তেহরান , ১৬ অক্টোবর – কুপিয়ে খুন করা হল ইরানের খ্যতনামা পরিচালক দারিউশ মেহরজুই ও তাঁর স্ত্রীকে । তেহরানের কাছে তাঁদের নিজেদের বাড়িতে পরিচালক ও তাঁর স্ত্রীকে ছুরিকাঘাত করে মেরে ফেলে দুষ্কৃতীরা। সেদেশের একজন প্রাদেশিক প্রধান বিচারপতি জানিয়েছেন, মেহেরজুই ও তাঁর স্ত্রী, ওয়াহিদেহ মোহাম্মদিফার ঘাড়ে একাধিক ছুরিকাঘাতে চিহ্ন মিলেছে। আততায়ীর পরিচয় এখনও জানা যায়নি। বিচারবিভাগীয় কর্তা হোসেন ফাজ়েলি জানিয়েছেন, মেহরজুই ও তাঁর স্ত্রী বাহিদে মোহাম্মাদিফারের ঘাড়ে ছুরির ক্ষত মিলেছে।
ফাজ়েলি জানান, তেহরান থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে এক শহরতলিতে মেহরজুইয়ের বাড়ি। তেহরানের কাছে আলবোর্জ প্রদেশের প্রধান বিচারপতি হোসেন ফাজেলি-হরিকান্দির মতে, মেহেরজুই তাঁর মেয়ে মোনাকে স্থানীয় সময় রাত ৯টায় একটি টেক্সট মেসেজ পাঠিয়েছিলেন। তাঁকে কারাজের পশ্চিমে তাঁদের বাড়িতে রাতের খাবারের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। রাতে তাঁর মেয়ে মোনা মেহরজুই বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে বাড়ি ঢুকে দেখেন দম্পতির রক্তাক্ত দেহ পড়ে রয়েছে। সম্প্রতি পরিচালক-পত্নী সোশ্যাল মিডিয়াতেও জানিয়েছিলেন, তাঁদের ছুরি মারার হুমকি দেওয়া হয়েছে। যদিও পুলিশ জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত কে বা কারা খুন করে থাকতে পারে, কিংবা কেন খুন করা হয়েছে, সে সম্পর্কে কোন হদিশ মেলেনি। পুলিশ তদন্তে নেমেছে ।মেহরজুইয়ের বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর । ১৯৬০-এর দশকে লস অ্যাঞ্জেলেসে ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া থেকে ‘সিনেমা প্রোগ্রাম’ নিয়ে পাশ করেন তিনি। তার পর দেশে ফেরার পর তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। ইরানের আধুনিক চলচ্চিত্রের অন্যতম স্রষ্টা বলা হয় তাঁকে।
Advertisement
ইরান পুলিশ জানিয়েছে, ‘ঘটনাস্থলে অপরাধীর জোর করে ঢোকার কোনও চিহ্ন মেলেনি। বাড়ির দরজারও কোনও ক্ষতি হয়নি। তবে ঘটনাস্থলে অপরাধীর কিছু চিহ্ন মিলেছে’। ইরান পুলিশে সদর দফতরের তরফে এক সংবাদ সংস্থা-কে জানানো হয়েছে, ঘটনায় ৪ জনকে চিহ্নিত করা গিয়েছে। দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যদিও আততায়ীদের পরিচয় এখনও জানা যায়নি। গত রবিবার ইরানের ইতেমাদ পত্রিকায় পরিচালকের স্ত্রীর একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়, সেখানে তিনি বলেছিলেন, তাঁদের খুনের হুমকি দেওয়া হয়েছে এবং তাঁদের বাড়িতে চুরিও হয়েছে। যদিও তদন্তে জানা গিয়েছে মেহেরজুইয়ের বাড়িতে অবৈধ প্রবেশ এবং তাদের জিনিসপত্র চুরির বিষয়ে কোনও অভিযোগ দায়ের করা হয়নি।
Advertisement
একসময় নিজের শিল্পের মধ্যে দিয়ে বারবার শাসকের বিরোধিতা করেছিলেন দারিউশ মেহরজুই। প্রশ্ন উঠছে, তবে কি শাসক বিরোধী ইস্যুকে হাতিয়ার করার কারণেই প্রাণ হারাতে হল পরিচালককে? যদিও এই হত্যার কারণ এখনও প্রকাশ্যে আসেনি।
প্রসঙ্গত, ৮৩ বছর বয়সী ইরানি পরিচালক দারিউশ মেহরজুই ১৯৬৯-এ ‘দ্য কাউ’ ছবিটি বানিয়ে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পান। আন্দোলনের প্রথম ছবিগুলির মধ্যে একটি। ১৯৭৯ সালে ইসলামী বিপ্লবের প্রেক্ষাপটে ইরান ত্যাগ করার আগে ‘মিস্টার গিলিবল’ (১৯৭০), দ্য সাইকেল (১৯৭৭) সহ বেশ কয়েকটি খ্যতনামা ছবি বানিয়েছিলেন। ১৯৮০ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত তিনি ফ্রান্সে থাকতেন। যেখানে তিনি জার্নি টু দ্য ল্যান্ড অফ রিমবড (১৯৮৩) ডকুমেন্টারিতে কাজ করেছিলেন। পরে দেশে ফিরে, তিনি ‘দ্য টেন্যান্টস’ (১৯৮৭) বানিয়ে বক্স অফিসে সফল হন।
ইরানের এক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মেহেরজুই বলেছিলেন, ‘আমি কোনো নির্দিষ্ট মতাদর্শ বা দৃষ্টিভঙ্গি প্রচার করার জন্য সরাসরি রাজনৈতিক ছবি করি না। তবে সব কিছুই রাজনৈতিক’। তাঁর কথায় মেহেরজুইয়ের কাছে সিনেমা ছিল ‘কবিতার মত, যেটা কারো পক্ষ নিতে পারে না’।
Advertisement



