার সন্ত্রাস থেকে এনআরসি ইস্যুতে এক হাত নিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধায় সহ বিরোধী দলগুলিকে।

এদিন, রাজ্য সফরে এসে নিউটাউনের এক পাঁচতারা হোটেলে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি সাফ জানালেন দিল্লিতে মোদির ফেরা নিশ্চিত। কেননা দু’দফা ভোটের পরই জনাদেশ তাদের দিকেই রয়েছে বলে তারা তাদের দিকেই রয়েছে বলে তারা ইঙ্গিত পেয়েছেন। আর বাংলায় এবার পরে ঢেউ আছড়ে পড়তে চলেছে বলেও এদিন মন্তব্য করেন তিনি।

বাংলায় পদ্মার বিকাশ নিয়ে আত্মবিশ্বাস অমিত শাহ এদিন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন, ‘মানুষ এবার ভোট দিয়েছে বাংলায় বল আনার জন্য। বাংলায় এবার পদ্ম ফুটবেই। দু’দফা ভোটের পরই তারা বুঝতে পারছেন, মোদির পক্ষেই জনদেশ। গত ৫ বছরে মোদি সরকার দেশের সুরক্ষা, অর্থনৈতিক ক্ষেত্র, দারিদ্র দূরীকরণে এত কাজ করেছে, যার উপর ভরসা রেখে মানুষ আগামী ৫ বছরের জন্য ফের মোদিকেই নির্বাচিত করতে চান। আর বাংলার জনতা ঠিক করে নিয়েছে, তৃণমূলকে সরিয়ে বিজেপিকে আনবে।’

প্রসঙ্গত, এদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়কে আক্রমণ করে অমিত শাহ বলেন, প্রথম দু’দফা ভোট গ্রহণের পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুঝে গিয়েছে বাংলায় বিজেপি আসছে তাই তিনি চিৎকার করছেন। হতাশায় কমিশনের সমালোচনা করলেন নির্বাচন কমিশন গোটা ভারতে কাজ করছে। দেশজুড়ে আমরা লড়াই করছি। কিন্তু, মমতা ব্যানার্জি শুধু অভিযোগ করছেন। রিগিং আটকে যাচ্ছে। তাই এত অভিযোগ। মমতাদিদি ভুলে গেছিলেন যখন উনি জিতেছিলেন তখন অনেক বেশি পর্যবেক্ষক পাঠানো হয়েছিল। তিনি এদিন আরও বলেন, মমতা দিদির মুখে গণতন্ত্রের কথা শুনে ভালো লাগে, কারণ উনি শিশুপাল, ত্রিলোচন, রাজেশ, তাপস এদের মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে গণতন্ত্রের কবর দিয়েছেন। তাঁর অভিযোগ, রাজ্যের পুলিশ নেতাদের মতো আচরণ করছেন। এদিন মমতার জনসভার সমালোচনা করে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভাগুলির মঞ্চ দেখানো হয়, ভিড় দেখানো হয় না। কারণ ভিড় দেখাতে গেলে তার আসল ছবি স্পষ্ট হয়ে যাবে। ভিড় হচ্ছে না বলেই মমতাকে হেঁটে প্রচার করতে হচ্ছে।

এদিন সোনার বাংলা গড়ার ডাক দিয়ে বিজেপি সভাপতি দাবি করেন, বাংলার মধ্যে তৃণমূল যে ধরনের পরিবেশ বানিয়েছে তা থেকে মুক্তি দিতে চাই। সরস্বতীপুজো, দুর্গাপুজো ঠিক ভাবে একমাত্র বিজেপিই করতে পারে। গো-পাচার, নিষিদ্ধ ওষুধ রুখতে বিজেপিকেই দরকার। শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দিয়ে সম্মান দিতে একমাত্র বিজেপিই পারে। বাংলার মধ্যে থেকে অনুপ্রবেশকারীদের বের করার কাজ একমাত্র বিজেপি করতে পারে । এদিন বাংলার গ্রামীণ ভোটারদের উদ্দেশ্যে বার্তা দিয়ে তিনি বলেন, একসঙ্গে জোট বেঁধে ভোট দিন, কোনও গুন্ডা কিছু করতে পারবে না। সব জায়গায় সিআরপিএফ জওয়ান আছে। তাই ভয় না পেয়ে ভোট দিন।

এদিন সাংবাদিক বৈঠকে সন্ত্রাসবাদ, এনআরসি এবং নাগরিকত্ব বিল নিয়ে কার্যকর করার কথা বলেন অমিত শাহ। এদিন তিনি স্পষ্ট করে দেন, দেশের সুরক্ষা কাদের হাতে তা ঠিক হবে এই ভোটের মাধ্যমে। সন্ত্রাস দমনে জিরো টলারেন্স নীতি নিয়েছে কেন্দ্র। তাই দেশবাসী ঠিক করবেন কারা আসবে দেশ পরিচালনার ক্ষমতায়। এনআরসি ইস্যুতে তাঁর দাবি, সমগ্র দেশে এনআরসি হবে। নাগরিকত্ব বিলের মাধ্যমে প্রতিবেশী দেশের হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ, জৈন সহ যেসব সংখ্যালঘু এসেছেন তাদের ভাতের নাগরিক সম্মান সুনিশ্চিত করা হবে তারপর প্রয়োগ করা হবে এনআরসি। এতে বৈধ শরণার্থীদের ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই। তবে অনুপ্রবেশকারীদের হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, আর বেশি দিন নেই। অনুপ্রবেশকারীদের দেশ থেকে বার করে দেওয়া হবে।

এদিন ৩৭০ এবং ৩৫-এ ধারা সংশোধনের বিষয়টি নিয়ে ফের অমিত শাহ বলেন, ভবিষ্যৎ কর্মসূচি ঠিক করেই ইস্তেহার বানিয়েছে বিজেপি। কিন্তু বিরোধীদের কারও ইস্তেহারে কোনও দিশা নেই। কাজের নয়, ইস্তেহার তৈরি হয়েছে কুর্সিতে বসার লড়াইয়ে টিকে থাকার জন্য। তারা দেশের মানুষকে বলেছেন, ২০২২-এর ভিতরে এক ব্যক্তিও এমন থাকবেন না যার কাছে মাথার ছাদ, গ্যাস, পানীয় জল, বিদ্যুৎ থাকবে না। প্রসঙ্গত, এদিন দলের সভাপতির সাংবাদিক সম্মেলন মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন, রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, কেন্দ্রীয় নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়, রাহুল সিনহা, মুকুল রায় সহ প্রমুখ। এদিন সাধ্বী প্রজ্ঞা ইস্যুতে বিরোধীদের একহাত নিয়ে অমিত শাহ বলেন, আদালতে কোন দোষ প্রমাণ হয়নি। স্বামী অসীমানন্দ ও অন্যদের মিথ্যা অভিযুক্ত বানানো হয়েছে। তার প্রশ্ন, সমঝোতা বিস্ফোরণ ঘটানো দোষীরা কোথায়? কে ছাড়ল? দেশের জনতা এটা জানতে চায়। নরেন্দ্র মোদির এরাজ্য থেকে লড়ার কোনও পরিকল্পনা আছে কিনা জানতে চাইলে অমিত শাহ বলেন, এখনও তাদের এরকম কিছু পরিকল্পনা নেই। আর তাদের পূর্ণ সরকার না হলে মমতার সাথে জোটের কোন পরিকল্পনা আছে কিনা প্রশ্নে তিনি জানান কোন প্রশ্নই ওঠে না।