টিপু বাদ !

ইএইচ কার একদা প্রশ্ন করেছিলেন- ইতিহাস কী? কর্ণাটকে অহেতুক নতুন করে ইতিহাস লেখার প্রচেষ্টায় সেই প্রশ্নটি আবার উঠে এসেছে।

Written by SNS Kolkata | November 5, 2019 4:23 pm

টিপু সুলতান (Photo: iStock)

ইএইচ কার একদা প্রশ্ন করেছিলেন- ইতিহাস কী? কর্ণাটকে অহেতুক নতুন করে ইতিহাস লেখার প্রচেষ্টায় সেই প্রশ্নটি আবার উঠে এসেছে। কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী বি এস ইয়েদুরাপ্পা যে বক্তব্য রেখেছেন তার সার কথা হল তাঁর সরকার ইতিহাসের পাঠ্যবই থেকে মহীশূরের প্রাক্তন সম্রাট টিপু সুলতানকে গৌরবান্বিত করে লেখা অধ্যায়গুলি বাদ দিয়ে দেবে। ইয়েদুরাপ্পা ইতিহাসের নিশ্চয়তার বিপ্রতীপে হাঁটছেন। ইতিহাসের তথ্য পবিত্র, তার ব্যাখ্যা ভিন্নরকম হতে পারে। সমাজবিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার ক্ষেত্রেও এটা প্রযােজ্য। দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, ইয়েপুরাপ্পা যে যুক্তি দেখিয়েছেন তা খুবই দুর্বল এবং একেবারেই সংকীর্ণ মনোভাবের প্রকাশ।

মুসলিম শাসক টিপু সম্পর্কে যে বক্তব্য রাখা তা একদমই অসার। ইয়েদুরাপ্পা বলেছেন, কর্ণাটক সরকার অষ্টাদশ শতাব্দীর ওই মুসলিম শাসকের কর্মকাণ্ডের বিরােধী। তাকে কোনওভাবেই স্বাধীনতা সংগ্রামী বলা যায় না’। এটা তাঁর ব্যক্তিগত মত যা একটা ঝাঁকুনি দিয়েছে। ক্ষমতায় ১০০ দিন পূর্ণ করার পর তিনি আরেকটু দায়িত্বশীল হতে পারতেন। ভারতের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়গুলি বিস্মৃত হয়ে বিজেপি মাঝে মাঝে তাদের বিশ্বাসের ধ্যানধারণার ভিত্তিতে ইতিহাসের পুনর্মূল্যায়ন করার চেষ্টা করে থাকে। কিন্তু প্রায় ইচ্ছাকৃতভাবে ইতিহাসকে বিকৃত করার কোনও অজুহাত থাকতে পারে না।

ইয়েদুরাপ্পা বলেছেন, ‘এই ধরনের বিষয়ের পাঠ্যসূচিতে স্থান পাওয়া উচিত নয়। আমরা যে এই ধরনের বিষয় অনুমােদন করব না তা ১০১ শতাংশ নিশ্চিত’। বিজেপি শাসিত একটি রাজ্যের সরকার-প্রধান এইভাবেই টিপু সম্পর্কে তাঁর দলের নিজস্ব ধ্যানধারণাকেই চাপিয়ে দিলেন। তিনি এমন একটি বিষয়ে তাঁর ও তাঁর দলের ধ্যানধারণাকে মান্যতা দিলেন যার ভার পেশাদার ঐতিহাসিকদের ওপরই ছেড়ে দেওয়া উচিত ছিল।

ইতিহাসের পুননির্মাণ ডান, বাম, মধ্যপন্থী কোনও ধরনের রাজনীতিকদের ওপর ছেড়ে দেওয়া যায় না। এটা শিক্ষার অগ্রতার ওপর নির্ভরশীল, এখানে মতাদর্শগত ধারণা চাপিয়ে দেওয়ার কোনও স্থান নেই। স্মরণ থাকতে পারে, রাজ্যের পূর্বর্তন বিজেপি সরকার যখন টিপুর জন্মবার্ষিকী পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তখন বিজেপি তার বিরােধিতা করেছিল। সম্প্রতি মাদিকেরির বিজেপি বিধায়ক আপ্পাচু রঞ্জন ‘ভুল তথ্য’ আছে- এই যুক্তি দেখিয়ে স্কুলের পাঠ্যবইগুলি থেকে টিপু সুলতান বিষয়ক অধ্যায়গুলি বাদ দেওয়ার দাবি জানান। প্রায় একই মনােভাব প্রকাশ করে কর্ণাটকের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষামন্ত্রীও আপ্পাচু রঞ্জনের দাবি খতিয়ে দেখার আহ্বান জানান। তিনি কর্ণাটক টেক্সটবুক সােসাইটির কাছে এই ব্যাপারে রিপাের্ট চান।

এসবের পর মুখ্যমন্ত্রী টিপুকে ছেঁটে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন। সব মিলিয়ে এটা ইতিহাসের বিকৃতি। কেন্দ্রে যখন কংগ্রেস ক্ষমতায় ছিল তখনও রাজ্যের কংগ্রেস সরকার এরকম কোনও কাজ করেনি। ইতিহাস নিয়ে পড়াশােনা ও শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব ও তার সময়কে মুছে ফেলার সরকারি সিদ্ধান্ত কোনওভাবেই সমনিযােগ্য নয়। ধর্মীয় গোঁড়ামির জন্য টিপু কোডাব ও খ্রিস্টানদের হত্যা করেছিলেন বলে বিজেপির যে বক্তব্য রয়েছে শিক্ষাবিদরা যদি তার সঙ্গে একমত হন তবুও বেছে বেছে ইতিহাসের মূল্যায়নের যৌক্তিকতা থাকতে পারে না। এ ব্যাপারে ঐতিহাসিকরাই শেষ কথা বলুন। ইয়েদুরাপ্পার মতাে ধর্মান্ধ লােকজনের বক্তব্য কখনও শেষ কথা হতে পারে না।