শিবশঙ্কর দাস
বাংলা বৎসর ১৪৩২ সন নতুন বছর নতুন আশা সবটাই আমাদের কাছে স্বপ্নের মত। বাস্তবিক সবটাই আমাদের কল্পনা। এ যাত্রায় কত বাধা বিঘ্ন কত ঘাত প্রতিঘাত প্রতিটি ব্যক্তি তা উপলদ্ধি করে। বাংলা নতুন বছরে বাঙালির নানা আয়োজন, নতুন জামা, হালখাতা পাশাপাশি গৃহে একটা পূজা দেবার ব্যাপার থাকে। তাছাড়াও থাকে আগামীদিনে রাশি অনুযায়ী বর্ষফল কেমন হবে। পরিবারের সকলের শরীর স্বাস্থ্য, অর্থ জীবিকা ইত্যাদি কার কীভাবে সাফল্য আসবে তা নিয়ে সকলেই অল্প বিস্তর চিন্তা ভাবনা করেন। কথায় বলে যেমন কর্ম তেমন ফল। কারণ জীবনে চলার পথে আমরা যে শুভাশুভ কর্ম করি তার ফলই আমরা পাই। কর্মফল আমাদের ভোগ করতেই হয়। এটাই একদিকে অদৃষ্ট বা প্রারদ্ধ অন্যদিকে কর্মফল। তাই গীতার দ্বাদশ অধ্যায় অর্থাৎ ভক্তি যোগের ১২ নং শ্লোকে ভগবান বলেছেন— ‘শ্রেয়ো হি জ্ঞাপমভ্যাসাজ জ্ঞানাদ্ধ্যানং বিশিষ্যতে ধ্যানং কর্মফলত্যাগস্ত্যাগাচ্ছাত্তিরণস্তরম্’।
এর অর্থ হচ্ছে, অভ্যাস হইতে জ্ঞান শ্রেষ্ঠ। জ্ঞান হইতে ধ্যান শ্রেষ্ঠ। ধ্যান হইতে কর্মফল ত্যাগ শ্রেষ্ঠ এবং ত্যাগেই পরম শান্তি।
কিন্তু বর্তমান যুগ ভোগবাদের যুগ সর্বত্র মানুষের স্বার্থপরতা এবং ধনবৃদ্ধির লালসার জন্য যত নিচে নামা যায় নামতে ও তাদের বিবেক বাঁধা দেয় না। আমার স্বামী আমার পুত্র আমার সংসার সব কিছুই আমার অর্থাৎ যে মা বাবা তার সন্তানকে ছোট থেকে কোলেপিঠে মানুষ করল, তারা এখন হয়ে গেল পর, তারা সংসারে বোঝা এই সব বুড়োবুড়িদের নিয়ে চলা যায় না। আমরা আমাদের সোসাইটিতে মুখ দেখাতে পারি না, তাই তাদের ঠিকানা হল বৃদ্ধাশ্রম। যদি তাদের বাবা মা সন্তানের সঙ্গে একদিন এই বৃদ্ধাশ্রম থেকে ফোনের মাধ্যমে খোকার সঙ্গে কথা বলতে চায় খোকা বলে আমি এখন মিটিং-এ আছি।
পরে তোমাদের সঙ্গে কথা বলবো। আমরা কাল বিদেশে রওনা হচ্ছি। তোমাদের সঙ্গে দেখা করার সময় নেই। যে বাবা-মা দিনের পর দিন না খেয়ে অভাব অনটন সহ্য করে বুকের মানিককে এতবড় করলো সেই এখন তাদের ঘৃণা করে বোঝা মনে করে হায় রে ভাগ্য। এটাই বর্তমান শিক্ষিত যুবক যুবতীদের শিষ্টাচার বড়দের প্রতি কর্তব্য। কিন্তু বাস্তবিক পক্ষে দিন আনা গরীব ঘরে এই অত্যাচার অনেক কম যেমন আনে তেমন খায় তেমন পরে, আভিজাত্যের তোয়াক্কা করে না। তাই এরা অসম্ভব সুখী না হলেও দুঃখও সেভাবে তাদের হার মানাতে পারে না। তাই শুভ নববর্ষে এই কথাই বলবো যারা কাজ থেকে অবসর নিয়ে সংসারে নিজেদের অক্ষম বোঝা মনে করছেন তাদের খুঁজে নিতে হবে ভালো লাগার ও ভালো থাকার রসদ। যেমন হতে পারে গান শোনা বা গান গাওয়া, লেখালেখি করা, বাগান তৈরি ও গাছের যত্ন লালন পালন করার মধ্যেও টেনসন মুক্ত থাকা যায়। তাদের এইভাবেই সুস্থ থাকার পরিসর বৃদ্ধি করতে হবে। তবে এই মুহূর্তে আট থেকে আশি আমজনতা মুঠো ফোনের ভালোবাসায় তাদের জীবনশৈলীকে খুব দ্রুত পাল্টে ফেলেছে যা ভবিষ্যতে সুস্থ দীর্ঘজীবন লাভের পরিপন্থী। তাই অবশেষে বলবো ঈশ্বর সাধনায় ব্রতী হন। পরম পুরুষকে একাগ্রচিত্তে অনুভব করুন তাতেই আসবে পরম শান্তি। কবি নজরুলের কথায়—
‘আশিটা বছর কেটে গেল
ডাকিনি তোমায় কভু,
তা বলে ক্ষুদার অন্ন
বন্ধ করেনি প্রভু’