সংসদীয় রাজনীতিতে আদবানি জমানা কি শেষ? প্রশ্ন অনেকেরই

বিজেপির এক মোদি ঘনিষ্ঠ জানিয়েছেন, আদবানি নিজেকে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরিয়ে নিয়েছেন, তার অর্থ হল তিনি সক্রিয় রাজনীতি থেকে অবসর নিয়েছেন।

Written by SNS March 23, 2019 11:47 am

লালকৃষ্ণ আদবানি (ছবি- Getty Images)

গুজরাতের গান্ধীনগরে বিজেপির সভাপতি অমিত শাহের ভোটে দাঁড়ানো নিয়ে অনেক নেতিবাচক মন্তব্য শোনা যাচ্ছিল, কারণ এই কেন্দ্রে হামেশাই বিজেপির হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন বিজেপির এককালের লৌহমানব ও অবিসংবাদী নেতা এল কে আদবানি। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিরাট জয় পেয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন নরেন্দ্র মোদি এবং তখন থেকেই বিজেপির এই বর্ষীয়ান নেতাকে কোনও দায়িত্বপূর্ণ পদ দেওয়া হয়নি। তখন থেকেই খোদ বিজেপির অন্দরেই কানাঘুষো শুরু হয়ে যায়, তবে কি দলের মধ্যেই আদবানিকে কোণঠাসা করার কৌশল শুরু হয়ে গেছে? রবিবার বিজেপি যে তাদের ১৮৪জন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে, তাতেও আদবানির নাম নেই। তাঁর জায়গায় দলের সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ গান্ধীনগর থেকে প্রার্থী হয়েছেন। তবে বিজেপির অভ্যন্তরীণ সূত্রের খবর, ৯১ বছরের আদবানি নিজেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করার সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন দলীয় নেতৃত্বকে। তাঁর সিদ্ধান্ত জানার পরেই বিজেপি নেতৃত্ব গান্ধীনগর থেকে অমিত শাহের নাম ঘোষণা করে। কিন্তু এ তথ্য মানতে নারাজ বিজেপি নেতৃত্বের একাংশ। এবিষয়ে যেহেতু আদবানি মুখ খোলেননি তাই রহস্য রয়েই গেল যে আদবানি নিজে সরে দাঁড়িয়েছেন , না তাঁকে দল টিকিট দেয়নি। কারন ৭৫ বছর বয়স্কদের অনেককেই এবার টিকিট দেয়নি দল, যার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ নাম হল গড়েওয়ালের সংসদ সদস্য ৮৪ বছরের বি সি খান্দুরি, নৈনিতালের সাংসদ ভগত সিং কোশিয়ারি, যাঁর বয়স ৭৬ বছর, গুয়াহাটির সাংসদ ৭৯ বছরের বিজয়া চক্রবর্তী এবং অবশ্যই ৯১ বছরের এল কে আদবানি। তবে বিজেপির এক মোদি ঘনিষ্ঠ জানিয়েছেন, আদবানি নিজেকে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরিয়ে নিয়েছেন, তার অর্থ হল তিনি সক্রিয় রাজনীতি থেকে অবসর নিয়েছেন। আদবানিকে রাজ্যসভায় পাঠাবারও কোনও রকম চিন্তাভাবনা নেই দলের।

তবে কি আদবানির ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করার সঙ্গে সঙ্গেই শেষ হয়ে গেল বিজেপিতে তাঁর এক কীর্তিমান অধ্যায়? এ প্রশ্ন বিজেপির অনেকেরই। ১৯৯০ সালে তাঁর রথযাত্রাকে ঘিরে সারা দেশে রামমন্দির নির্মাণের দাবিতে যে ঝড় উঠেছিল, তারই পরিণতি হল আজ বিজেপির অভাবনীয় উত্থান। চারবার রাজ্যসভায় মনোনীত হয়েছেন আদবানি এবং ৭ বার জিতেছেন লোকসভা নির্বাচনে। তিনি দেশের উপপ্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন অটলবিহারী বাজপেয়ীর প্রধানমন্ত্রিত্বের কালে , তার আগে সামলেছেন দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। একাধিকবার নির্বাচিত হয়েছেন বিজেপির সভাপতি পদে। আদবানি ছিলেন ভারতের প্রথম ‘হিন্দু হৃদয় সম্রাট’ এবং তাঁর কট্টরবাদী মনোভাবের জন্য তিনি প্রিয়পাত্র হতে পেরেছিলেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘের (আরএসএস)। বাজপেয়ীর সঙ্গে তাঁর তফাত ছিল বহু জায়গায়। তবে আদবানি ছিলেন মূলত সংগঠনের নেতা। তাঁর ছত্রচ্ছায়ায় একাধিক বিজেপি নেতার উত্থান ঘটেছে, যাদের মধ্যে প্রমুখ হলেন স্বয়ং নরেন্দ্র মোদি। একাধিক সূত্রের খবর, গুজরাতে ২০০২ সালে ভয়াবহ দাঙ্গার পর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে অপসারণের হাত থেকে নরেন্দ্র মোদিকে বাঁচিয়েছিলেন তাঁর তদানীন্তন গুরু লালকৃষ্ণ আদবানি। ২০১৪ সালে সেই মোদি যখন প্রধানমন্ত্রী পদে আসীন হলেন, তখন বিজেপি মুরলি মনোহর যোশী সহ আদবানিকে বিজেপির উপদেষ্টামন্ডলীতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়, যার পোশাকি নাম মার্গদর্শক মন্ডল। আদবানি ঘনিষ্ঠ নেতাদের দাবি, আসলে এভাবেই রাজনৈতিক নির্বাসনে পাঠানো হল আদবানিকে।