দেশে পাঁচটি বিধানসভার ভোটে ধসে গেল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সুশাসনের রথের চাকা। বিধানসভার উপনির্বাচনে ইন্ডিয়া জোট ৪ টি আসন এবং বিজেপি একটি আসনে জয়ী হয়েছে। গত ১৯ জুন দেশের চার রাজ্যের ৫টি বিধানসভা আসনে ভোট নেওয়া হয়। ২৩ জুন ভোটের ফলাফল প্রকাশিত হলে দেখা গেল আপ ২টি আসনে কংগ্রেস ও তৃণমূল কংগ্রেস ১টি করে এবং বিজেপি ১টি আসন পেয়েছে।
বিধানসভার উপনির্বাচনে গুজরাতের ২টি আসনের মধ্যে আপ এবং বিজেপি যথাক্রমে ১টি করে আসন পেয়েছে। পাঞ্জাবের আসনটি ধরে রাখতে সমর্থ হয়েছে আপ। এছাড়া কেরলে কংগ্রেস এবং পশ্চিমবঙ্গের কালীগঞ্জ আসনটিতে জয়ী হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস।
কেরলের ওয়েনাড লোকসভা আসনের অন্তর্গত নিলাম্বুর আসনটি সিপিআইএম নেতৃত্বাধীন বাম গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট (এলডিএফ) সমর্থিত পিভি আনওয়ার বিধানসভার সদস্যপদ থেকে পদত্যাগের জেরে ওই আসনে উপনির্বাচন হয়। এবার নিলাম্বুর আসনে সিপিআইএম প্রার্থী ইউডিএফ জোটের কংগ্রেস প্রার্থীর কাছে পরাজিত হয়েছেন। কড়া প্রতিদ্বন্দ্বিতার পরিবেশে হওয়া এই উপনির্বাচনে জামাত-ই-ইসলামির মতো মৌলবাদী দল ও বিভিন্ন বাম-বিরোধী সংগঠন ইউডিএফ জোটের প্রার্থীকে সমর্থন জানায়।
বিধানসভার এই উপনির্বাচনে সবার নজরে ছিল গুজরাতের দু’টি আসন। তার মধ্যে জুনাগড় জেলার ভিসাভাদর আসনে আপ-এর প্রার্থী গোপাল ইটালিয়া জয়ী হয়েছেন। পাঞ্জাবের লুধিয়ানা পশ্চিম আসনটিতেও আপ-এর প্রার্থী সঞ্জীব আরোরা তাঁর নিকটতম কংগ্রেস প্রার্থী ভারতভূষণ আশুকে পরাজিত করেছেন। একরাশ নিরাশার মধ্যে শুধুই মোদীর নিজের রাজ্য গুজরাতের কাদি আসনটির জয় পদ্মশিবিরে কিছুটা স্বস্তি এনে দিয়েছে।
গুজরাতে আপের প্রাক্তন সভাপতি ইটালিয়া তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপির কিরিত প্যাটেলকে ভিসাভাদর বিধানসভার উপনির্বাচনে প্রায় সাড়ে সতেরো হাজার ভোটে পরাজিত করেছেন।
প্রসঙ্গত, ২০০২ সালে গুজরাতে সংখ্যালঘু নিধনের মধ্য দিয়ে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ করতে সফল হলেও, ২০০৭ সালের বিধানসভা ভোট থেকে বিজেপি ওই আসনটি একবারের জন্যও দখল করতে সমর্থ হয়নি। তাই আসনটি কবজা করতে মোদী-শাহেরা ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে তৎকালীন আপ বিধায়ককে দল ত্যাগ করিয়ে বিজেপিতে শামিল করেন। কিন্তু তবু শেষরক্ষা হলো না। রাজ্য প্রশাসনের সুবিধা নিয়েও হারানো আসন এবারেও পুনরুদ্ধারে ব্যর্থ হলো সঙ্ঘ পরিবার।
পাশাপাশি পাঞ্জাবের লুধিয়ানা পশ্চিম অসনে আপ-এর সঞ্জীব আরোরা নিকটতম কংগ্রেস প্রার্থী ভারতভূষণ আশুকে ১০ হাজার ৬৩৭ ভোটে পরাজিত করেছেন। উপনির্বাচনে মুখ্যমন্ত্রী ভগবত মানের ঘনিষ্ঠ আরোরা পেয়েছেন ৩৫,১৭৯টি ভোট। অন্যদিকে, আশুর প্রাপ্ত ভোটের পরিমাণ ছিল ২৪,৫৪২টি। গত জানুয়ারি মাসে এই আসনের আপ বিধায়ক গুরপ্রীত বাস্সী গোগীর আকস্মিক মৃত্যুতে গত ১৯ জুন দেশের বাকি চার আসনের সঙ্গে লুধিয়ানা পশ্চিম বিধানসভা আসনেও উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
দেশে বিধানসভার উপনির্বাচনে দলের জোড়া আসন জয়ের জন্য আপ প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়াল এবং পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবন্ত সিং মান জনসাধারণকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। বলা বাহুল্য, চারপাশে পরাজয়ের খবরের ভিড়ে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটকে সাময়িক স্বস্তি দিয়েছে গুজরাতের কাদি (এসসি) সংরক্ষিত আসনটির জয়। এই আসনে বিজেপি প্রার্থী রাজেন্দ্র চাভদা কংগ্রেসের রমেশ চাভদাকে ৩৯,৪৫২ ভোটে পরাজিত করেছেন। প্রত্যাখাত মোদী কি ভবিষ্যতের ললাটলিপি পড়তে পারছেন?