পশ্চিমবঙ্গের দঃ ২৪ পরগণা জেলার অন্তর্গত মহেশতলা বিধানসভার বাটানগর একটি ছোট্ট শহরতলী, এইখানেই মহেশতলা থানা ও নঙ্গী স্টেশন বাজার সংলগ্ন একটি ছোট্ট স্কুল ‘লিটল হার্ট একাডেমি’। স্কুলটি সিবিএসই অনুমোদিত একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল। তবে বাংলা মাধ্যমেও এখানে পড়ানো হয় অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত। ইংরেজি মাধ্যমে দশম শ্রেণি অবধি পাঠের ব্যবস্থা আছে। স্কুলটির পথ চলা শুরু হয় ৬ই ফ্রেব্রুয়ারী ২০০৬ সালে শ্রদ্ধেয়া অলোকা চক্রবর্তী মহাশয়ার হাত ধরে। পরবর্তী কালে তাঁরই সুযোগ্যা কন্যা সর্বানী চক্রবর্তী মহাশয়া এই বিদ্যালয়ের হাল ধরেন। বর্তমানে তাঁরই হাত ধরে স্কুলটি এগিয়ে চলেছে সুনামের সঙ্গে। পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন সৃজনশীল কর্মকাণ্ডেও শিক্ষার্থীদের উৎসাহ দেওয়া হয়। সম্প্রতি ক্রীড়া বিষয়েও নজর দেওয়া হয়েছে।
বাৎসরিক ক্রীড়া অনুষ্ঠান এইবার প্রথম আয়োজিত হল। বিভিন্ন ক্রীড়াক্ষেত্রের উজ্জ্বল নক্ষত্রদের সমাবেশে এই অনুষ্ঠান বেশ সমারোহেই দুদিন ধরে অনুষ্ঠিত হয়। স্কুলে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান রবীন্দ্রজয়ন্তী, বসন্ত উৎসব, স্বাধীনতা দিবস পালন ও অঙ্কন প্রতিযোগিতা, যেমন খুশি সাজো, বাৎসরিক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান এবং xmas day বেশ সাড়ম্বরেই পালিত হয়। বর্তমানে ক্যারাটে ও যোগব্যায়াম শেখানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। স্কুলে দেবী সরস্বতীর আরাধনাও বেশ শ্রদ্ধার সঙ্গে হয়। স্কুলের পরিবেশ অত্যন্ত মনোরম। বিদ্যালয়ে প্রবেশ করলেই চোখে পড়বে সুদৃশ্য বাগান। নানা বর্নে, নানা প্রজাতির ফুলেদের উৎসবে মন কেড়ে নেবে এই বাগান। শিশুরা ছোট থেকেই গাছপালা, ফুল বা প্রকৃতির সান্নিধ্য লাভে কিছুটা প্রকৃতি প্রেমিক যাতে হয়ে ওঠে সেই জন্যই এই ব্যবস্থা। বিদ্যালয়ে অধুনা একটি পাঠাগার, একটি বিজ্ঞানাগার তৈরী হয়েছে। পাঠ্যপুস্তকের বাইরেও বিদ্যার্থীদের ভিন্ন বইয়ের জগতের সঙ্গে পরিচিতি ঘটাতে এই পাঠাগার নির্মাণ। বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষার্থীরা যাতে হাতে কলমে বুঝতে পারে বা দেখতে পারে সেইজন্যই বিজ্ঞানাগার নির্মাণ। এটি একটি সহ শিক্ষামূলক (coed) স্কুল।
Advertisement
গবেষণায় দেখা গেছে যে সহশিক্ষামূলক স্কুলগুলি শিক্ষার্থীদের লিঙ্গ-নির্বিশেষে তাদের সর্বোত্তম দক্ষতা অর্জনের জন্য চ্যালেঞ্জ করা হয়। এটি আরও প্রতিযোগিতামূলক এবং প্রেরণাদায়ক পরিবেশ তৈরি করে যার ফলে উন্নত একাডেমিক কর্মক্ষমতা অর্জন করা যায়। একটি সহশিক্ষার পরিবেশ শিক্ষার্থীদের একটি সুষম সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলতে সাহায্য করে। তারা যোগাযোগ সহযোগিতা এবং দল গঠনের দক্ষতা শেখে যা বিভিন্ন লিঙ্গের সমবয়সীদের সাথে মিথস্ক্রিয়া থেকে আসে। উভয় লিঙ্গ একসাথে পড়াশোনা করলে শিক্ষার্থীরা সুস্থ প্রতিযোগিতা থেকে উপকৃত হয়। দুটি মাত্র ছাত্র নিয়ে যে স্কুল যাত্রা শুরু করে বর্তমানে তার শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় পাঁচশোর কাছাকাছি। বিদ্যালয়ে সিসি ক্যামেরা রয়েছে নিরাপত্তার বেষ্টনী আরো মজবুত করার লক্ষ্যে। ১৬ জন দক্ষ শিক্ষক-শিক্ষিকার পরিচালনায় শিক্ষার্থীরা বেশ ভালোভাবেই তাদের শিক্ষা লাভ করছে।
Advertisement
আজ একটি নিম্ন বিত্ত পরিবার তার সন্তানকে ভাল ইংরেজি মাধ্যমে পড়ানো স্বপ্নের মতো। এই স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করতে সর্বোপরি নিম্ন আয়ের মানুষদের একটু সাহারা দিতে সর্বানী চক্রবর্তী মহাশয়া এই স্কুলটিকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। তাঁর উদ্দেশ্য নিম্ন আয়ের মানুষদের মুখে হাসি ফোটানো। অতি স্বল্প খরচে এই স্কুলে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করে যা শুনলে অবাস্তব মনে হতে পারে। ‘সাধ্যের মধ্যে সাধপূরণ’ এই আপ্ত বাক্যটি বাস্তবে পরিণত করেছে বাটানগরের লিটল হার্ট একাডেমি। স্কুলটিকে নিজের সন্তানের মতো আগলে রেখেছেন সর্বানী চক্রবর্তী মহাশয়া। বাটানগরের লিটল হার্ট একাডেমি তাই হয়ে উঠেছে এই অঞ্চলের মানুষের ‘আশাদীপ’।
Advertisement



