গত কয়েকদিন ধরে ভারত ও ভারতীয়দের নিয়ে অনর্গল কটূক্তি করে চলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তাঁর প্রশাসনের একাধিক শীর্ষ কর্তা। তবে গত শনিবার ট্রাম্প মোদীকে ‘গ্রেট প্রাইম মিনিস্টার’ বলেছেন। ‘ডিয়ার ফ্রেন্ড ডোনাল্ড’-এর কাছ থেকে নিজের এই প্রশংসা শুনে প্রায় তৎক্ষণাৎ সোশাল মিডিয়ায় মাদী লিখে ফেললেন, আমেরিকার সঙ্গে ভারত তার ‘বিশেষ সম্পর্ক’ অক্ষুন্ন রাখবে।
যদিও ট্রাম্পের এই মন্তব্যের মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগেই মার্কিন অর্থসচিব হোয়ার্ড লুটনিক হুমকির সুরে মন্তব্য করেছিলেন, ‘মাস দুয়েকের মধ্যেই ভারত সুড়সুড় করে আমাদের সঙ্গে সমঝোতা করতে চলে আসবে। ওরা ক্ষমাও চাইবে। তারপর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের থেকে বাণিজ্য চুক্তির ভিক্ষা চাইবে। তারপর কী করা হবে, তা পুরোপুরি প্রেসিডেন্ট। মানুষ ওনাকেই ভোট দিয়েছেন।’ ট্রাম্প নিজেও এসসিও সম্মেলনে মোদীর সঙ্গে চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বাড়তে থাকা ঘনিষ্ঠতাকে ‘অশুভ শক্তিদের জোট’ বলে অভিশাপ দেন। তবে ট্রাম্পের মুখে প্রশংসা শুনেই এসব যেন মোদী ভুলে গেলেন।
Advertisement
আমেরিকার থেকে পরপর ধাক্কা খেয়েও মোদী যেন কিছুতেই হোয়াইট হাউসের মায়া ত্যাগ করতে পারছেন না। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মুখে নিজের প্রশংসা শুনেই ৫০ শতাংশ ‘শুল্ক শাস্তি’ ভুলে আহ্লাদে গলে গেলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। ট্রাম্পকে নিয়ে মোদীর মন্তব্য অনেককেই হতবাক করে দিয়েছে। কয়েক ঘণ্টা আগেও যে গোদী মিডিয়া ট্রাম্পের তীব্র সমালোচনা করছিল, তারাও মোদী-ট্রাম্পের দোস্তি নিয়ে প্রচার শুরু করে দেয়। ট্রাম্পের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়াচ্ছেন কেন মোদী, তা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন।
Advertisement
সাম্প্রতিক খবরগুলির ধারাবাহিকতার দিকে নজর দিলেই বিষয়টি আরও সন্দেহের উদ্রেক করে। গত সপ্তাহে বিদেশি তুলোর (বিশেষ করে আমেরিকার) আমদানিতে শুল্কে ১১ শতাংশ ছাড়ের মেয়াদ বাড়ায় কেন্দ্র। তারপরেই ভারত সরকারের কাছ থেকে ‘জিরো ট্যারিফ অফার’ পায়োর দাবি করেন ট্রাম্প। মার্কিন পণ্যে শুল্ক মকুবের আগে ভারতীয় উৎপাদক ও গ্রাহকদের সুবিধার্থে জিএসটি ছাড়ের ঘোষণা করে কেন্দ্র। এছাড়াও মার্কিন অর্থ সচিবের ‘ক্ষমা চাওয়ার নিদান’ এবং তার ঠিক পরের দিনই ট্রাম্পের সঙ্গে মোদীর এমন তোষামুদে সংলাপ বিনিময়ে অনেকেরই মনে সন্দেহ জেগেছে।
ক্যামেরার সামনে চিনের শি ও রাশিয়ার পুতিনের সঙ্গে হাত মিলিয়ে যতই বীরত্ব দেখান না কেন, আদতে আমেরিকার কাছে ফের আত্মসমর্পণ করলেন মোদী, ৫০ শতাংশ শুল্ক-শাস্তি পেয়েও মোদী সরকারের শিক্ষা হয়নি। যখন কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একটা বড় অংশ ভারতকে আমেরিকার উপর নির্ভরশীলতা কমানোর পরামর্শ দিচ্ছে, তখন ওয়াশিংটনের প্রতি দিল্লির এমন আচরণ সত্যি মনে প্রশ্ন জাগায়। বারে বারে ট্রাম্পকে নিয়ে মোদীর এই দুর্বলতার পিছনে আদানির বিরুদ্ধে মার্কিন আদালতে ওঠা মামলার প্রসঙ্গটিও জড়িয়ে আছে বলেই মনে হয়। আমেরিকার আদালতে আদানিকে বাঁচাতে গিয়ে দেশের স্বার্থই বিসর্জন দিচ্ছেন মোদী।
আগস্টের শুরুতে ৫০ শতাংশ শুল্ক চাপিয়ে প্রকাশ্যেই ভারতকে নিয়ে ট্রাম্প ও তাঁর অনুগামীরা নানা বিদ্রুপ করে গিয়েছেন। এহেন মন্তব্যে স্পষ্ট, আমেরিকা আসলে ভারতকে তার ‘বন্ধু’ বলে মনে করে না, মনে করে ‘বশংবদ’ একটি রাষ্ট্র হিসাবে। শুধু শুল্কের প্রসঙ্গেই নয়, অপারেশন সিঁদুর পরবর্তী ভারত-পাক সংঘাতে তিনিই মধ্যস্থতা করেছেন বলে অন্ততপক্ষে ৩০ বার দাবি করেছেন ট্রাম্প। ‘হাজার বছরের পুরানো’ কাশ্মীর সমস্যাও তিনি মিটিয়ে দেবেন বলে দাবি করেন। বলা বাহুল্য, ট্রাম্পের এমন নানা মন্তব্য ভারতের সার্বভৌমত্বের প্রতি সরাসরি আঘাতের সমান। তবে প্রতিবাদ জানানো দূরের কথা, মোদী একেবারে নিশ্চুপ। তবে হঠাৎ ট্রাম্পের মুখে নিজের প্রশংসা শুনেই ট্রাম্পকে খুশি করতে পালটা তোষামুদে মন্তব্য করেছেন মোদী।
Advertisement



