• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

বিক্ষোভে নাজেহাল ট্রাম্প

ট্রাম্প-বিরোধী বিক্ষোভ নিয়ে আতঙ্ক ছড়াতে ট্রাম্প-সমর্থকরা দক্ষিণপন্থীদের পুরানো কৌশল মেনে আমেরিকার চিরাচরিত ‘কমিউনিজম ভীতি’কে ব্যবহার করছে।

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

আমেরিকার বিভিন্ন শহর প্রতিবাদে উত্তাল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে। ‘নো কিংস ডে’ বলে ঘোষণা করে গোটা দেশে বিক্ষোভের ডাক দেওয়া হয়। মার্কিন মুলুকের প্রতিটি প্রধান শহরে এই প্রতিবাদী সমাবেশ ও মিছিলে ছিল উপচে পড়া ভিড়। ট্রাম্প প্রশাসনের অগণিতান্ত্রিক আচরণ, একের পর এক শহরে সোনা মোতায়েন, অভিবাসন বিরোধী আভিযান, ইউনিয়নের অধিকার ক্ নেওয়া, সংবিধান লঙ্ঘন প্রায় ২ লক্ষ সরকারি কর্মচারী ছাঁটাই এবং বাকস্বাধীনতার উপর দেদার আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে নামেন প্রায় ৫০ লক্ষ মানুষ। বিক্ষোভের নেতৃত্বে ছিল বিভিন্ন বামপন্থী দল, শ্রমিক সংগঠন এবং নাগরিক মঞ্চ।

‘আমেরিকায় কোনও রাজার হুকুম চলবে না’— একযোগে এই স্লোগান তোলেন বিক্ষোভকারীরা। তাঁদের অভিযোগ, সাধারণতন্ত্র ভেঙে দিয়ে ট্রাম্প আমেরিকায় ‘রাজা’ হতে চান। সমস্ত গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের উপর ট্রাম্প প্রশাসন যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। সেই ভাবনা থেকেই ‘নো কিংস ইন আমেরিকা’, স্লোগান তুলে প্রতিবাদের ডাক দেওয়া হয়েছিল।

Advertisement

গত কয়েক মাসে লস অ্যাঞ্জেলস ও শিকাগোর মতো বিভিন্ন শহরে ট্রাম্প প্রশাসন বৈআইনিভাবে সেনা পাঠায়। সেখানকার গণতান্ত্রিক আন্দোলন গায়ের জোরে দমন করার চেষ্টা করে। এই সমস্ত শহরে অ-শ্বেতাঙ্গ পাড়ায় অভিযান ও ধরপাকড় চালায় ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (আইসিই)। বিক্ষোভে এই সমস্ত শহরে জনস্রোত চোখে পড়েছে। ‘নো কিংস’ প্রতিবাদে ট্রেড ইউনিয়নগুলির ব্যাপক অংশগ্রহণ লক্ষ্য করা গিয়েছে। বিক্ষোভের প্রথম সারিতে শিক্ষকদের সংগঠন ‘আমেরিকান ফেডারেশন অব টিচার’ অংশ নেয়। বলা বাহুল্য, প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরই শিক্ষা দপ্তর তুলে দেওয়ার ঘোষণা করেন ট্রাম্প। তাঁর দাবি, এই দপ্তরকে ব্যবহার করে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে বামপন্থীরা নিজেদের আধিপত্য বাড়াচ্ছে। তারাই পাঠ্যসূচি ও পাঠক্রম নির্ধারণ করছে। দেশের সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সরকারি বরাদ্দ বাতিল করতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর ফলে শিক্ষকদের বেতন কমেছে।

Advertisement

এছাড়াও বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভে সরকারি কর্মচারীদের সংগঠনগুলির ব্যাপক উপস্থিতি চোখে পড়েছে। তরুণ সমাজ, মহিলা ও এলজিবিটিকিউ অংশের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রতিবাদে অংশ নিয়েছে। শুধু শহরেই নয়, গ্রামের দিকেও বেশ সাড়া মিলেছে। বিভিন্ন কৃষিপ্রধান অঞ্চলও প্রতিবাদে উত্তাল হয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের অর্থনৈতিক নীতির ধাক্কায় আমেরিকার কৃষিক্ষেত্র এক অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মুখোমুখি. উল্লেখ্য, ভোট প্রচারের সময় ট্রাম্প কৃষিক্ষেত্রে হাল ফেরানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কৃষক এবং আমেরিকার গ্রামীণ ভোটাররা ট্রাম্পের সবচেয়ে বড় সমর্থক ছিলেন। তবে তাঁর প্রশাসন কৃষকদের সরকারি উৎসাহ ভাতা বন্ধ করার ইঙ্গিত দিয়েছে। এই আশঙ্কায় তাঁরাও পথে নেমেছেন।

প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তাঁর প্রশাসন বিরোধী রাজনৈতিক দল, প্রাদেশিক সরকার, পুরসভা কিংবা স্বায়ত্বশাসিত সংস্থা দখল করতে ঝাঁপিয়ে পরেছে। ‘ভিনদেশি অনুপ্রবেশকারীদের’ বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর নাম করে বিভিন্ন শহরে সরকারি উর্দি গায়ে রীতিমতো গুণ্ডামি শুরু করেছে আইসিই। কয়েক দশক ধরে আমেরিকায় থাকা পরিযায়ী শ্রমিকদের রাতারাতি ‘দেশছাড়া’ করা শুরু হয়েছে। প্রশাসনিক পদে স্বজনপোষণ শুরু হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের নামে, বিরোধীদের পরিচালিত শহর কিংবহা প্রদেশে সেনা পাঠানো শুরু করেছে হোয়াইট হাউস।

অতিরিক্ত খরচ কমানোর নামে হাজার হাজার সরকারি কর্মচারী ছাঁটাই শুরু হয়েছে। উল্টোদিকে ট্রাম্পের বাসভবন সংস্কার ও সৌন্দর্যায়নের নামে কয়েক কোটি ডলার বরাদ্দ করা হয়েছে। এরই মধ্যে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রস্তাবিত বাজেট মার্কিন সেনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা সমর্থন পায়নি। তার ফলে দেশে তৈরি হয়েছে অচলাবস্থা। সার্বিক ‘শাটডাউন’ ঘোষণা হয়েছে। প্রায় ২০ লক্ষ সরকারি কর্মচারীর বেতন বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বিভিন্ন সামাজিক প্রকল্প বাতিল করা হয়েছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার জন্য তৈরি বিভিন্ন সরকারি বিভাগ ভেঙে দেওয়া হয়েছে।

ট্রাম্প-বিরোধী বিক্ষোভ নিয়ে আতঙ্ক ছড়াতে ট্রাম্প-সমর্থকরা দক্ষিণপন্থীদের পুরানো কৌশল মেনে আমেরিকার চিরাচরিত ‘কমিউনিজম ভীতি’কে ব্যবহার করছে। ট্রাম্প প্রশাসনের পরিবহণ সচিব সমস্ত বিক্ষোভকারীদের ‘বামপন্থী সন্ত্রাসবাদী’ বলে অভিযোগ করেছেন। ট্রাম্পের রিপাবলিকান পার্টির নেতাদের অভিযোগ, বিরোধীরা ‘শাট ডাউন’কে হাতিয়ার করে অরাজকতা তৈরি করছে। তবে মার্কিন সাধারণ নাগরিকরা অন্য কথা বলছেন। তাঁদের মতে, ট্রাম্প প্রশাসনের গা জোয়ারি, চূড়ান্ত অগণতান্ত্রিক মনোভাব এবং একবগ্গা আচরণে দেশের মানুষ ক্ষিপ্ত। ভোটের প্রচারে অর্থনৈতিক সঙ্কট মোকাবিলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তার কিছুই তিনি করেননি। এদিকে তাঁর ‘বৈপ্লবিক শুল্ক নীতি’র ঠেলায় আমেরিকায় সরবরাহ সঙ্কট দেখা দিয়েছে, এক ধাক্কায় বেড়ে গিয়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম। তাই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ছে শহরে ও গ্রামে।

Advertisement