কেরলে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে নিপা, কেন্দ্রের তরফে পাঠানো হল বিশেষ প্রতিনিধি দল 

Written by SNS September 13, 2023 3:31 pm

তিরুঅনন্তপুরম, ১৩ সেপ্টেম্বর –  নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কেরালার কোঝিকোড়ের হাসপাতালে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মাণ্ডব্য। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও ২ জনের শরীরেও মিলেছে নিপা ভাইরাসের জীবাণু। নিপা ভাইরাসে কেরালায় দুই ব্যক্তির মৃত্যুর পর নড়েচড়ে বসেছে স্বাস্থ্যমন্ত্রক। এই ঘটনার পর কেরালায় স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের এক প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছে স্বাস্থ্যমন্ত্রক।স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মীদেরও তাদের এলাকায় কড়া নজরদারি চালানোর জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সংক্রমণ রুখতে ওই জেলার সাতটি গ্রামকে কনটেনমেন্ট জ়োন বলে ঘোষণা করা হয়েছে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বেশ কয়েকটি স্কুল। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে স্বাস্থ্যমন্ত্রক কোঝিকোড় মেডিক্যাল কলেজে নিপা ভাইরাস সংক্রান্ত একটি বিশেষ পরিষেবা চালু করার নির্দেশ দিয়েছে।

সূত্রের খবর, অজানা জ্বরে আক্রান্ত হয়ে কেরালার কোঝিকোড়ের বেসরকারি হাসপাতালে গত ১১ সেপ্টেম্বর এবং ৩০ অগাস্ট ২ ব্যক্তির মৃত্যু হয়। সেই সঙ্গে ৩ শিশু-সহ মোট ৪ জন জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। চিকিৎসাধীন চার জনের রক্তের নমুনা পাঠানো হয়েছিল পুনের ন্যাশনাল ইনিস্টটিউট অফ ভাইরোলজিতে। মঙ্গলবার পাওয়া রিপোর্টে ১ শিশু সহ ২ জনের শরীরে নিপা ভাইরাসের উপস্থিতির প্রমাণ মিলেছে। এর মধ্যে একজন গত ১১ সেপ্টেম্বর প্রয়াত ব্যক্তির আত্মীয়। মৃত ওই ব্যক্তিও নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

রাজ্য সরকারের তরফেও নিপা সতর্কতা জারি করা হয়েছে কোঝিকোড়ে। পুরো পরিস্থিতির উপর নজরদারি চালানো হচ্ছে। কেরালার স্বাস্থ্য দফতর বর্তমানে যারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, তাদের সংস্পর্শে এসেছে এমন মানুষদের খুঁজে বের করার জন্য তল্লাশি চালাচ্ছে। জ্বর হলেই সকলকে নিপা টেস্ট করার জন্য রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের পক্ষ থেকে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। কোঝিকোড়ে নিপা ভাইরাসের আতঙ্ক এই প্রথম নয়। ২০১৮ এবং ২০২১ সালেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। প্রথমবার মোট ২৩ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তারমধ্যে মৃত্যু হয়েছিল ১৮ জনের। এবার নতুন করে আতঙ্ক ছড়াল। প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, কোজ়িকোড়ের বাসিন্দা নিপা ভাইরাস আক্রান্তদের খোঁজ মেলার পরই আতানচেরি, মারুথনকারা, তিরুভাল্লুর, কুট্টিভাদি, কাভাক্কোডি, ভিল্লাপালি ও কাভিলামপারা গ্রাম পঞ্চায়েতকে কন্টেনমেন্ট জ়োন হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে। আপাতত রাজ্যবাসীকে মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সরকারের তরফে রাজ্যবাসীকে আতঙ্কিত না হওয়ার এবং সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

পুণের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব ভাইরোলজির একটি দলও ইতিমধ্যেই কেরলে পৌঁছে গিয়েছে এবং কোঝিকোড় মেডিক্যাল কলেজে মোবাইল ল্যাব বসিয়েছে নিপা ভাইরাসের পরীক্ষা করার জন্য। বাদুড় নিয়ে সমীক্ষাও করা হবে বলে জানানো হয়েছে। বুধবার কেরল বিধানসভায় রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বীণা জর্জ বলেন, “নিপা ভাইরাসে চারজন আক্রান্তের খোঁজ মেলার পর থেকেই সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এটা নিপা ভাইরাসের বাংলাদেশ ভ্যারিয়েন্ট যা মানবদেহ থেকে অপর মানবদেহে সংক্রমিত হয়। এই স্ট্রেনের সংক্রমণের হার কম হলেও, এতে মৃত্যুর হার অনেক বেশি।”

নিপা ভাইরাসে আক্রান্তদের নমুনা সংগ্রহ এবং তা পরীক্ষা করে দেখার জন্য কোঝিকোড় মেডিক্যাল কলেজে একটি ভ্রাম্যমান পরীক্ষাগার তৈরি করছে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ভাইরোলজি। বুধবার সকালেই এনআইভি-র একটি দল পুণে থেকে কোঝিকোড়ে পৌঁছয়। মন্ত্রী জানিয়েছেন, বিশেষজ্ঞদের একটি দল চেন্নাই থেকে বুধবারই কেরলে এসেছেন। এর পাশাপাশি ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চও নিপা আক্রান্তদের রোগ প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি দিয়ে সাহায্য করতে চেয়েছে বলে বিধানসভায় জানিয়েছেন সে রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

উল্লেখ্য, মূলত একধরনের বাদুড় থেকে এই সংক্রমণ ছড়ায়। সাধারণত এই মারণ ভাইরাসে পশুরাই আক্রান্ত হলেও, সাধারণ মানুষও আক্রান্ত হতে পারে এবং তা প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে। গোটা পরিস্থিতিতে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রাজ্যবাসীকে অনুরোধ করেছেন কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। মঙ্গলবারই তিনি বলেন, ‘‘এখনই আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। মৃত দু’জনের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের সন্ধান মিলেছে। তাঁদের চিকিৎসাও শুরু হয়েছে। এই পরিস্থিতির মোকাবিলায় সতর্ক থাকাটা জরুরি। এই ভাইরাসের মোকাবিলায় স্বাস্থ্য দফতর যে রূপরেখা তৈরি করেছে, তা মেনে চলার জন্য সকলের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি।’’