• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

কাশ্মীরে শহিদ ৩ সেনা, জওয়ানদের পরিবারে শোকের ছায়া 

শ্রীনগর, ১৪ সেপ্টেম্বর – অনন্তনাগে সেনা ও জঙ্গির গুলির লড়াইতে শহিদ হয়েছেন দুই সেনা  আধিকারিক এবং এক পুলিশ আধিকারিকের । জানা গিয়েছে, অনন্তনাগের গাদোলে এলাকায় মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছিল এই জঙ্গিদমন অভিযান। সেই অভিযানের কমান্ডিং অফিসার ছিলেন কর্নেল মনপ্রীত সিং। সেনা সূত্রে খবর, তল্লাশি অভিযান চালানোর সময় জঙ্গিরা আচমকা গুলি চালাতে শুরু করে। সেই সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হন

শ্রীনগর, ১৪ সেপ্টেম্বর – অনন্তনাগে সেনা ও জঙ্গির গুলির লড়াইতে শহিদ হয়েছেন দুই সেনা  আধিকারিক এবং এক পুলিশ আধিকারিকের । জানা গিয়েছে, অনন্তনাগের গাদোলে এলাকায় মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছিল এই জঙ্গিদমন অভিযান। সেই অভিযানের কমান্ডিং অফিসার ছিলেন কর্নেল মনপ্রীত সিং। সেনা সূত্রে খবর, তল্লাশি অভিযান চালানোর সময় জঙ্গিরা আচমকা গুলি চালাতে শুরু করে। সেই সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হন কর্নেল, মেজর এবং ডিএসপি। কর্নেলের ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়। চিকিৎসা চলাকালীন মৃত্যু হয় মেজর এবং ডিএসপির।
অভিযানে শহিদ কর্নেল মনপ্রীত সিং বর্তমানে রাষ্ট্রীয় রাইফেলসের সঙ্গে নিযুক্ত ছিলেন। ভারতীয় সেনা সূত্রের খবর, শহিদ মেজরের নাম আশিস ধনচক। মৃত পুলিশ আধিকারিকের নাম হুমায়ুন ভাট।
কর্নেল মনপ্রীত সিংয়ের পরিবার এর আগে দুই প্রজন্ম জানায় কাজ করেছেন। তিনি ছিলেন তৃতীয় প্রজন্ম।  তাঁর মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ পাঞ্জাবের পঞ্চকুলা গ্রাম, শোকাহত গোটা পরিবার। মনপ্রীত সিং রাষ্ট্রীয় রাইফেলসের ১৯ নম্বর ব্যাটালিয়নে কর্মরত ছিলেন। তাঁর চাকরির মেয়াদ ছিল আর মাত্র চার মাস। মনপ্রীতের জন্ম মোহালির ভাঙজোরিয়া গ্রামে।  সেখানেই তাঁর শেষকৃত্য হবে।  সেনাবাহিনীর সঙ্গে মনপ্রীতের পরিবারের সম্পর্ক গত তিন প্রজন্ম ধরে। তাঁর ঠাকুরদা শীতল সিং , বাবা লক্ষ্মীর সিং ও কাকা রণজিৎ সিং সেনাবাহিনীতে কাজ করতেন। মনপ্রীতের বাবা সেনা থেকে অবসর নেওয়ার পর পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা বিভাগে কাজ করতেন।
জঙ্গি দমন অভিযানে বেরনোর আগেই পরিবারের সকলের সঙ্গে কথা বলেছিলেন কর্নেল মনপ্রীত সিং। ছবছর বয়সি ছেলে ও দুবছর বয়সি মেয়ের সঙ্গেও কথা বলেন। তারপরেই জঙ্গিদের গুলি লেগে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন চণ্ডীগড়ের এই সেনা আধিকারিক। গত বছরই ভালো কাজের পুরস্কার হিসাবে সেনা মেডেল পেয়েছিলেন তিনি।
কিন্তু বুধবার রাত পর্যন্ত তাঁর মৃত্যুর খবর জানানো হয়নি স্ত্রী জগমিত কৌরকে। তিনি তখনও জানতেন, স্বামী আহত। তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়েই তাঁকে ফোন করবেন। ছুটিতে ফিরবেন বাড়িতে। বাবা আর নেই বলে জানত না মনপ্রীতের ছ’বছরের পুত্র।মনপ্রীতের ভাই বীরেন্দ্র গিল বলেন, ‘‘আমি বুধবার সকাল ৬টা ৪৫ মিনিটে ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। আমাকে বলেছিল যে, ও ব্যস্ত আছে। সন্ধ্যার পরে অভিযান শেষ হলে আমাকে ফোন করবে। এর পর বিকেলে আমরা খবর পাই যে ও আহত হয়েছে। তার পর খবর পেলাম সব শেষ।’’
মেজর আশিসের বাড়ি হরিয়ানার পানিপতে। সেখানে সেক্টর ৭-এ থাকে তাঁর পরিবার। আশিসরা চার ভাইবোন। পরিবার সূত্রে খবর, বছর দুয়েক আগেই জম্মুতে বদলি হন আশিস। এ বছরই তিনি পেয়েছিলেন ‘সেনা মেডেল’। পরিবারে বাবা, মা, স্ত্রী ।  মাত্র দু’মাস আগেই কন্যাসন্তানের বাবা হয়েছেন তিনি। মেজরের কাকা বলেন, “শেষ বার ফোনে কথা হয়েছিল আশিসের সঙ্গে। মাস দেড়েক আগেই বাড়িতে এসেছিল আশিস। অক্টোবরে আবার আসার কথা ছিল । ওই সময় নতুন বাড়িতে যাওয়ারও  কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই সব শেষ।” পানিপতের ধনচক পরিবারে এখন শুধুই শোকের আবহ । সম্প্রতি কর্নেল মনপ্রীত এবং মেজর আশিস কোকেরনাগের একটি ভলিবল প্রতিযোগিতায় উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের দু’জনের সেই ছবিও সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখা যায়।

জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের ডিএসপি হুমায়ুন ভাটের পরিবারেও স্বজন হারানোর শোক। সন্তানকে  হারিয়ে দিশাহারা ভাট পরিবার। হুমায়ুনের বাবা গুলাম হাসান জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের ইনস্পেক্টর জেনারেল ছিলেন। গুলিতে আহত হয়ে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলেই মৃত্যু হয় হুমায়ুন ভাটের । মাত্র এক মাস আগে পুত্রসন্তানের মুখ দেখেছিলেন কাশ্মীরপুলিশের ডিএসপি হুমায়ুন ভাট। জঙ্গিদের হানায় আর ছেলের কাছে ফিরতে পারলেন না তিনি।

বুধবার কাশ্মীরের অনন্তনাগে জঙ্গি দমন অভিযান চালায় যৌথ বাহিনী। গুলি লেগে গুরুতর আহত হন সেনা ও পুলিশের তিন আধিকারিক। উদ্ধার করার আগে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁদের। তিন আধিকারিককে শেষ শ্রদ্ধা জানান জম্মু ও কাশ্মীরের লেফটেন্যান্ট গভর্নর মনোজ সিনহা। মৃতদের পরিবারের সদস্যরাও শ্রদ্ধা জানান প্রিয়জনদের।

Advertisement

Advertisement

Advertisement