সংকটের সময় দেশকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে পারে আমাদের সংবিধান। দেশকে অখণ্ড রেখে দৃঢ়ভাবে অবিচল থাকার সম্পূর্ণ কৃতিত্ব আমাদের সংবিধানের। নানা জটিল পরিস্থিতির মধ্যেও দেশকে রক্ষা করে চলেছে এই সংবিধান। গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিকে মজবুত রাখতে সংবিধানই আমাদের রক্ষাকবচ। সংসদ নয়, সুপ্রিম কোর্ট বা প্রশাসন নয়, সবার উপরে হলো সংবিধান। সুপ্রিম কোর্ট সেই সংবিধানের নির্দেশ পালন করছে। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি বি আর গাভাই।
প্রসঙ্গত, বিজেপি শিবির সংবিধানের গুরুত্ব খাটো করায় শীর্ষ আদালতের পক্ষ থেকে বারে বারে তার গুরুত্বের কথা তুলে ধরা হয়েছে। সংবিধানকে উপেক্ষাই করে চলেছে শাসক দলের ছোট-বড় নেতারা।
Advertisement
যখন দেশের সংবিধান তৈরি হচ্ছে এবং তার চূড়ান্ত খসড়া আমাদের গণপরিষদে পেশ হলো, সেই সময় আলোচনায় এক দল বললেন, আমাদের সংবিধান অতিরিক্ত যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো নির্ভর এবং ঢিলেঢালা। আরেক দল বলল, আমাদের সংবিধানে ক্ষমতা খুবই কেন্দ্রীভূত করা হয়েছে। এতে বাবাসাহেব ভীমরাও আম্বেদকর তাঁর জবাবী ভাষণে বলেছিলেন, ‘সংবিধান একেবারে পুরো যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় ঢিলেঢালা নয়, আবার ক্ষমতা এখানে পুরো কেন্দ্রীভূত করা হয়নি। কিন্তু একটা বিষয় আমরা বলতে পারি, আমরা যে সংবিধান দিলাম, তা দেশকে যুদ্ধ এবং শান্তি উভয় সময়েই ঐক্যবদ্ধ এবং দৃঢ়তার মধ্যে অবিচল রাখবে।’
Advertisement
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে যে উন্নয়নের পথে চলছে তার কৃতিত্ব দিতে হবে আমাদের সংবিধানকে। আমরা প্রতিবেশী দেশগুলির দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারছি স্বাধীন হওয়ার পর ভারত একমাত্র ধারাবাহিকভাবে উন্নয়ন অভিমুখে যাত্রা করছে, এমনকি দেশের নানা সঙ্কট সময়েও ঐক্যবদ্ধ এবং দৃঢ়তার সঙ্গে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এর পুরো কৃতিত্ব হলো আমাদের সংবিধানের। তাই আজ দেশবাসীর দায়িত্ব হলো, দেশের পিছিয়ে পড়া প্রান্তিক মানুষের কাছে পৌঁছে যাওয়া এবং তাদের প্রতি সামাজিক ন্যায় সুনিশ্চিত করা।
দেশে গণতন্ত্রের প্রধান চারটি স্তম্ভের মধ্যে তিনটি হলো আইনসভা, প্রশাসন এবং বিচার ব্যবস্থা। গণতন্ত্রের স্বার্থে তাদের পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া উচিত। এদের সবার ঊর্ধ্বে রয়েছে আমাদের সংবিধান। সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদে সুপ্রিম কোর্টকে যে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, সেই ক্ষমতা অনুযায়ী তারা তার দায়িত্ব পালন করছে। সুপ্রিম কোর্ট এতে তার সীমারেখা পার করেনি। সংবিধানই সব। সুপ্রিম কোর্ট সংবিধানকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়। দেশকে আজ রক্ষা করছে এবং শক্তিশালী হিসাবে গড়ে তোলার কৃতিত্ব একমাত্র সংবিধানকেই দিতে হবে।
প্রসঙ্গত, তামিলনাড়ু রাজ্যপালের রাজ্য সরকারের বিল আটকে রাখা নিয়ে মামলায় সুপ্রিম কোর্ট তার রায়ে বিল তিন মাসের বেশি রাজ্যপাল বা রাষ্ট্রপতি আটকে রাখতে পারবে না বলেই জানিয়ে দেয়। এছাড়া তিন মাসের মধ্যে রাজ্য সরকারের বিল না ছাড়লে তাদের অনুমোদন ছাড়াই রাজ্য সরকার আইন প্রণয়ন করতে পারবে বলে জানায়। সুপ্রিম কোর্টের এই রায় বিল নিয়ে রাজ্যপাল ও রাষ্ট্রপতির ভূমিকা কার্যত অকেজো করে দেয়। এতেই ফুঁসে ওঠে বিজেপি। এর জবাবেই সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি বি আর গাভাই সংবিধানের গুরুত্বের কথা তুলে ধরেন।
অন্যদিকে ধর্মের ভিত্তিতে সৃষ্ট দেশ পাকিস্তান সংবিধানেও সরাসরি ধর্মের উল্লেখ করে গণতন্ত্রকে বিসর্জন দিয়ে সন্ত্রাসের লালন-পালন করছে। পাক প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বলেছেন, তাঁরা তিন দশক ধরে সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলিকে পাক মাটিতে মদত দিয়ে চলেছেন। বিপরীতে ভারত শান্তি চায়। তবে তা মূল্যবান জীবন দিয়ে নয়। ভারতে ২০ কোটিরও বেশি মুসলিম জনসংখ্যা। ভারত ‘বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য’ নীতিতে বিশ্বাসী। এই ঐক্যের কথা বলতে এবং সন্ত্রাসবাদের জনক পাকিস্তানের মুখোশ খুলতে ভারতের সর্বদলীয় সাংসদ প্রতিনিধি দল এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছেন। এখানেই সংবিধানই প্রচারের বেদ।
Advertisement



