সুড়ঙ্গের ভিতরে আটকে ৪০টি প্রাণ, সুড়ঙ্গের বাইরে নিদ্রাহীন প্রহর গুনছেন প্রিয়জন

Written by SNS November 18, 2023 7:56 pm
 উত্তরকাশী, ১৮ নভেম্বর –  উত্তরকাশীর সুড়ঙ্গে আটকে রয়েছে ৪০ টি প্রাণ। সুড়ঙ্গের বাইরে অপেক্ষারত আত্মীয় পরিবার উৎকণ্ঠার প্রহর গুনছেন। ৪০ জনের সেই দলে রয়েছেন বিভিন্ন রাজ্যের শ্রমিক। শ্রমিকদের এই দলে রয়েছেন রাজ্যের চম্পাবত জেলার ছানি গোথ গ্রামের বছর পঁচিশের পুষ্কর৷ তাঁরা দুই ভাই৷ দাদা বিক্রমও নির্মাণকাজের সঙ্গে যুক্ত৷ রয়েছেন বৃদ্ধ বাবা-মা৷ পুষ্কর এবং বিক্রম দুই ভাই-ই নির্মাণকর্মী৷ উত্তরকাশীর সিল্কিয়ারা সুড়ঙ্গে নির্মাণের কাজ করছিলেন পুষ্কর-সহ ৪০ জন শ্রমিকের একটি দল৷ পুষ্করের দাদা বিক্রম জানান, সুড়ঙ্গ ভেঙে পড়ার খবর পেয়েই বাবা-মাকে কোন কিছু না জানিয়েই উত্তরকাশীতে ঘটনাস্থলে হাজির হন৷ এক সংবাদমাধ্যমকে বিক্রম বলেন, “ঘটনার ছ’দিনের মাথায় অর্থাৎ শুক্রবার ভাইয়ের সঙ্গে কয়েক মুহূর্তের জন্য যোগাযোগ করতে পেরেছিলাম৷ ওর গলা শুনে মনে হচ্ছিল খুব ক্লান্ত, আতঙ্কিত৷কিন্তু বার বার আমাকে আস্বস্ত করে বলেছে, সে ঠিক আছে, চিন্তার কোনও কারণ নেই৷ তার সঙ্গে আরও অনেকে আছে৷” বিক্রম জানান,  ” উদ্ধারের কাজ যে জোরকদমে চলছে, সেটাও জানিয়েছে পুষ্কর৷ আমার গলা শুনেই পুষ্কর বলেছিল, দাদা, আমি যে সুড়ঙ্গে আটকে রয়েছি মাকে বলিস না৷ চিন্তা করবে৷” বিক্রম আরও বলেন, “বাডি়র খুব আদরের পুষ্কর৷ মায়ের চোখের মণি৷ তাই মাকে এই খবর না দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছিল ভাই৷” কিন্তু পুষ্করের আটকে থাকার কথা গোপন রাখা যায়নি৷ গ্রামবাসীদের অনেকেই বিষয়টি জেনে ফেলায় বাবা-মায়ের কানেও সে খবর পৌঁছেছে বলে জানান বিক্রম৷.
উত্তরপ্রদেশের চৌধরি লালের বড় ছেলে নির্মাণকাজ করতে গিয়েই প্রাণ হারিয়েছিলেন৷ সেই নির্মাণকাজ করতে গিয়েই এখন জীবন-মৃত্যুর মুখোমুখি তাঁর ছোট ছেলেও৷ এক ছেলেকে হারিয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। ছোট ছেলেই এখন তাঁদের একমাত্র সম্বল, তাঁদের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন। তাই ছেলেকে ফিরে পেতে  আকুল হয়ে উঠেছেন চৌধরি লাল৷ গত রবিবার থেকে উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশীতে ভগ্ন সুড়ঙ্গের মধ্যে যে ৪০ জন শ্রমিক আটকে রয়েছেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ছোট ছেলে মনজিৎ৷ গত ছ’দিন ধরে দু’চোখের পাতা এক করতে পারেনি লালের পরিবার৷ অতীতেও এমন এক ভয়ঙ্কর আঘাতের মোকাবিলা করতে হয়েছিল তাঁকে। তিনি শোনান,  ‘‘আমার বড় ছেলের তখন ৩৬ বছর বয়স৷ মুম্বইয়ে এক বহুতলের নির্মাণকাজ করতে গিয়ে তড়িদাহত হয়ে ওর মৃত্যু হয়। আরও এক পুত্রকে হারানোর শোক আর সহ্য করতে পারব না৷’’  মনজিতের খবর নিতে ঘটনাস্থলে পৌঁছে গিয়েছেন তাঁর কাকা শত্রুঘ্ন লালও৷ তাঁর কথায়, ‘‘মনজিতের দুই বোন রয়েছে৷ ওর মা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের রাঁধুনি৷ এই ঘটনায় সবাই খুব ভেঙে পড়েছেন৷
একই পরিস্থিতি বাকি শ্রমিক পরিবারগুলিরও৷ সুড়ঙ্গের বাইরে একরাশ উৎকণ্ঠা ও উদ্বেগকে সঙ্গী করে অপেক্ষায় থাকা কখন ভগবান মুখ তুলে চাইবেন। আধুনিক যন্ত্রপাতি এসেছে, এসেছে সুদূরের বিশেষজ্ঞ দল, পৌঁছছে খাবার আর অক্সিজেন – কিন্তু সুড়ঙ্গে শ্রমিকদের, সুড়ঙ্গের বাইরে প্রিয়জনদের বুকের ধুকপুকুনি কমছে না।