কলম্বোয় ধারাবাহিক বিস্ফোরণে মৃত ২৯০

ইস্টার সানডে’র সকালে একের পর এক বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে কলম্বাে এবং তার সংলগ্ন এলাকা। ধারাবাহিক বিস্ফোরণে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২১৫, সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

Written by SNS Colombo | April 22, 2019 7:11 am

বিস্ফোরণের সেন্ট সেবাস্তিয়ানস চার্চ (Photo: STR/AFP)

শ্রীলঙ্কায় ধারাবাহিক বিস্ফোরণে এখনও পর্যন্ত চব্বিশজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতদের সঙ্গে এই হামলার যােগ থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন সে দেশের বিদেশমন্ত্রী রুয়ান উইয়েওয়ারদানে। দ্বীপরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবথেকে ভয়াবহ এই জঙ্গি হামলায় কেউ রেহাই পাবে না বলে জানিয়েছেন তিনি। নারকীয় এই হামলার ঘটনায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডােনাল্ড ট্রাম্পসহ তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মহল।

এদিকে রবিবারের হামলায় লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। এখনও পর্যন্ত সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৯০। এর মধ্যে ৩৫ জন বিদেশী নাগরিক আছেন। এছাড়া জখম হয়েছেন কয়েকশাে মানুষ। এদের মধ্যে অনেকের আঘাত গুরুতর। কলম্বাের একাধিক হাসপাতালের চিকিৎসকদের ধারনা, এর ফলে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়লে আশ্চর্য হওয়ার কিছু থাকবে না। বিভিন্ন হাসপাতালে তাদের চিকিৎসা চলছে।

ইস্টার সানডে’র সকালে একের পর এক বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে কলম্বাে এবং তার সংলগ্ন এলাকা। এদিন সকাল সাড়ে আটটা থেকে দুপুর পর্যন্ত মােট আটটি বিস্ফোরণ ঘটে। এদিন মুলত গির্জা এবং হােটেলগুলিকে নিশানা করেছিল জঙ্গিরা বিশেষ করে সেই হােটেলগুলিকে, যেখানে বিদেশী পর্যটকরা এসে ওঠেন। এই খবর লেখা পর্যন্ত কোনাে জঙ্গি সংগঠন এই হামলার দায় স্বীকার করেনি। তবে ন্যাশনাল তাওহিদ জামাত বা এনটিজে নামে একটি কট্টরপন্থী সংগঠন এই হামলায় জড়িত থাকতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে।

প্রাথমিকভাবে তিনটি গির্জা এবং হােটেলে বিস্ফোরণের খবর পাওয়া যায়। সংবাদসংস্থা এএফপি জানিয়েছে, হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছে শ্রীলঙ্কা প্রশাসন। সকালে ঘটেছে এই বিস্ফোরণগুলি। কিন্তু এখনও পর্যন্ত আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে স্থানান্তর করার প্রক্রিয়া চলছে। কলম্বাের একটি সরকারি হাসপাতালের এক কর্মী জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাহে আটজনের চিকিৎসা শুরু হয়েছিল। কিছুক্ষণের মধ্যেই ওই হাসপাতালে প্রায় ৩০০ জনকে ভর্তি করাতে হয়। সময় যত এগিয়েছে হাসপাতালগুলিতে ততই বেড়েছে আহত ও কার্যত ছিন্নভিন্ন মানুষের ভিড় বিস্ফেল রণের পর গােটা এলাকা ঘিরে রেখেছে নিরাপত্তা বাহিনী। শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের কাছে একটি হােটেলে একজনের মৃত্যু হয়েছে। ভারতের বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ জানিয়েছেন, শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি সম্পর্কে তারা নিরন্তর খোঁজখবর নিয়ে চলেছেন ।পাশাপাশি শ্রীলঙ্কার হাইকমিশনের তরফে ভারতীয়দের ব্যাপারে খোঁজ খবর নিতে কয়েকটি হেল্পলাইন নম্বর চালু করা হয়েছে। সে দেশে ভারতীয় নাগরিক এবং ভারতে থাকা তাদের আত্মীয়রা ফোন করতে পারবেন।

একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, শহরের অভিজাত তিনটি হােটেলকেই বিস্ফোরণের জন্য বেছে নেয়া হয়েছিল। এছাড়া তিনটি গির্জার মধ্যে দুটি শহরের বাইরে। শ্রীলঙ্কার পুলিশ ও গােয়েন্দা সূত্রে বলা হয়েছে, বিস্ফোরণের ধরণ কী তা জানা যায়নি। সেন্ট সিবাস্টিয়ান গির্জার তরফে তাদের ফেসবুক পেজে এই হামলার কথা জানানাে হয়েছে। জানা গিয়েছে, প্রথম বিস্ফোরণটি ঘটে সেন্ট সিবাস্টিয়ান গির্জায়। পরে অন্যান্য গির্জা ও হােটেল থেকে বিস্ফোরণের খবর আসতে শুরু করে। গ্র্যান্ড হােটেল ও আরেকটি হােটেলেও বিস্ফোরণ ঘটে।

উল্লেখ্য, কলম্বােয় সন্দেহভাজন আত্মঘাতী বিস্ফোরণের বিষয় সতর্ক করেছিল পুলিশ। শ্রীলঙ্কায় জামাতদের সন্দেহজনক গতিবিধি নিয়ে সতর্ক করেছিল বিদেশী গােয়েন্দা সংস্থাগুলিও। সতর্কবার্তায় বলা হয়েছিল, বিদেশী গােয়েন্দা বিভাগগুলি সতর্ক করে বলেছে যে গুরুত্বপূর্ণ গির্জা ও কলম্বাের ভারতীয় হাইকমিশনে আত্মঘাতী হামলা চালানাের ছক কষছে ন্যাশনাল র্থোহিথ জামাত। শ্রীলঙ্কায় কট্টরপন্থী মুসলিম দল এনটিজে। গত বছর বৌদ্ধ মুর্তি ধ্বংসে তাদের নাম জড়ানাের পরেই এই দল বিভিন্ন মহলে পরিচিত হয়ে ওঠে।

ধারাবাহিক বিস্ফোরণের পর শ্রীলঙ্কর রাষ্ট্রপতি দেশবাসীর কাছে শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।

আজ সকালের ধারাবাহিক বিস্ফোরণের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন ভারতের বিজেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। এছাড়া বিদেশ মন্ত্রকের তরফে এক বার্তায় জানানাে হয়েছে, ভারত এই কঠিন পরিস্থিতিতে শ্রীলঙ্কার পাশেই আছে। প্রতি মুহুর্তে ঘটনাপরম্পরার ওপর নজর রাখা হচ্ছে বলেও জানানাে হয়েছে ওই বার্তায়। পাশাপাশি নিহত ও আহতদের পরিবারদের সমবেদনা জানিয়ে ভারতীয় বিদেশমন্ত্রকের বার্তায় বলা হয়েছে, কোনও পরিস্থিতিতে শ্রীলঙ্কা প্রশাসনের পাশেই আছে ভারত। সেখানে আরাে বলা হয়েছে, যে কোনাে ধরনের সন্ত্রাস, যে কোনাে দেশের মাটিতে সন্ত্রাসের বিরােধী ভারত। কোনাে যুক্তি দিয়েই এই ধরনের নারকীয় হামলাকে সমর্থন জানানাে যায় না। এই সিরিয়াল বিস্ফোরণের পেছনে যারা রয়েছে, তাদের কঠোর শাস্তির দাবি করেছে ভারত।

এর পাশাপাশি এই নৃশংস হামলার পরে শ্রীলঙ্কার বুকে শান্তি ও সম্প্রীতির পরিবেশ বজায় রাখার আবেদন জানিয়েছেন জ্যাকলিন ফার্নান্ডেজ, মিনডি কালিং, শেখর কাপুর, আলি জাফরের মতাে ভারতীয় ও আন্তর্জাতিক সেলিব্রিটিরা। তাঁরা জানিয়েছেন, শ্রীলঙ্কার তিনটি গির্জা, লাক্সারি হােটেল এবং একটি হাউজিং কমপ্লেক্সে যে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এতগুলি প্রাণহানি ঘটানাে হয়েছে, তার নিন্দা করার কোনও ভাষা নেই। নিহতদের মধ্যে ব্রিটিশ, ডাচ এবং মার্কিন নাগরিকরা রয়েছেন।

কী ধরনের বিস্ফোরক ব্যবহার করে এই নাশকতা ঘটানাে হয়েছে, সে ব্যাপারে এখনও নিশ্চিত হতে পারেনি শ্রীলঙ্কার পুলিশ ও গােয়েন্দা বাহিনী। প্রাক্তন মিস ইউনিভার্স ও বলিউডের অভিনেত্রী জ্যাকলিন ফার্নান্ডেজ বলেছেন, সন্ত্রাস একটা চেন রিঅ্যাকশনের মতাে। এটা সময়মতাে থামাতে না পারলে হাতের বাইরে বেরিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

পড়ুন । ট্রাম্পের ট্যুইটে শ্রীলঙ্কায় মৃতের সংখ্যা ১৩.৮ কোটি