• facebook
  • twitter
Saturday, 6 December, 2025

পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি

পেঁয়াজের আকাশছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধি রােধ করতে কোনও অত্যাবশ্যক পদক্ষেপকে একমাত্র ব্যবসায়ীরা ছাড়া দেশের আর সবাই অবশ্যই স্বাগত জানাবেন।

পেঁয়াজ (Photo: IANS)

পেঁয়াজের আকাশছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধি রােধ করতে কোনও অত্যাবশ্যক পদক্ষেপকে একমাত্র ব্যবসায়ীরা ছাড়া দেশের আর সবাই অবশ্যই স্বাগত জানাবেন। এই কথা বলা হলেও দুটি পদক্ষেপ যে অনেক দেরিতে নেওয়া হয়েছে সেই ধারণাও খণ্ডন করা কেন্দ্রের পক্ষে মুশকিল।

গত কয়েক মাস ধরে এই অত্যাবশ্যক পণ্যের ব্যবসায় কারচুপির ফলে পেঁয়াজের অভাব দেখা দিয়েছে এবং দাম ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গেছে। রবিবার যে সরকারি ঘােষণা হয়েছে তার তিনটি বিষয় আছে। একটি হল পেঁয়াজ রফতানি ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে, যা অবিলম্বে কার্যকর হয়েছে। এটা দেশের বাজারের ব্যাপারে নীতি-তাড়িত আত্মরক্ষামূলক নীতি নয়, কারণ সংকটের কারণে বাজারে পেঁয়াজের বিক্রিই কমে গেছে।

Advertisement

আসলে এটা নির্বাচন-তাড়িত সিদ্ধান্ত। দিনক্ষণটাও তাৎপর্যপূর্ণ হরিয়ানা ও মহারাষ্ট্রের বিধানসভা নির্বাচন শেষ না হয়ে যাওয়া পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা বলবত থাকবে। এই ঘােষণার পিছনে যে নির্বাচনী বিবেচনা কাজ করেছে তা মােটেই উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। অতীতে সর্বদা না হলেও কখনওসখনও পেঁয়াজের দাম শাসক দলের কপাল পুড়িয়েছে।

Advertisement

১৯৯৮ সালে পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধির কারণে দিল্লিতে বিজেপি সরকারের পরাজয় ঘটেছিল। বিদেশে পেঁয়াজ পাঠানাে বন্ধ হলে দেশের বাজারে পেঁয়াজের জোগান অবশ্যই বাড়বে। সম্প্রতি নিউইয়র্কে উচ্চগ্রামের কথাবার্তার মধ্যে অর্থনীতির সত্যটা চাপা পড়ে গিয়েছিল। রফতানি নিষিদ্ধ করার উদ্দেশ্যই হল খুচরাে বাজারে সরবরাহ বৃদ্ধি করা। কৃষক ও মজুতদাররা এখন মজুত খালি করার জন্য উঠেপড়ে লাগবেন, যার ফলে এই অত্যাবশ্যক পণ্যের দাম কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।

সরকারি ঘােষণাবলির আরেকটি বিষয় হল পেঁয়াজ মজুত রাখার একটা সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। আর তৃতীয় বিষয়টি হল মজুতদারদের বিরুদ্ধে অভিযান। আসল ব্যাপার হল আরেক অত্যাবশ্যক পণ্যে আলু নিয়ে যেমন তার মরশুমে একটা খেলা চলে তেমনি পেঁয়াজ কেলেঙ্কারিও একটা ঘটনা। এর সঙ্গে জড়িত কৃষক থেকে শুরু করে খুচরাে থেকে শুরু করে পাইকারি ব্যবসায়ীরা।

খাদ্য ও অসামরিক মন্ত্রক এসব অনিয়ম দেখেশুনেও না দেখার ভান করে। তবে ভারত সরকার শেষ পর্যন্ত একটা ফর্মুলা বার করেছে, যা অতি দ্রুত কার্যকর করার দায়িত্ব বর্তেছে রাজ্যগুলির ওপর। এতদিন অত্যাবশ্যক আইন অনুসারে রাজ্যগুলিকেই মজুতের পরিমাণ স্থির করার দায়িত্ব দিত কেন্দ্র, কিন্তু এবার কেন্দ্রীয় খাদ্য ও অসামরিক সরবরাহ দফতর নিজেরাই এই পরিমাণ স্থির করবে এবং রাজ্যগুলি তা কার্যকর করবে।

আশা করা যায় এই সিদ্ধান্তে রাজ্য পর্যায়ে মহাজনদের রমরমা কমবে। একটি সরকারি দল পেঁয়াজ উৎপাদনের কেন্দ্র নাসিক সফর করে একটি রিপাের্ট দেয়। এই রিপাের্টে পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি রােধে সরকারের দৃঢ় সংকল্প ব্যক্ত হয়েছে। তিক্ত পরিহাসের বিষয় হল পাইকারি ক্ষেত্রে পেঁয়াজের সরবরাহের কোনও অভাব নেই, কিন্তু খুচরাে বাজার বঞ্চিত থাকছে। পেঁয়াজ ব্যবসার এটাই নির্মম পরিহাস।

Advertisement