ফের কড়া বার্তা রাজ্যপালের , “আমি গ্রাউন্ড জিরো রাজ্যপাল,মানুষ যাতে গনতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতে পারে তা আমি নিশ্চিত করব।”

কলকাতা, ২৯ জুন –  পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রাক্কালে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে অশান্তি নিয়ে কড়া বার্তা দিলেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। তাঁর  সতর্কবার্তা, “গণতন্ত্রের পাহারাদারের হাতে গণতন্ত্রের মৃত্যুঘণ্টা না বাজে। সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।” পঞ্চায়েত ভোটে কোনরওরকম সন্ত্রাস বরদাস্ত করা হবে না বলে সাফ জানিয়ে দেন তিনি। 

পঞ্চায়েত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজ্যে বিক্ষিপ্তভাবে অশান্তির ঘটনা ঘটছে। রক্ত ঝরছে, মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। সেই নিয়ে বারবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। পঞ্চায়েত নির্বাচনে হিংসার ঘটনা নিয়ে কড়া বিবৃতিও দিয়েছে রাজভবন। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে সমস্ত জায়গায় হিংসার ঘটনা যেখানে ঘটেছে, সেই সব জায়গায় পৌঁছে গেছেন রাজ্যপাল। দক্ষিণবঙ্গে ভাঙ্গর, ক্যানিং -এ  অশান্তির পর পৌঁছে যান তিনি। যা নিয়ে কটাক্ষও করেছে তৃণমূল। বৃহস্পতিবার আনন্দ বোস নিজেকে ‘গ্রাউন্ড জিরো’ রাজ্যপাল বলে উল্লেখ করেন । অর্থাৎ শুধু রাজভবন নয়, রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান হিসেবে তিনি পৌঁছে যাবেন ঘটনাস্থলে। তাঁর এই নতুন ভূমিকা ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই পঞ্চায়েত নির্বাচনে হিংসা নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া দেন তিনি।

গোটা রাজ্যের সঙ্গে পাহাড়েও এ বার অনুষ্ঠিত হচ্ছে পঞ্চায়েত ভোট। বাংলার অন্যত্র ত্রিস্তর ভোট হলেও পাহাড়ে রয়েছে দ্বিস্তর পঞ্চায়েত ব্যবস্থা। এদিন শিলিগুড়িতে বিজেপি সহ বিরোধী দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন রাজ্যপাল। সেখানে রাজ্যপালের কাছে তাঁরা ভোটের আগে ও পরে পাহাড়ে পর্যাপ্ত কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাবি জানান। বৃহস্পতিবার সকালে শিলিগুড়ির সার্কিট হাউসে পাহাড়ের একাধিক দলের প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করেন রাজ্যপাল। এদিন বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্তার নেতৃত্বে পাহাড়ের ইউনাইটেড ফোরামের সদস্যরা  আনন্দ বোসের সঙ্গে দেখা করেন। উপস্থিত ছিলেন নীরজ জিম্বা, প্রতাপ খাতিরা। তবে বিমল গুরুং কিংবা অজয় এডওয়ার্ড উপস্থিত না থাকলেও তাঁদের দলের প্রতিনিধিরা হাজির ছিলেন।সেই বৈঠকে তৃণমূল  ও তার সহযোগী দলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দেন বিরোধীরা। একইসঙ্গে ভোটের ফলপ্রকাশের পরও রাজ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন রাখার দাবি জানানো হয় ।


বৈঠক শেষে সাংবাদিক রাজ্যপাল বলেন, “রাজ্যে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করানোর নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। এরপরেও বেশকিছু জায়গায় সন্ত্রাসের রাজনীতি, খুনের রাজনীতি চলছে।” তিনি জানান, রাজু বিস্তা অভিযোগ করেছেন পাহাড়ে তাঁদের প্রার্থীদের প্রচার করতে দেওয়া হচ্ছে না। অনেকে মনোনয়ন জমা  করতে পারেননি। তাঁরা রাজ্যপালকে একটি অডিও শুনিয়েছেম। যাতে স্থানীয় এক নেতাকে বিরোধী প্রার্থীদের হুমকি দিতে শোনা যায়।  এরপর আনন্দ বোসের কড়া বার্তা, “এসব মেনে নেওয়া যায় না। কোনওরকম হিংসা বরদাস্ত করা হবে না।”রাজ্যপাল বলেন, ‘শান্তির বাতাবরণ বজায় রেখে নির্বাচন করতে হবে। খুন, ভয়,  হুমকির রাজনীতি দূর করতে হবে। এটা ভারতের সংবিধান ও গণতন্ত্রের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। যা ঘটছে তা অত্যন্ত দুঃখজনক। হাইকোর্টের নির্দেশেই তা স্পষ্ট।

রাজ্যপাল এদিন  বলেন, ” আমি গ্রাউন্ড জিরো রাজ্যপাল। নিজের সন্তুষ্টির জন্য বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছি। আক্রান্তের সঙ্গে কথা বলেছি।” এরপরই তিনি সতর্ক করে বলেন, “গণতন্ত্রের পাহারাদারের হাতে গণতন্ত্রের মৃত্যুঘণ্টা না বাজে।” নিজের ভূমিকা নিয়ে রাজ্যপাল বলেন, “আমার দায়িত্ব হাই কোর্টের নির্দেশ মেনে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করানোর। মানুষ যাতে নিজের গনতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতে পারে তাই নিশ্চিত করা। সেটাই আমি করব।”

এদিন সাংসদ রাজু বিস্তা নির্বাচনের ৬ সপ্তাহ পর পর্যন্ত কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন রাখার আরজি জানান। সেই আবেদন গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হবে বলে জানিয়েছেন রাজ্যপাল।