• facebook
  • twitter
Sunday, 14 December, 2025

বিকশিত ভারত কোথায়?

২০২৩-২৪ সালে ৩৬ লক্ষ ৭০ হাজারের বেশি পেনশনভোগী (বৃদ্ধ-বৃদ্ধা) ১ হাজার টাকারও কম পান

ফাইল চিত্র

২০১৪ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দেশবাসীকে ‘আচ্ছে দিন’-এর স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। কিন্তু দেশের সাধারণ মানুষের কাছে আজও সেই স্বপ্ন অধরা থেকে গেল। কারণ, চরম মূল্যবৃদ্ধির (খাদ্যপণ্য, জ্বালানি, ওষুধ সহ অনেক কিছু) জেরে মানুষ আজ আর্তনাদ করছে। রান্নার গ্যাসের আকাশছোঁয়া দামবৃদ্ধির ফলে ২০২২-২৩ সালে একটিও সিলিন্ডার (উজ্জ্বলা) কেনেনি এমন পরিবারের সংখ্যা ১ কোটি ১৮ লক্ষ ৮৪ হাজার। আবার ২০২৩-২৪ সালে মাত্র ১টি সিলিন্ডার কিনেছে এমন পরিবারের সংখ্যা ১ কোটি ৮৬ লক্ষ ৫২ হাজারের কিছু বেশি। পেট্রেলে লিটার প্রতি ১৫ টাকা আর ডিজেলে লিটার প্রতি ১২ টাকা বৃদ্ধি করে মাত্র ১ বছরে (’২৩-’২৪) ২ লক্ষ ৭৪ হাজার কোটি টাকা মুনাফা লুটেছে মোদী সরকার। রান্নার গ্যাস থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা কমিয়ে নিজেদের ভাঁড়ার পূর্ণ করেছে মোদী সরকার।

কর্পোরেটদের খুশি করতে কেন্দ্রীয় সরকার বিভিন্ন সংস্থার অনাদায়ী ঋণের সাড়ে ১৪ লক্ষ কোটি টাকা মকুব করে সরকারি তহবিল ফাঁকা করেছে। অন্যদিকে, তাদেরই দানে শাসক দল নিজেদের দলীয় তহবিলপূর্ণ করেছে। এমনকী গত তিন বছরে (’২০-’২১ থেকে ’২২-’২৩ সাল পর্যন্ত) মোট ২ লক্ষ ৮১ হাজার ১৪৩ কোটি টাকা কর্পোরেটদের কর ছাড় দিলেও গরিব কৃষকদের বকেয়া ঋণ মকুব করেনি। মোদী জমানায় ১০ বছরে ৪ লক্ষ কৃষক আত্মহত্যা করেছে। এমনকী অন্নদাতাদের দাবি অনুযায়ী এমএসপি আইন ঘোষণার প্রতিশ্রুতি ‘গ্যারান্টার’ দিলেও তা আজও মানেনি সরকার।

Advertisement

আবার কেন্দ্রীয় সংস্থার রিপোর্টই জানাচ্ছে, ২০১৪ সালে দেশে বেকারত্বের হার ছিল ৫.৪৪ শতাংশ। আর ২০২৪ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৮ শতাংশ। এখন সারা দেশে ছেয়ে গেছে বেকারের সংখ্যা। স্নাতকদের মধ্যে ২৯.১ শতাংশের হাতে কোনও কাজ নেই। বিশ্বব্যাঙ্কের রিপোর্টে জানা যায়, ভারতের ১২ কোটি ৯০ লক্ষ মানুষ চরম দারিদ্রের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। তাদের দৈনিক গড় রোজগার ২.১৫ ডলারের কম অর্থাৎ মাত্র ১৮১ টাকার মতো। এর পাশাপাশি ভেলোসিটি গ্লোবাল ২০২৪-এর রিপোর্টে জানা যায়, আমাদের দেশে জাতীয় মাসিক পারিশ্রমিক মাত্র ৩৭৬০ টাকা (৪৫ ডলার)। সে তুলনায় নাইজেরিয়ায় পারিশ্রমিকের অঙ্ক ৬৩৫১.২৫ টাকা (৭৬ ডলার) এবং পাকিস্তানে ৯৫২৬.৮৮ টাকা (১১৪ ডলার)। এই আর্থিক বেহাল দশাই দেশকে আজ খাদের কিনারে দাঁড় করিয়েছে।

Advertisement

ইপিএফের অধীনে মোট পেনশন প্রাপকের সংখ্যা সাড়ে ৭৮ লক্ষ। জানা গিয়েছে, ২০২৩-২৪ সালে ৩৬ লক্ষ ৭০ হাজারের বেশি পেনশনভোগী (বৃদ্ধ-বৃদ্ধা) ১ হাজার টাকারও কম পান, অর্থাৎ ৩০০-৪০০ টাকার মধ্যে তাঁদের পেনশনের টাকা ঘোরাফেরা করছে। আর ১ হাজার থেকে ২ হাজার টাকা পেনশন পেয়েছেন ২১ লক্ষ ১০ হাজার মানুষ। অথচ মৃত্যু পথযাত্রী পেনশনভোগীরা গত ৬ বছর ধরে রাস্তায় ধর্না-অনশনে বসেও আজ পর্যন্ত পেনশন বৃদ্ধির কোনও সুবিচার পাননি। এটাই কি সেরা ভারতের চেহারা? ওষুধের লাগামছাড়া দাম বৃদ্ধিতে মানুষ বিপর্যস্ত। গেরুয়া বিভাজনবাদীদের দাপটে সেকুলারিজম বা ধর্মনিরপেক্ষতা আজ আক্রান্ত। ২০২৪ সালে সারা দেশে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ হয়েছে মোট ৫৯টি, এর মধ্যে ৪৯টি ঘটেছে বিজেপি শাসিত রাজ্যে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মাঝেমাঝেই হুঙ্কার দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দুর্নীতি হটাবার গারান্টি দিলেও অসমে ২০২০ সালে পিএম কিষাণ প্রকল্পে ৫৬৭ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে, যা ক্যাগ রিপোর্টে উঠে এসেছে।

মোদ্দা কথা, চরম মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব, বেরোজগারি, গরিবি, আর্থিক দুর্নীতি ও বিদেশি ঋণের বোঝা ১৭৩ লক্ষ কোটি টাকা দেশকে আজ ঝাঁঝরা করে দিয়েছে। এটাই কি মোদীর বিকশিত ভারতের ছবি?

Advertisement