বিশ্বের দরবারে সন্ত্রাসবাদ নিয়ে ভারতের অবস্থান তুলে ধরতে আগামী ২৩ মে থেকে সাতটি সর্বদলীয় সংসদীয় প্রতিনিধি দল যাবে বিভিন্ন দেশে। বিভিন্ন দলের ৫১ জন রাজনৈতিক নেতা, যার মধ্যে বর্তমান সাংসদ ও প্রাক্তন মন্ত্রীরা আছেন, এবং ৮ জন প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত ২৫টি দেশে সফর করবেন। এই দেশগুলির মধ্যে রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য এবং অন্যান্য প্রভাবশালী রাষ্ট্র রয়েছে।
১০ দিনের এই আন্তর্জাতিক প্রচার অভিযানে ২৫টি দেশ তালিকায় রয়েছে। এর মধ্যে ১৫টি দেশ এখন রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য। ৫টি এমন দেশ রয়েছে যারা শীঘ্রই হয়তো রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য হতে চলেছে। এছাড়া রয়েছে আরও ৫টি প্রভাবশালী দেশ। এই তথ্য জানিয়েছেন বিদেশ সচিব বিক্রম মিস্রি। সাতটি বহুদলীয় প্রতিনিধি দলের সদস্যদের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনার পথে গেলেন বিদেশ সচিব। কেন্দ্রের একতরফা প্রতিনিধি ঘোষণার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে শিবসেনা (উদ্ধব গোষ্ঠী)-র উদ্ধব থ্যাকারে ও তৃণমূল কংগ্রেসের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সর্বদলীয় কমিটি বয়কটের ডাক দিয়েছিলেন। চাপে পড়ে সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু ওই দুই দলের নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলে শিবসেনা (উদ্ধব গোষ্ঠী)-র প্রিয়ঙ্কা চতুর্বেদী এবং তৃণমূল কংগ্রেসের অভিষেক ব্যানার্জির দলভূক্তি মেনে নেন। জেডি(ইউ) নেতা সঞ্জয় ঝা নেতৃত্ব দিচ্ছেন জাপান, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়া সফররত প্রতিনিধি দলের। এই দলেই থাকবেন তৃণমূলের অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
সংযুক্ত আরব আমীরশাহী ও আফ্রিকার কয়েকটি দেশে সফররত প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে থাকছেন শিবসেনা নেতা শ্রীকান্ত শিন্ডে। এই প্রতিনিধি দল ভারতে সন্ত্রাসবাদী ঘটনার সঙ্গে পাকিস্তানের যোগসূত্র তুলে ধরবেন। অপারেশন সিঁদুরে ভারতের প্রতিক্রিয়া ছিল কেবল পাকিস্তান ও পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে অবস্থিত সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটিগুলির বিরুদ্ধে, সেনা ঘাঁটি বা সাধারণ নাগরিকদের বিরুদ্ধে নয়। পাকিস্তান যখন ভারতীয় সেনাঘাঁটি এবং সাধারণ মানুষের ওপর হামলার চেষ্টা করে, তখনই ভারত পাল্টা জবাব দেয়।
এদিকে দেশের মানুষ সংসদকে কিছু না জানিয়ে বিদেশে এভাবে দল পাঠানো নিয়ে সরব হয়েছেন। অপারেশন সিঁদুর নিয়ে সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকার দাবি আরও জোরালো হচ্ছে। অপারেশন সিঁদুর নিয়ে বিদেশি সরকারগুলিকে অবহিত করা হলেও, ভারতীয় জনগণ ও সংসদ যে অন্ধকারে রয়েছে, এটা ‘অগ্রহণযোগ’। রাজনৈতিক দলগুলির কাছ থেকে এ বিষয়ে কোনও পরামর্শ যেমন গ্রহণ করা হয়নি, তেমনই বিরোধীদের আগাম অবহিত করা হয়নি।
পহেলগাম হামলার পর দেশ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। কিন্তু বিজেপি এই মুহূর্তকে বিভাজন গভীর করতে, রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে ও ভিন্নমত দমন করতে ব্যবহার করছে। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘর্ষ বিরতির শর্ত নিয়ে ক্রমবর্ধমান বিভ্রান্তি এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডানাল্ড ট্রাম্পের ভূমিকা নিয়ে সরকারের ব্যাখ্যা চাওয়া উচিত। কারণ ট্রাম্প দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে একটি ‘পারমাণবিক সংঘর্ষের’ ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, কেন্দ্রীয় সরকার এখনও পর্যন্ত ট্রাম্পের দাবিকে স্পষ্টভাবে খণ্ডন বা নিন্দা করেনি।
সরকারকে প্রথমে নিজের জনগণ ও প্রতিষ্ঠানগুলির প্রতি সম্মান জানানো উচিত, তারপর বিশ্বমঞ্চে পৌঁছনো উচিত। ভারতের প্রাপ্য হচ্ছে স্বচ্ছতা, ঐক্য ও মর্যাদা— আত্মম্ভরিতা, অস্বচ্ছতা ও দমন নয়।