ভয় পেয়েছেন দিদি : মোদি

উত্তর-পূর্ব ভারত থেকে যত বেশি সংখ্যক আসন পাওয়া যায়, ততই বিজেপি’র মঙ্গল। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে বাংলাকে পাখির চোখ করে এগােতে চাইছে বিজেপি। সেকারণে ঘন ঘন নির্বাচনী প্রচারে রাজ্যে আসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি।

Written by SNS April 8, 2019 7:25 am

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Photo: IANS)

নিজস্ব প্রতিনিধি – উত্তর-পূর্ব ভারত থেকে যত বেশি সংখ্যক আসন পাওয়া যায়, ততই বিজেপি’র মঙ্গল। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে বাংলাকে পাখির চোখ করে এগােতে চাইছে বিজেপি। সেকারণে ঘন ঘন নির্বাচনী প্রচারে রাজ্যে আসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি। রবিবার কোচবিহার রাসমেলা মাঠে দাড়িয়ে ফের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তীব্র আক্রমণ করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি। ক্রমশ প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের ঝাঁঝ বাড়ছে নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে। এদিন প্রধানমন্ত্রী তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত সরকারকে নিশানা বানিয়ে আগাগােড়া বক্তব্য রেখে গিয়েছেন। ফের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বাংলার উন্নয়ন পথে স্পিড বেকার বলেও অভিহিত করেছেন মােদি। সেই সঙ্গে তাঁর নেতৃত্বে দেশ কতটা শক্তিশালী হয়েছে তাও বােঝানাের আপ্রাণ চেষ্টা করে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। শক্তিশালী ভারতবর্ষ একমাত্র বিজেপিই পারে উপহার দিতে। পাকিস্তানে ঢুকে গিয়ে সন্ত্রাস দমনে তাঁর সরকার যে পদক্ষেপ নিয়েছে তাও বিশেষভাবে তুলে ধরেন এদিনের নির্বাচনী জনসভা থেকে। আগে যখন সন্ত্রাসবাদের মতাে ঘটনা ঘটত, তখন সন্ত্রাস দমনে কেন্দ্রে যে সরকার ছিল সেই সরকারের পা কাঁপত বলেও মােদি উল্লেখ করেছেন তাঁর বক্তব্যে। মােদির কথায়, গরিবদের ঘরে গ্যাসে রান্না হচ্ছে, আগে তা ভাবা যেত না। এখন তা সম্ভব হয়েছে। ঠিক যেমনভাবে সম্ভব হয়েছে বাড়িতে ঢুকে সন্ত্রাসবাদীদের খতম করা। আসলে এইসব অসম্ভব সম্ভব হয়েছে আপনাদের জন্য। আপনারা বিজেপি’কে ভােট দিয়েছেন বলেই সাহস সঞ্চয় করা সম্ভব হয়েছে। সেই সঙ্গে তাঁর অভিযােগ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বাংলা ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছে। যে স্বপ্নকে সামনে রেখে মানুষ বাংলায় পরিবর্তন এনেছিল, সেই স্বপ্ন ভেঙে খান খান হয়ে গেছে বলেও মােদি মন্তব্য করেন। বর্তমান বাংলা মােদির চোখে ঠিক কেমন তা তিনি তুলে ধরেছেন তাঁর বক্তব্যে। এদিন নরেন্দ্র মােদি অভিযােগ করেন, পিসি-ভাইপাের রাজত্বে বাংলা অনুপ্রবেশকারীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। বিজেপি ক্রমশ শক্তিশালী হওয়ায় ‘দিদির ঘুম উবে গিয়েছে’ বলেও মােদি মন্তব্য করেন। এদিনের সভার ভিড় দেখে রীতিমত আপ্লুত প্রধানমন্ত্রী। এদিন তিনি অভিযােগ করেন, ‘সাধারণ মানুষকে সভায় আসতে বাধা দেওয়া হয়েছে। এই বাধা উপেক্ষা করে তবু এত মানুষ এসেছেন, যা দেখে আমি অভিভূত। যে জায়গা এখানে সভা করার জন্য দেওয়া হয়েছে তাতে বেশি লােক এখানে ধরবে না। মানুষ বিজেপি’কে ভালােবাসে। সেই ভালােবাসা দিদি কখনােই রুখতে পারবেন না। বাধা সত্ত্বেও এত মানুষ এসেছেন, এটাই দিদির পরাজয়ের পরিচয়। এভাবে বাচ্চাদের মতাে আচরণ করে নির্বাচনে জেতা যায় না’। মােদির এই মন্তব্যে বিজেপি নেতা কর্মীরা রীতিমতই খুশি হন। এদিন মােদি তাঁর বক্তব্যের সুর ক্রমশই চড়িয়েছেন। নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তে অখুশি হয়ে মুখ্যমন্ত্রী চিঠি লিখেছিলেন কমিশনকে। এদিন প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনসমর্থন চলে গেলে কি হয় তা দিদির আচরণ দেখেই বােঝা যাচ্ছে। নিজের অফিসারদের ওপর রাগ দেখাচ্ছেন। আসলে বিজেপি’র পক্ষেই জনসমর্থন দিদিকে আয়না দেখিয়েছে। তাই রাজনৈতিকভাবে প্রচণ্ড ভয় পেয়ে গেছেন তিনি। দিদি আমাকেও ছাড়ছেন না। অনেক কটু কথা বলছেন।

‘মা মাটি মানুষ’ স্লোগানকে সামনে রেখে যে সরকার বাংলার বুকে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তা নিয়েও তীব্র কটাক্ষ করেছেন মােদি। তাঁর অভিযােগ, দিদি মাটির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। সেই সঙ্গে ভােটব্যাঙ্কের স্বার্থে দিদি অনুপ্রবেশকারীদের রক্ষা করার চেষ্টা করছেন। তাঁর প্রতি মানুষের যে আস্থা ছিল সেই আস্থা ভরসা ভেঙে দিয়েছে। যখন ক্ষমতায় এসেছিলেন, তখন কেউ ভাবতে পারেননি দিদি এরকম কাজ করবেন। বাম সরকারের সব অনৈতিক কাজকে সমর্থন করেছেন। বাংলাতে যা হচ্ছে ত্রিপুরাতেও বাম সরকার এরকম করত। কেন পরীক্ষায় পাস করার সত্ত্বেও চাকরিতে স্পিড বেকার লাগানাে হয়েছে? দিদির আসল চেহারা দুনিয়ার সামনে আনতে হবে। এখানেই থেমে থাকেননি প্রধানমন্ত্রী। ‘পশ্চিমবঙ্গ বুয়া-ভাতিজা জুটি রাজ্যকে গুণ্ডা-তােলাবাজদের গড় বানাতে উঠে পড়ে লেগেছে। বাংলা এখন অনুপ্রবেশকারীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে’। তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত রাজ্য সরকারকে কটাক্ষ করেছেন মােদি এই বলে। জাতীয় রাজনীতির পরিস্থিতির পর্যালােচনা করতে গিয়ে মমতার ব্রিগেড় সমাবেশকেও মােদি নিশানা বানিয়েছেন। সম্প্রতি ওমর আবদুল্লা জম্মু-কাশ্মীরের জন্য আলাদা প্রধানমন্ত্রীর দাবি তুলেছিলেন। বিজেপি-বিরােধী জোটকে নিশানা করতে গিয়ে মমতাকে কাঠগড়ায় তুলে মােদি অভিযােগ করেন, দিদি দেশে দু’জন প্রধানমন্ত্রী বানানাের আওয়াজ তুলেছেন। একজন ভারতে আর একজন জম্মু কাশ্মীরে। মােদির প্রশ্ন তাহলে কি ভারত দু’জন প্রধানমন্ত্রী চাইবে? আসলে ‘দিদি’ ভােটব্যাঙ্কের রাজনীতির জন্য ভারত ভেঙে দেওয়ার সমর্থকদের হয়ে কথা বলছেন। মমতার সমালােচনায় মুখর মােদি কিন্তু দেশকে আশ্বস্ত করছেন এই বলে যে, যতই জোট হােক দিল্লির মসনদ থেকে তাঁকে কেউ সরাতে পারবে না। দেশের মানুষের উদ্দেশে মােদি বলেন, যখন থেকে দিল্লিতে এই চৌকিদারকে বসিয়েছেন, তবে থেকে আমাদের কেউ হুমকি দেওয়ার সাহস দেখায় না। দিদি দেখে নিন দিল্লিতে বসা লােকেরাও দেখে নিন আজকের জনসমুদ্র। বাংলার মানুষকে বিজেপি প্রার্থীদের ভােট দেওয়ার আবেদন জানিয়ে মােদি বলেন, আপনাদের প্রতিটি ভােট চৌকিদারকে শক্তিশালী করবে। বিজেপিকে দেওয়া প্রতিটি ভােট চৌকিদারের খাতায় যাবে। কাউকে ভয় পাবেন না।

এদিন ফের নারদ এবং সারদা ইস্যুকে খুঁচিয়ে তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী। এই দুর্নীতির প্রসঙ্গ টেনে মােদি বলেন, সারা দেশে মা সারদা পুজো পায়। সেখানে দিদি বাংলাকে সারদা কেলেঙ্কারি উপহার দিয়েছেন। নারদ মুনির পরিচয় যেমন রয়েছে ত্রিলােকে, তেমনি বাংলার রাজনীতি কলঙ্কিত হয়েছে সারদা দুর্নীতিকে সামনে রেখে। এই প্রসঙ্গে মােদি বলেন, ইংরেজিতে রােজ বলতে আগে ফুল বুঝতেন, এখন রােজ বলতে রােজভ্যালি বােঝেন। এই রােজ এখন কাটা হয়ে বিধে রয়েছে মানুষের মনে। এরপরই মােদি সাধারণ মানুষকে আশ্বস্ত করেন এই বলে, আপনারা নিশ্চিন্তে থাকুন। চিটফান্ডের টাকা যার পকেটে গিয়ে থাকুক না কেন, এই চৌকিদার বের করে আনবে। চৌকিদার সরকারে এলে সব অনিয়ম বন্ধ হয়ে যাবে। নাগরিকত্ব সংশােধনী বিলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাধার পাহাড় বলেও এদিন অভিযােগ করেন প্রধানমন্ত্রী।