• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

ভাষাহীন শোক

ভারতের প্রযুক্তি নগরী বেঙ্গালুরু। নিঃসন্দেহে একটি আধুনিক স্মার্ট সিটি। বিশ্বের প্রায় সব শীর্ষ তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার শাখা আছে এই শহরে। কর্পোরেট দুনিয়ার লোকজনরা নিত্য যাতায়াত করেন এই শহরে।

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

বেঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের বাইরে পদপিষ্ট হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১১ জন ক্রিকেটপ্রেমী। এঁরা সবাই হাজির হয়েছিলেন আইপিএল ট্রফিতে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর (আরসিপি) বিজয়োৎসবে। স্টেডিয়ামের ভিতরে অবশ্য বিজয়োৎসবে কোনও ছেদ পড়েনি। শোকের আবহে মুখ খুলেছেন প্রাক্তন ক্রিকেটাররাও। কবিল দেব বলেছেন, ‘উৎসবের চেয়েও মানুষের জীবনের দাম বেশি মূল্যবান। সেটা সবার মনে রাখা উচিত। শোক জানানোর সত্যি কোনও ভাষা নেই।’

এই ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে বিসিসিআই। এরপর থেকে আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর কীভাবে সেলিব্রেশন করা হবে, তা নিয়ে নির্দেশিকা জারির কথা ভাবা হচ্ছে। এবার থেকে ফ্র্যাঞ্চাইজিরা নিজেদের ইচ্ছেমতো বিজোৎসব পালন করতে পারবে না। ২০০৮ সালে শুরু হয় আইপিএল। বিজয়ী দলের সেলিব্রেশন ঘিরে এমন ঘটনা এর আগে কখনও ঘটেনি।

Advertisement

জীবনের অন্যতম অঙ্গ অবশ্যই আনন্দ বা বিনোদন। উৎসবে মেতে ওঠার মধ্যেও কোনও অস্বাভাবিকতা নেই। কিন্তু আনন্দের আদিশয্য যদি মাত্রা ছাড়িয়ে যায়, যদি সেটা অনিয়ন্ত্রিত হয়ে যায়, তাহলেই বিপদের আশঙ্কা প্রবল হয়ে পড়ে। ব্যক্তিগত পরিসর থেকে বেরিয়ে আনন্দ যখন সামাজিক পরিসরে ব্যপ্ত হয়ে পড়ে তখন তার নিয়ন্ত্রণ শিথিল হয়ে পড়লে পরিণতি ভয়ঙ্কর হতে পারে। এক্ষেত্রে সরকারি কর্তৃপক্ষ বা পুলিশের দায়িত্ব সর্বাধিক হয়ে পড়ে। পুলিশ যদি দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়, তখন জীবনঘাতী দুর্ঘটনা অনিবার্য হয়ে পড়ে। বেঙ্গালুলুর ঘটনার ক্ষেত্রে এসব কথা সত্য হয়ে দাঁড়ায়। খেলা জয়ের আনন্দে উদ্বেল মানুষ এতটাই সাধারণ জ্ঞানহীন হয়ে পড়েছিলেন এবং ক্রাউড ম্যানেজমেন্টে পুলিশ এতটাই ব্যর্থতার নজির রেখেছিল যে যার জেরে ১১টি নিরীহ প্রাণকে হারাতে হলো।

Advertisement

ক্রিকেট ব্যবসার বিশ্বসেরা প্রতিযোগিতা আইপিএল ট্রফি এবার প্রথম জয় করেছে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু বা আরসিবি। ১৮ বছরের ইতিহাসে একাধিকবার কোয়ার্টার ফাইনাল, সেমিফাইনাল বা ফাইনালেও খেলেছে। কিন্তু চ্যাম্পিয়ন অধরাই থেকে গিয়েছে। তাই দীর্ঘদিনের সুপ্ত বাসনা পূরণ হওয়ার মুহূর্তে সমর্থকরা আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়ে। আর সেই আনন্দের বহিঃপ্রকাশে এত জনসমাগম হয়ে যাবে, এটা অনেকেরই ভাবনার অতীত ছিল। এটা বুঝতে না পারাটাই বেঙ্গালুরু পুলিশের চূড়ান্ত ব্যর্থতা। ১১ জনের মৃত্যুর দায় তাই পুলিশ তথা প্রশাসনের ওপরই বর্তায়।

ভারতের প্রযুক্তি নগরী বেঙ্গালুরু। নিঃসন্দেহে একটি আধুনিক স্মার্ট সিটি। বিশ্বের প্রায় সব শীর্ষ তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার শাখা আছে এই শহরে। কর্পোরেট দুনিয়ার লোকজনরা নিত্য যাতায়াত করেন এই শহরে। এই রকম শহরের আইন-শৃঙ্খলা, নিরাপত্তা, ভিড় সামলানোর দক্ষতা অনেক বেশি পরিমাণ থাকার কথা এই শহরের পুলিশের। কিন্তু এক্ষেত্রেও ন্যূনতম যোগ্যতার মাপকাঠিও পেরোতে পারেনি শহরের পুলিশ প্রশাসন। ফাইনাল খেলার দিন জয়ের খবর পাওয়ার পর সমর্থকদের মধ্যে যে প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছেল, তাতেই বোঝা গিয়েছিল পরদিন বিজয় উৎসবে উচ্ছ্বাসের মাত্রা কেমন হতে পারে। দুর্ভাগ্যের হলেও সত্য পুলিশ এবং সরকার সেটা অনুমান করতে পারেনি। বড় জোর ১০-১২ হাজার জমায়েত হবে ধরে নিয়ে ৩৪ হাজার আসন বিশিষ্ট স্টেডিয়ামে উৎসব আয়োজনের ব্যবস্থা করে। সেই মতো হয় পুলিশি ব্যবস্থাও। কিন্তু বাস্তবে লোক জড়ো হয় তার বহুগুণ। এত মানুষের ভিড় সামলানোর কোনও ব্যবস্থা পুলিশের ছিল না। সম্ভাব্য ভিড়ের জন্য আগাম কোনও পরিকল্পনাও ছিল না। তাই স্টেডিয়ামের বাইরে লক্ষাধিক মানুষের হুড়োহুড়িতে মরতে হয় এতজন মানুষকে। আরও নিন্দনীয় হলো বাইরে এমন মর্মান্তিক অঘটন ঘটার পরও স্টেডিয়ামের ভিতরে উৎসব চালিয়ে যাওয়া। এমন অমানবিকতা কোনওভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। কর্ণাটক সরকার এবং বেঙ্গালুরু পুলিশকে গোটা ঘটনার দায় মাথা পেতে নিতে হবে এবং এর থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতের ইতিকর্তব্য নির্ধারণ করতে হবে। বেঙ্গালুরুর দুর্ঘটনা থেকেই শিক্ষা নিতে হবে।

Advertisement