• facebook
  • twitter
Wednesday, 30 July, 2025

সীমার মাঝে অসীম

শুভাংশুর এই প্রতিক্রিয়া বা অভিজ্ঞতা ভারতের মহাকাশ অভিযানের ইতিহাস যেন ফিরিয়ে আনলো আরেক যুগান্তকারী মুহূর্তের কথা।

একচল্লিশ বছর পরে ফের ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি। মহাকাশ গবেষণায় আবার ভারতের জয়দয়কার। ১৯৮৪ সালের ৩ এপ্রিল সোভিয়েত ইউনিয়নের সহযোগিতায় মহাকাশে পৌঁছেছিলেন প্রথম ভারতীয় নভশ্চর রাকেশ শর্মা ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হলো ২০২৫ সালের ২৫ জুন। এবার নাসা-র সহযোগিতায় মহাকাশে পাড়ি জমালেন শুভাংশু শুক্লা। ‘অ্যাক্সিয়ম-৪’ নামে এই অভিযানের নেতৃত্বে রয়েছেন মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার প্রাক্তন মহাকাশচারী তথা অ্যাক্সিয়ম স্পেসের হিউম্যান স্পেস ফ্লাইটের ডিরেক্টর রেগি হুইটসন। এছাড়াও রয়েছেন পোল্যান্ডের স্লায়োস উজনানস্কি উইসনিউস্কি এবং হাঙ্গেরির টিবর কাপু। আমেরিকার ফ্লোরিডায় নাসার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে ২৫ জুন ভারতীয় সময় দুপুর ১২টা ১ মিনিটে উড়ান দেয় শুভাংশুদের মহাকাশ যান ‘ফ্যালকন-৯’ রকেটের সাহায্যে ড্রাগনকে মহাকাশে পাঠানো হয়। পরদিন অর্থাৎ ২৫ জুন বিকেল ৪ টা ৩০ মিনিট নাগাদ আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে নির্ভুলভাবে ল্যান্ডিং করে ‘অ্যাক্সিয়ম-৪’। মহাকাশ চারীদের সাফল্যে উচ্ছ্বসিত ভারত তথা বিশ্ববাসী। শুভাংশুর এই সাফল্যের পিছনে রয়েছে দীর্ঘ লড়াই। তিনিই প্রথম ভারতীয় যিনি আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে পৌঁছলেন।

মহাকাশ থেকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে স্যাটেলাইট ফোনে কথা বললেন মহাকাশচারী শুভাংশু শুক্লা। তিনি জানালেন, ‘পৃথিবীকে বাইরে থেকে দেখলে একটাই গ্রহ মনে হয়। কোথাও কোনও সীমারেখা নেই। ভারতকে দেখে মনে হয় কত বিশাল, কত গর্বের। মনে হয় আমরা সবাই এক, এই পৃথিবী আমাদের ‘সবার ঘর।’

মহাকাশ থেকে পৃথিবীর প্রথম দৃশ্য দেখে শুভাংশুর প্রথম প্রতিক্রিয়া ছিল— ‘এখানে কোনও দেশ নেই, শুধু একটা প্রাণময় নীল গ্রহ। বহুত্বেও একতা ফুটে উঠেছে—এটা তো আমাদের পরিচয়।’

শুভাংশুর এই প্রতিক্রিয়া বা অভিজ্ঞতা ভারতের মহাকাশ অভিযানের ইতিহাস যেন ফিরিয়ে আনলো আরেক যুগান্তকারী মুহূর্তের কথা। ১৯৮৪ সালে, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী যখন প্রশ্ন করেছিলেন রাকেশ শর্মাকে, ‘উপর থেকে ভারতকে কেমন দেখাচ্ছে?’ ভারতের প্রথম মহাকাশচারী রাকেশ শর্মা জবাব দিয়েছিলেন— ‘সারে জাঁহাঁ সে অচ্ছা!’

আজ ৪০ বছর পর, শুভাংশুর মুখে মহাকাশের সীমাহীন আকাশে সীমারেখাহীন পৃথিবীর কথা শুনে আবারও উঠে এলো সেই অনুভব—জাতি, ধর্ম, ভাষা নয়, সবকিছুর ওপরে আছে মানবতার বন্ধন।

শুভাংশু জানিয়েছেন, ‘মহাকাশ থেকে পৃথিবীকে দেখলে বোঝা যায়, আমরা কতটা ক্ষুদ্র অথচ পরস্পরের উপর কতো নির্ভরশীল। আমাদের সীমান্তগুলো মানুষের তৈরি, প্রকৃতির নয়।’ রাজনৈতিক ভেদাভেদ বিভ্রান্ত পৃথিবীতে এই বার্তাই এখন সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক। বিভাজনের অস্ত্রে যিনি ধারাবাহিক শান দিয়ে চলেন বলে তাঁর নিন্দুকদের অভিযোগ, তেমন এক রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে আলাপচারিতায় শুভাংশু তাঁকে সেই ঐক্যের পাঠই পড়ালেন। শুভাংশুর সেই ক্লাসে দেশের প্রধান দেশসেবক শিখলেন, ‘একটাই পৃথিবী, একটাই মানবজাতি।’

অ্যাক্সিয়ম-৪ অভিযানের অংশ হিসাবে ১৪ দিনের জন্য মহাকাশ স্টেশনে গিয়েছেন ভারতীয় নভশ্চর শুভাংশু শুক্লা। স্পেস স্টেশনে পৌঁছনোর পথে শুভাংশু কিছুটা শারীরিক অস্বস্তির কথা বলছিলেন। মহাকাশে শুভাংশুর শারীরিক সমস্যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অনেকে। তবে ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির ফ্লাইট সার্জেন ডা. ব্রিজিট গদার বিষয়টি নিয়ে খুব একটা চিন্তিত নন। তিনি জানান, যুদ্ধ বিমান চালানোর জন্য দীর্ঘদিন প্রশিক্ষণ নিয়েছেন শুভাংশু। তাই মহাকাশে থাকাকালীন স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কোনও সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা নেই।
মহাকাশে থাকাকালীন নভশ্চর পিছু একজন ‘ফ্যামিলি’ চিকিৎসককে নিযুক্ত করা হয়। শুভাংশুর দায়িত্বে রয়েছেন বায়ুসেনার স্পেস মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. পূণ্যশ্লোক বিসওয়াল। ১৪ দিন তিনিই ভারতীয় মহাকাশচারীর স্বাস্থ্যের উপর নজর রাখছেন।

মহাকাশ হবেষণার ইতিহাসে ভারতীয় নাগরিক হিসাবে শুভাংশু শুক্লা রাকেশ শর্মার পর (ভারতীয় বংশোদ্ভূত কল্পনা চাওলা ও সুনীতা উইলিয়ামস) নাম উজ্জ্বল করে রাখলেন। ভারতের মহাকাশ গবেষণা আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল শুভাংশুর হাত ধরে।