দিল্লি কেন দূষিত?

Written by SNS March 23, 2024 11:55 am

বিশ্বের সবচাইতে দূষিত রাজধানী দিল্লি৷ একশো চল্লিশ কোটি দেশের রাজধানী এই শহর৷ দেশ শাসন হয় রাজধানী থেকেই, এখানেই বিশ্বের রাষ্ট্রনায়কেরা সফর করতে আসেন৷ তাদরে সাদর আমন্ত্রণ জানানো হয়৷ দেশের শাসন প্রণালী নির্ধারিত হয় কেন্দ্রীয় সরকারের প্রধান প্রশাসনিক কেন্দ্র দিল্লি থেকে৷ এই রাজধানীর বুকে প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়৷ বিশ্বের কোনও রাষ্ট্রনায়ক নিমন্ত্রিত হয়ে এই অনুষ্ঠানে যোগ দেন৷ এখানে লোকসভা ও রাজ্যসভার অধিবেশন বসে৷ আইন পাশ হয়৷ দেশের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে বিতর্ক হয়৷ বিশ্বের রাষ্ট্রনায়কেরা নিমন্ত্রিত হয়ে ভারত ঘুরতে এসে প্রথমেই দিল্লিতেই নামেন৷ তারপর বিভিন্ন শহর দেখতে যান৷ এখানে লালকেল্লা থেকে স্বাধীনতা দিবসে পতাকা উত্তোলন করেন দেশের প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীর উদ্দেশে ভাষণ দেন৷ তিনি ভারতকে সব দিক থেকে একটি উন্নতমানের দেশ করার অঙ্গীকার করেন৷

দুঃখের বিষয়, সেই শহর, সেই রাজধানী শহর, বিশ্বের তৃতীয় দূষিত নগরী৷ শহরের বায়ু দূষণের মাত্রা ছাড়িয়ে যায়৷ হাজার হাজার শহরবাসী শ্বাসকষ্টে ভোগেন৷ চিকিৎসকেরা দিল্লির বায়ু দূষণকেই দায়ী করেন৷ দূষণ নিয়ে বিজ্ঞানীরা নানা পদক্ষেপের কথা বলেন কিন্ত্ত পরিস্থিতি যে তিমিরে ছিল সেই তিমিরেই৷ অবস্থার নূ্যনতম পরিবর্তন নেই৷ শীতকালে মাঝে মাঝে কুয়াশায় ঢাকা পড়ে যায়৷ রাস্তা পরিষ্কার দেখা যায় না৷ ফলে দুর্ঘটনার ঘটনা বেশি ঘটে৷ সু্যইৎজারল্যান্ডের একটি সংস্থা আইকিউ এয়ার সম্প্রতি যে সমীক্ষা চালিয়েছে তা থেকে জানা যায়, বায়ুর গুণমানের নিরিখে দিল্লি, ভারতের রাজধানী, যা অতীত ঐতিহ্যে ভরপুর, বিশ্বের তৃতীয় দূষিত শহর৷ শীতের সময় যখন কুয়াশায় ঢাকা পড়ে এই শহর, তখন এখানে বসবাস করা বিপজ্জনক হয়ে ওঠে৷ এই নিয়ে টানা চারবার দূষণের মুকুট পেল রাজধানী৷

শুধু দিল্লি নয়৷ দূষণের নিরিখে গোটা ভারতবর্ষের অবস্থাই সঙ্গীন৷ বিশ্বের দূষণ তালিকায় বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের পরেই তৃতীয় স্থানে ভারত৷ দিল্লিতে যেহেতু বিশ্বের ভিভিআইপিরা আসেন, তাই মাঝে মাঝেই পরিবেশবিদরা আলোচনায় মিলিত হন কী করে রাজধানীর দূষণের মাত্রা কমানো যায়৷ আলোচনান্তে নানা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় দূষণ নিয়ন্ত্রণের৷ কিন্ত্ত আলোচনাই সার৷ কাজে কোনও অগ্রগতি নেই৷ রাস্তাঘাট পরিষ্কার পরিচ্ছন্নের নিরিখেও দিল্লি শহর পিছিয়ে৷ সবচেয়ে আশ্চর্যের, যে শহর থেকে দেশ শাসন করা হয়, সেই শহর দূষণে ভরা৷ শ্বাস নিতে কষ্ট হয়৷ চিকিৎসকরা বলেন শ্বাসপ্রশ্বাস জনিত সমস্যায় ভোগেন শহরের প্রচুর সংখ্যায় মানুষ৷ হাসপাতালগুলিতে সে চিত্র দেখা যায়৷

তবু রক্ষা, কলকাতার কপালে একটি মুকুট জুটেছে৷ বিশ্বের একটি সংস্থার, যা রাষ্ট্রপুঞ্জের অধীন, সম্প্রতি একটি সমীক্ষায় বলেছে, কলকাতা সবচাইতে নিরাপদ শহর৷ কলকাতাবাসী এই খবরে খুশি৷ কিন্ত্ত নিরাপদ বললেই কি নিরাপদ? এখনও কোনও মহিলা রাত নটার পর শহরের কোনও রাস্তা দিয়ে একাকী হেঁটে গৃহে ফিরতে নিরাপদ মনে করেন না৷ যেকোনও সময় তিনি দুষ্কৃতীদের দ্বারা আক্রান্ত হতে পারেন৷ সুতরাং এই শহর, যাকে মুখ্যমন্ত্রী লন্ডন বানাতে চেয়েছিলেন, সম্প্রতি আবার বলেছেন, লন্ডনের চাইতেও এই শহর সুন্দর৷ পর্যটকেরা এই শহরে পদার্পণ করে আনন্দ পান— বাস করতে ভালোবাসেন৷ কলকাতার বৈচিত্র্য তাদের মন টানে৷ কলকাতা একটি ঘিঞ্জি শহর হলেও, মানুষ এই শহরে বাস করতে ভালোবাসে অনেক অসুবিধা সত্ত্বেও৷

২০২৩ সালের তথ্যের নিরিখে সু্যইৎজারল্যান্ডের এই সংস্থা সম্প্রতি যে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে তার থেকে দিল্লির দূষণের মাত্রা কোথায় গিয়ে পেঁৗছেছে তা জানা যায়৷ এবারের এই সমীক্ষায় বলা হয়েছে, বিহারের বেগুসরাই সারা বিশ্বের শহরগুলির মধ্যে সব চেয়ে দূষিত৷ এই শহরের বায়ূ দূষণ তো মাত্রাহীন৷ কোনও কোনও রাস্তাঘাটের এমন অবস্থা যে মানুষদের নাকে রুমাল চেপে যেতে হয়৷ বিশ্বের দূষিত প্রথম ১১টি শহরের মধ্যে লাহোর বাদে বাকি দশটিই ভারতে৷ তাহলে দেখুন ভারতের সার্বিক দূষণের অবস্থা কী৷ স্বাস্থ্যের কত ঝুঁকি নিয়ে মানুষকে ভারতে বাস করতে হয়৷ নয়াদিল্লির বায়ুর গুণমান ২০২২ সালে ছিল ৮৯.১ মাইক্রোগ্রাম, ২০২৩ সালে তা এসে দাঁড়ায় ৯২.৭-এ৷ সুতরাং দূষণের মাত্রা যদি কমানো না যায়, তাহলে এমন একদিন আসবে যে রাজধানীতে বাস বিপজ্জনক হয়ে উঠবে৷

রাজধানীর দূষণের কারণ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, একদিকে যেমন রয়েছে ফসলের গোড়া পোড়ানো, যার ফলে তীব্র দূষণের সৃষ্টি হচ্ছে, অন্যদিকে রয়েছে সেন্ট্রাল ভিস্তা৷ পরিবেশবিদরা বলচেন, ওই ভিস্তা তৈরি করতে যাওয়ার আগে প্রচুর সংখ্যক গাছ কেটে ফেলা হয়েছে৷ ফলে সবুজ ধ্বংস হয়েছে৷ ফসলের গোড়া পোড়ানোর প্রভাব পরিবেশের উপর পড়লেও তার সমাধান কী করে করা যায় তা এখনও বের করতে পারেনি বিজ্ঞানীরা৷ ফলে অবস্থা দিন দিন খারাপের পথে যাচ্ছে৷

ভোট প্রচারে অতি ব্যস্ত রাজনীতিবিদদের এ ব্যাপারে কোনও নজর দেওয়ার অবকাশ নেই৷ ভোটটাই আসল৷ অথচ রাজধানী দিল্লির সব দিক থেকে শ্রেষ্ঠ রাজধানী হওয়া উচিত ছিল৷