শিকড়ের টান বুনে চলেছেন দেবশ্রী

Written by SNS August 31, 2022 5:12 pm

কলকাতা, ৩১ আগস্ট — বহুবছর আগে দেশ থেকে বিদেশে পাড়ি। একটা সময় গান ঘিরেই স্বপ্ন ছিল যে মেয়ের, সেই মেয়েকে চেনা জগত ছেড়ে কর্মসূত্রে এবং বৈবাহিক সূত্রে পাড়ি জমাতে হয় বিদেশে। দক্ষিণ কলকাতা থেকে গন্তব্য হল সূদুর কানাডা। মাত্র পাঁচ বছর বয়েসেই শাস্ত্রীয় সঙ্গীত চর্চার মাধ্যমে শুরু হয় তাঁর গানের তালিম। সান্নিধ্য পেয়েছেন জটিলেশ্বর মুখোপাধ্যায়, শুভমিতা ব্যানার্জী, তৃপ্তি বাসু, সঞ্চালিকা ভট্টাচার্য এবং বাদল ধর চৌধুরীর মতো গুরুদের। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হওয়ার পরবর্তীতে রবীন্দ্র ভারতী থেকে মিউজিক নিয়ে স্নাতকোত্তর স্তরে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হন এবং সুরের স্বপ্নকে সঙ্গে নিয়েই পাড়ি দেন কানাডায়। তিনি দেবশ্রী গুপ্ত, যিনি হাজার কর্মব্যস্ততার মধ্যেও কিন্তু শিকড়ের টান, ভারতীয় সঙ্গীত ভোলেননি।

কানাডাতেও তিনি মাতৃভাষা, ভালোবাসার ভাষা বাংলার সঙ্গে সঙ্গেই ভারতের নানান প্রদেশের সঙ্গীত প্রসারের প্রচেষ্টা শুরু করেন। সেখানে থাকাকালীনই উস্তাদ গুলাম আলি জগজিৎ সিং এর সান্নিধ্যে গজলের তালিম নেন। পরবর্তীতে ২০১৩ সাল থেকে সেখানেই পাকাপাকি ভাবে থাকা শুরু করেন এবং ভারতীয় সঙ্গীতকে প্রবাসী ভারতীয়দের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য ২০১৫ সালে নিজস্ব একটি স্কুলও তৈরি করেন তিনি। স্কুলের নাম দেন রাগেশ্রী। দেবশ্রীর হাতধরে শুরু হয় প্রবাসীদের মধ্যে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত, হিন্দি এবং বাংলা গানের চর্চা। ২০২০ সালে তাঁর নিজের কথায় ও সুরে তৈরি হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ওপর একটি গান। মাইলফলক সৃষ্টিকারী এই গানটি মুক্তি পায় সাসকাচুয়ান আর্টিস্ট ফোরাম থেকে। এখানেই থেমে থাকেননি দেবশ্রী। তাঁর আট বছরের মেয়ে শিবাংশী ঘোষকে  নিজের শিকড়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে মেয়েকেও ওডিসি নাচের তালিম দেওয়া শুরু করেন। কিন্তু প্রবাসে যথাযথ প্রথাগত তালিমের অভাব থাকায় শিবাংশী অনলাইন স্কুলের মাধ্যমেই নাচের চর্চা করছে। দেবশ্রী জানিয়েছেন, “নিজের দেশের মাটির সাথে জুড়ে থাকার ইচ্ছার জন্যই প্রবাসে ভারতীয় সঙ্গীতের প্রশিক্ষণ দিতে আমি রাগেশ্রী তৈরি করেছি। যেহেতু নাচের ঘরানার সাথে আমি যুক্ত নই তাই মেয়ে অনলাইনেই নাচের প্রশিক্ষণ নিচ্ছে।”

বাঙালিরা কর্মসূত্রে দেশ ছেড়ে বিদেশে চলে গিয়েও যেভাবে বাংলার সুর ও বাংলার শিকড়কে এখনও বজায় রেখেছেন বা বজায় রাখার চেষ্টা করেছেন তারই উদাহরণ দেবশ্রী এবং এই শিকড়ের টান যাতে পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যেও ছড়িয়ে দেওয়া যায় তাই দেখিয়ে দিচ্ছেন এই দেবশ্রীর মতো মানুষেরা।