• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

সূর্যের রিভার্স সুইপ

ভারত-পাক ম্যাচের পক্ষে কেন্দ্রের যুক্তি ছিল, খেলা এবং অপারেশন সিঁদুর সম্পূর্ণ ভিন্ন দু’টি ইস্যু। খেলা হচ্ছে আবেগ। এর জন্য খেলোয়াড়রা কঠোর পরিশ্রম করেন।

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

ডাক উঠেছিল বয়কটের। সেইসব কথার কোনও গুরুত্ব না দিয়ে এশিয়া কাপে ভারত মুখোমুখি হলো পাকিস্তানের। পহেলগামে জঙ্গি হামলারা পরে ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’ হামলায় পাক জঙ্গি ঘাঁটিগুলি ধ্বংসের মতোই সাত উইকেটে জয় ছিনিয়ে নিল ভারত। অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদবের নেতৃত্বে এই জয় শুধু একটি খেলায় নয়, এই জয় দিল অনেক কিছুর জবাব। বিজয়ী দলের অধিনায়ক হিসাবে বক্তব্য রাখার সময়ে নিজের জন্মদিনে জয়, ছক্কায় উইনিং স্ট্রোক, টিমে স্পিনারদের সঠিক বছাই ইত্যাদি নানা টেকনিক্যাল কথা বললেন সূর্যকুমার। কিন্তু তারপরেই বোমা ফাটালেন। বোমা না বলে মিসাইল হানাও বলা যেতে পারে।

উইনিং স্ট্রোকের মতোই সাবলীল ভঙ্গিতে ভারতের ক্যাপ্টেন বললেন, ‘পহেলগামে জঙ্গি হানায় নিহতদের পরিবারের পাশে আমরা আছি। আমাদের জয় উৎসর্গ করতে চাই ভারতীয় সেনাদের। আশা করব, তাঁরা আমাদের প্রেরণা জুগিয়ে যাবেন। আমরাও মাঠে যখন সুযোগ পাব, তাঁদের মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টা করব।’
ভারত-পাক ম্যাচ মানেই শুধু টানটান উত্তেজনা নয়। এই ম্যাচে রাজনৈতিক রং নতুন কিছু নয়। ’৭১-এর যুদ্ধ, কার্গিল, ২৬-১১— অনেক কিছুর প্রভাব চিরাচরিত প্রতিবেশী দুই দেশের ম্যাচে। ম্যাচের বাইরের টেনশান দুবাইয়ে ভারত-পাকিস্তান খেলার অনেকটাই উত্তেজনা ধরে রেখেছিল। সেই উত্তেজনা বাড়তি উদ্যম পেয়েছিল টসের সময়। চিরাচরিত রীতি অনুযায়ী সূর্যকুমার যাদব হাত মেলালেন না পাক অধিনায়ক সলমন আগার সঙ্গে। এমনকি ম্যাচ জেতার পরও সূর্য হাত মেলাননি পাক ক্রিকেটারদের সঙ্গে। অথচ এশিয়া কাপ শুরুর ঠিক আগের ভিডিয়োটা রয়ে গিয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। ক্যাপ্টেন মিটের পরে সলমনের সঙ্গে সৌজন্যের হ্যান্ডশেক ছিল সেদিন। পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় টানা সমালোচনার জেরেই কি ম্যাচের দিন হাত না মেলানোর ঘটনা?

Advertisement

পহেলগাম ও অপারেশন সিঁদুর পরবর্তী সময়ে ভারত-পাক ম্যাচের ঠিক তিন-চারদিন আগে থাকতেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ন্যারেটিভে ছিল বয়কট বার্তা। অনেক ভাবনা-চিন্তা করে কেন্দ্রীয় সরকার বহুদেশীয় এশিয়া কাপে ভারত-পাক ম্যাচে সায় দিয়েছে। বিরোধীরা সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠল। শুরু হলো মন্তব্যের ঝড়। বিক্ষোভ মিছিল হলো মহারাষ্ট্রে, উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন জায়গায়। দাবি একই— কেন এই পরিস্থিতিতেও ভারত-পাক ম্যাচ হবে?

Advertisement

ইউপিএ সরকারের আমলে নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহরা বলতেন কীভাবে ক্রিকেট খেলা এবং সন্ত্রাস একই সঙ্গে চলতে পারে। এবার মোদী-শাহ যখন ক্ষমতায়, তখন বলা হচ্ছে, আমরা খেলা বন্ধ করতে পারি না। বিসিসিআই স্বশাসিত সংস্থা। বিরোধীরা বলতে লাগলো, অবৈধ বেটিং চলার জন্য মোদী সরকার ভারত-পাক হতে দিচ্ছে। বিজেপি আদতে অ্যান্টি-ন্যাশনাল পার্টি। পাকিস্তান ১২৬ জনকে নৃশংসভাবে খুন করার পরেও সেদেশের সঙ্গে খেলায় বিজেপি বিসিসিআই বা ভারতীয় ক্রিকেটাররা তো সরকারের নির্দেশ মেনেই চলে। সরকার বলে দিয়েছে, মাল্টি টিমের টুর্নামেন্টে পাকিস্তানের সঙ্গে ভারত খেলবে। শুধু পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কোনও দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলবে না।

ভারত-পাক ম্যাচের পক্ষে কেন্দ্রের যুক্তি ছিল, খেলা এবং অপারেশন সিঁদুর সম্পূর্ণ ভিন্ন দু’টি ইস্যু। খেলা হচ্ছে আবেগ। এর জন্য খেলোয়াড়রা কঠোর পরিশ্রম করেন। তাই এটাকে বাদ দেওয়া উচিত নয়।

দু’পক্ষেই আরও অনেক যুক্তি থাকতে পারে। তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় গড়পরতা ভারতীয়র রায় ছিল ম্যাচ না খেলার পক্ষে। করমর্দন না করে রিভার্স সুইপে এর জবাব দিলেন সূর্যকুমার। সত্যিই সাহসী অধিনায়ক, চ্যালেঞ্জ নিতেও জানেন, দিতেও জানেন।

Advertisement