এগারো বছরের মোদী শাসনে দেশজুড়ে বৈষম্যের শিকার নারীরা। মেয়েদের উন্নয়নে মোদী সরকারের সাফল্য প্রচার করা হচ্ছে কোটি কোটি টাকার বিজ্ঞাপন দিয়ে। মনুবাদী ধারণায় যাঁরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত তাঁরাই নাকি সরকারের সাফল্য প্রচারের মুখ। ‘বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও’-এর স্লোগান দিয়ে, দেশজুড়ে প্রচার চালিয়ে বিজেপি সরকার। বিজেপি ‘সবকা সাথ সবকা বিকাশ’-এর আশীর্বাদে ভারতের ‘লাডলি’-রা নাকি এখন সাফল্যের নতুন নতুন শিখরে উঠে আসছে। বিশেষ করে বিহারের মতো যে সমস্ত রাজ্যে বিজেপির ‘ডবল ইঞ্জিনে’র সরকার রয়েছে, সেখানে নাকি ‘বিকাশ’ আরও দ্রুত গতিতে ঘরে ঘরে পৌঁছে যাচ্ছে। কিন্তু সরকারের দেওয়া তথ্যই একেবারে উলটো কথা বলছে।
কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের অংশগ্রহণের সূচকে দেখা যাচ্ছে, দেশে ২০১৮ সালে কর্মসংস্থানের নিরিখে পুরুষ ও মহিলাদের মধ্যে বৈষম্যের হার ছিল ৭২ শতাংশ। ২০২১ সালে তা বেড়ে হয়েছে প্রায় ৭৮ শতাংশ। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মূলত নিম্নবিত্ত মহিলারাই কর্মক্ষেত্র থেকে বাদ পড়ছেন। সরকারের নীতি, সমাজের পরিস্থিতিতে তাঁরা ঘরোয়া কাজে আবদ্ধ থাকতে বাধ্য হয়েছেন। পাশাপাশি, পুরুষদের মতো মহিলাদের মধ্যেও শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা এক দশকে লাফিয়ে বেড়েছে। ২০১১ সালের সমীক্ষা অনুযায়ী, শিক্ষিত মহিলাদের মধ্যে বেকারত্বের হার ছিল ৯.৭ শতাংশ। ২০১৭ সালে তা বেড়ে হয়েছে ১৭.৩ শতাংশ। শহরাঞ্চলের শিক্ষিত মহিলাদের মধ্যে বেকারের সংখ্যা ওই ছয় বছরে প্রায় পাঁচ গুণ বেড়ে ৪ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশে এসে দাঁড়ায়। ২০১৮ সালে ভারতের প্রায় দেড় কোটি মানুষ কাজ হারিয়েছেন। তার মধ্যে ৮৮ লক্ষ হলেন মহিলারা। গ্রামাঞ্চলের বাসিন্দা এমন প্রায় ৬৫ লক্ষ মানুষ কাজ হারিয়েছিলেন।
Advertisement
সাক্ষরতার হারেও মহিলারা ব্যাপকভাবে পিছিয়ে। ২০১১ সালের হিসাব অনুযায়ী, নারী-পুরুষ সাক্ষরতায় বৈষম্যের হার ছিল ১৭ শতাংশ। ২০২২ সালে তা বেড়ে হয়েছে অন্তত ২০ শতাংশ। বিশ্বের বিভিন্ন সমীক্ষক সংস্থা এই ধরনের নানা সূচকে পুরুষ ও মহিলাদের মধ্যে কীরকম বৈষম্য রয়েছে, তা বিচার করতে ‘গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ ইনডেক্স’ (আন্তর্জাতিক লিঙ্গ বৈষম্য সূচক) তৈরি করেছে। এই সূচকের ভিত্তিতে গত ২০১৮ সালে বিশ্বে ১০৮তম স্থানে ছিল ভারত। ২০২৪-এ ভারত ১২৯তম স্থানে ঠাঁই পেয়েছে। বাংলাদেশের থেকেও পিছনে ভারত। এই সূচকে বালাদেশ ৯৯তম স্থানে রয়েছে। বিজেপির হিন্দুত্ব-কর্পোরেট স্বৈরশাসনে মানুষের অর্থনৈতিক দুর্দশার পাশাপাশি এই সমস্ত বর্ণভিত্তিক ও লিঙ্গভিত্তিক কাঠামোগত বৈষম্য আরও বেড়েছে। এর সমাধান না করে মহিলাদের প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব নয়।
Advertisement
সম্প্রতি ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ইউনিয়ন কনফেডারেশন (আইটিইউসি)-এর প্রকাশ করা শ্রমিক অধিকার সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক রিপোর্টে উঠে এসেছে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। আইটিইউসি-র সমীক্ষা রিপোর্ট বলছে, এদেশের শ্রমজীবী মানুষের অবস্থা শোচনীয়। খাতায়-কলমে শ্রম আইন থাকলেও, বাস্তবে শ্রমিকদের কোনও অধিকার প্রায় নেই বললেই চলে। শ্রম আইনেরও অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে শ্রম কোডের নামে। বিশ্বের ১৫১টি দেশের মধ্যে শ্রমিকদের প্রাপ্ত অধিকারের নিরিখে ভারত ‘সব থেকে পিছিয়ে’ থাকা দেশগুলির মধ্যে রয়েছে।
আইটিইউসি রিপোর্টে বলা হয়েছে, মোদীর ‘বিকশিত ভারত’ শ্রমিক অধিকারের মাপকাঠিতে সব থেকে পিছিয়ে থাকা দেশগুলির মধ্যে রয়েছে। বারতে শ্রমিকদের ইউনিয়নের অধিকারের প্রতি নিয়মিত বাধা দেওয়ার ঘটনা ঘটছে। ইউনিয়ন গঠন বা কোনোরকম যৌথ দর কষাকষির চেষ্টা হলেই ছাঁটাইয়ের খাঁড়া নেমে আসছে। প্রান্তিক অংশের শ্রমিকদের ন্যূনতম কোনও অধিকার না থাকার সমস্যাও উঠে এসেছে আইটিইউসি-র সাম্প্রতিক রিপোর্টে। এর মধ্যে বিশেষভাবে সংকটজন পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছেন নারী শ্রমিকরা।
Advertisement



